পাঞ্জাবে আজকের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কিভাবে দেশ বিরোধী শক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিদিন। আজকের ঘটনা সেই ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ। কয়েকটা ঘটনার দিকে চোখ রাখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় –
১> পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী কেন সেই সময় ফোন ধরলেননা?
২> ভাতিন্দা বিমানবন্দর থেকে ঘটনাস্থল প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার দূরত্ব। তাহলে পাঞ্জাব সরকার কি বলতে চায় এই পৌনে দুই ঘণ্টায় প্রধানমন্ত্রীর গতিবিধির কোন খবরই তাদের কাছে ছিলনা?
৩> এসপিজি এক্ট অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের রোড ক্লিয়ারেন্স দেয় স্থানীয় রাজ্য সরকার। এক্ষেত্রেও পাঞ্জাবের ডিজিপি রোড ক্লিয়ারেন্স দিয়েছিলেন। তিনি কি জানতেননা পরিস্থিতি?
৪> পাঞ্জাব সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর গতিবিধির তথ্য ছিলেননা। প্রথম কথা আজকের সমাবেশ কোন রাজনৈতিক সমাবেশ ছিলনা। সরকারী অনুষ্ঠান ছিল। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রীও সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন।
সেক্ষেত্রে প্রটোকল অনুযায়ী পাঞ্জাবের কোন একজন মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা এই কনভয়ের সাথেই ছিলেন। তারাও কি পাঞ্জাব সরকারকে জানাননি প্রধানমন্ত্রীর গতিবিধি? অতীতে আমি দেখেছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন সরকারী অনুষ্ঠানে কোলকাতায় এসেছেন সেখানে ববি হাকিম কনভয়ের সাথে থেকেছেন পুরো সময়। কারন এটাই প্রটোকল। এক্ষেত্রে পাঞ্জাব সরকারের এই প্রতিনিধিদের ভূমিকা কেন পাঞ্জাব সরকার পরিষ্কার করতে পারছেনা।
৫> ঠিক ফ্লাইওভারের মাঝেই কেন প্রধানমন্ত্রীর কনভয় আটকানো হোল যেখানে ২০ মিনিট কনভয় এক জায়গায় স্থির রইল। যেখানে অন্য কোন দিকে যাওয়ার জায়গা নেই? প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের রুট যেখানে অতি গোপনীয় বিষয় সেখানে বিক্ষোভকারীরা কিভাবে ঠিক ঐ ফ্লাইওভারেই পৌছে গেলেন? পাঞ্জাব পুলিশ এক্ষেত্রে কি করছিল?
৬> চরনজিত সিং চন্নী বলেছেন “কৃষকরা” ওখানে বিক্ষোভ দেখাবে তা আগে থেকেই ঠিক ছিল। তিনি চেষ্টা করেছিলেন কৃষকদের বোঝানোর। কিভাবে “কৃষকদের” পক্ষে এই পরিকল্পনা আগে থেকেই করা সম্ভব? প্রধানমন্ত্রীর তো হেলিকপ্টারে যাওয়ার কথা ছিল।
৭> যদি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর উপরের বক্তব্যটি সত্য হয় তাহলে তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর গতিবিধির কোন খবর ছিলনা এই কথাটি মিথ্যা হয়। সংবিধানের শপথ নেওয়া একজন মুখ্যমন্ত্রী সেক্ষেত্রে নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যাচার করছেন।
৮> কেন এই কুড়ি মিনিট সময়কালে পাঞ্জাব পুলিশের ডিজিপি এসপিজির সাথে কোন যোগযোগ করলেননা?
৯> কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের রুটে অন্য গাড়ি ঢুকে পরে? পাঞ্জাব পুলিশ সেক্ষেত্রে কি করছিল?
১০> প্রটোকল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের রুট প্ল্যান, রাস্তার ক্লিয়ারেন্স সমস্ত কিছুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পাঞ্জাব পুলিশের। আবহাওয়া খারাপ হটাত করে হয়নি। সেক্ষেত্রে তাদের প্ল্যান বি কি ছিল, যখন হেলিকপ্টারে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরে? নাকি তাদের কোন প্ল্যান বি ছিলইনা?
আপাতত এই দশটা প্রশ্ন উঠে আসছে আজকের ঘটনা প্রসঙ্গে। দুঃখজনক ভাবে পাঞ্জাব সরকার একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে সক্ষম নয় এযাবৎ। তারা খালি একজন এসএসপিকে সাসপেন্ড করে দায় সাড়তে চাইছেন। কেন পাঞ্জাবের ডিজিপিকে সাসপেন্ড করা হবেনা যিনি কনভয়কে রোড ক্লিয়ারেন্স দিয়েছিলেন?
এবার আসি কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএমের প্রসঙ্গে। এই তিন দলেরই মতে এটি একটি অত্যন্ত সাধারন ঘটনা এবং এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন বিপদের আশঙ্কা ছিলনা।
এদের একটু নিজেদের নেতানেত্রীদের ক্ষেত্রে এনাদের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।
গান্ধী পরিবারের এসপিজি কভার সরিয়ে দেওয়ার পরে কংগ্রেস নেতাদের পার্লামেন্টে নাচন কোঁদন নিশ্চয় সবার মনে আছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ফ্লাইট একবার আবহওয়ার কারনে ৪৫ মিনিট ল্যান্ড করতে পারেনি। মনে আছে নিশ্চয়ই মমতা ব্যানার্জী ঠিক কি কি অভিযোগ করেছিলেন সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে?
এবার আসি সিপিএমের কথায়। লালগড়ের আন্দোলন কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল মনে আছে? তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের কনভয়ে আইইডি বিস্ফোরনের তদন্তে নেমে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কিরকম নির্বিচারে নিরীহ গ্রামবাসীদের উপরে অত্যাচার করেছিল?
তাহলে আজকের ঘটনা যদি এতো সামান্যই হয় সেদিনের এইসব ঘটনায় কেন এনারা এতো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন?
আসলে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা চলে যাওয়ার পরে পাকিস্তানের আইএসআই এখন চীনের সহযোগীতায় K2 প্ল্যান অর্থাৎ কাশ্মীর এবং খালিস্তান প্ল্যান আবার চালু করতে চাইছে। সেই পরিকল্পনার মূল মুখ হোল পাঞ্জাবের কংগ্রেস এবং আপ। এই দুটো দলই এখন খালিস্তানিদের হাতের পুতুল হয়ে গেছে। এই প্রোগ্রামেরই আরেকটি অংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ। এই নিয়ে পরে বিশদে লেখা যাবে। কিন্তু আজ এটুকু পরিষ্কার হয়ে গেছে আজকের ঘটনা এই ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ। সেই কারনেই পাঞ্জাব পুলিশ প্রথমে এসপিজিকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় ফোন ধরেননি। ভুলে যাবেননা ঘটনাস্থল থেকে পাকিস্তান সীমান্ত ৫০ কিলোমিটারও নয়।
কথা হোল যারা ভাবছেন পশ্চিমবাংলার ভোটে হার আর কৃষি বিলের প্রত্যাহারের পরে তারা নরেন্দ্র মোদীকে বাগে পেয়েছেন, তারা একটু খেয়াল করবেন, নরেন্দ্র মোদী ফিরে আসার আগে আজ কি বলে এসেছেন। তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছেন তিনি বেচে ফিরেছেন তাই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। অর্থাৎ তিনি এখনও বেঁচেই আছেন। তাই চরনজিত সিং চন্নী যদি মনে করেন যে আইএসআই-এর সহায়তায় তারা পাঞ্জাবকে খালিস্তানি, ড্রাগ পাচারকারী আর আইএসআই-এর অস্ত্র পাচারকারীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করবেন তা এতো সহজ হবেনা।
এরকম বিরোধিতা আর চক্রান্ত নরেন্দ্র দামোদার দাস মোদী সেই ২০০২ থেকে সহ্য করে আসছেন। এতো কিছুর পরেও তাকে তাঁর কর্তব্য থেকে কেউ বিচলিত করতে পারেনি। আরও অনেক বড় বড় চক্রান্ত সোনিয়া কংগ্রেস এর আগে করেছে।
আমার প্রশ্ন এই যে যারা আজ উদ্বাহু হয়ে উঠেছেন, কাল ভগবান না করুন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গফিলতির কারনে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সেই ঘটনার যে প্রতিক্রিয়া হবে তা তারা সামলাতে পারবেন তো?
উদ্বাহু হওয়ার আগে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া দুইই ভেবেই উদ্বাহু হওয়া ভালো কিন্তু। গুরুজনেরা অনেক আগেই বলেছেন, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিওনা।
লেখনী – দীপ্তস্য যশ