সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। নিরাপত্তার স্বার্থে তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের অবিলম্বে কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। গোটা পরিস্থিতিতে কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পর্যটক থেকে আম কাশ্মীরবাসী। বিমানের টিকিন না মেলায় শনিবার পর্যন্ত ব্যাপক ভিড় দেখা যায় শ্রীগনর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে।সূত্রের খবর, গতকাল রাত থেকে ৬ হাজারের বেশি পর্যটককে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শ্রীনগরের বাইরে। যার মধ্যে প্রায় ৩৮৭ জনকে দফায় দফায় এয়ারলিফট করে নিয়ে গেছে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ারক্রাফ্ট।
শ্রীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তালিকা অনুযায়ী, গতকাল থেকে বিমান পথে উপত্যকা ছেড়েছেন ৬,২০০ জনের বেশি যাত্রী। অন্তত ৫,৮২৯ জনকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে ৩২ টিরও বেশি এয়ারলাইন্স। বাকিদের মধ্যে ৩৮৭ জনকে এয়ারলিফট দিয়েছে বায়ুসেনার বিমান। জম্মু, পাঠানকোট ও হিন্দনের নানা জায়গা থেকে এয়ারক্রাফ্টে তোলা হয়েছে তাদের।
গত শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর সরকারের এক নির্দেশিকায় বলা হয়, সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, জঙ্গিরা ফের ভূস্বর্গে হামলা চালাতে পারে। বিশেষত অমরনাথকে নিশানা করতে পারে তারা। সুরক্ষার জন্যই পুণ্যার্থীদের দ্রুত উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পরই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় পর্যটকদের মধ্যে। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, নির্দেশিকা জারির আগে জম্মু-কাশ্মীরে মোট ১১,৩০১ জন পর্যটক ছিলেন। জঙ্গি নাশকতার খবর শোনার পরই ভিড়টা পাতলা হতে শুরু করে। তবে হুড়োহুড়িতে বিমানের টিকিট বা বাসের রিজার্ভেশন না পেয়ে আটকে পড়ে বহু মানুষ। এয়ারলাইন্সের টিকি যারা পায়নি, তাদেরই বায়ুসেনার বিমানে উড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
গত ২৫ জুলাই কাশ্মীরে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করার পর থেকেই উদ্বেগটা বাড়ছিল রাজ্যবাসীর মধ্যে। জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল তা হলে কি এ বার ৩৫এ এবং ৩৭০ ধারা নিয়ে কোনও বড়সড় পদক্ষেপ করতে চলেছে কেন্দ্র। সেই উদ্বেগটা এক ধাক্কায় আরও বেড়ে যায় কাশ্মীরে স্থলসেনা ও বায়ুসেনাকে সতর্কবার্তা পাঠানোর পর। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দল। সেই দলে ছিলেন মেহবুবা মুফতি, শাহ ফয়জল, এবং ইমরান আনসারি-র মতো বিভিন্ন দলের নেতারা। রাজ্যপাল জানান, রাজ্যের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণেই এই বাড়তি সতর্কতা। গুজবে কান না দিয়ে শান্তি বজায় রাখার কথাও বলেন তিনি।
১৫ অগস্ট পর্যন্ত অমরনাথ যাত্রা চলার কথা ছিল। সেই মতো বিমানের টিকিট বুক করেছিলেন পর্যটকরা। কিন্তু মাঝপথে তীর্থযাত্রা ভেস্তে যাওয়ায় টিকিট বাতিল করার হার বেড়েছে। ইতিমধ্যেই দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটক, তীর্থযাত্রী, পড়ুয়া এবং শ্রমিকরা কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেছেন। দেশের কেউ এখনও উপত্যকায় রয়ে গিয়ে থাকলে, তাঁদের উদ্দেশে জার্মান বিদেশ মন্ত্রকের বার্তা, এখনও কাশ্মীরে রয়েছেন যাঁরা, বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকা এবং অমরনাথ যাত্রাপথে যাঁরা রয়েছেন, অবিলম্বে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিন।