উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কলকাতার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। জানানো হয়েছে, কলকাতার সংক্রমণের হার ১২.৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘দ্রুত গতিতে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। তাই আমাদের সতর্ক থাকার সঙ্গে কোভি়ডবিধি মানতে হবে।’’ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল জানাচ্ছে, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে বেশি মানুষ কোভিড উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন। একধাক্কায় বেড়েছে সংক্রমণের হারও।
পিয়ারলেস হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্করনারায়ণ চৌধুরীর মতে, ‘‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও দ্রুত গতিতে বাড়ছে এ বারের করোনা আক্রান্তরে সংখ্যা। গত বারে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যেত। এখন তো দেখছি প্রতি দু’দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে!’’ এর জন্য চিকিৎসকরা মাস্ক পরার প্রতি নাগরিকদের অনিহাকেই দায়ী করছেন। বিদেশযাত্রা ছাড়াও ওমিক্রন আক্রান্তের হদিশ মেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ওমিক্রন ছড়িয়েছে কি না, তা দেখার জন্য জিন পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভাস্করনারায়ণ।
দক্ষিণ কলকাতা এবং সল্টলেক দুই জায়গাতেই শাখা থাকা এক হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১০০ জনের কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহেও এই হাসপাতালের সংক্রমণের হার ছিল ২.৩ শতাংশ মতো। চলতি সপ্তাহে সেটা ২০ শতাংশের বেশি বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত এই হাসপাতালে ২৫০ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ৪০ জন করোনা আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। আর্থাৎ ১৬ শতাংশ নমুনাই পজিটিভ।
বুধবার এই হাসপাতালে পরীক্ষা হওয়া কোভিডের নমুনার ২৬ শতাংশ পজিটিভ হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর বুধবার ২১২ জনের কোভি়ড পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৫৬ জন কোভিড আক্রান্ত।
শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত এক বেসরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। বাইপাসের কাছে অবস্থিত এই হাসপাতালে ২৫ ডিসেম্বর পরীক্ষা হওয়া নমুনার ২ শতাংশ মতো পজিটিভ হয়েছিল। ২৬ ডিসেম্বরে ছিল ৪ শতাংশ। সপ্তাহ ঘোরার আগে বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা হওয়া ৪৪টি নমুনার মধ্যে ২২টি নমুনায় কোভিড সংক্রমণ মিলেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার সারাদিনে এই হাসপাতালে মোট নমুনার ৩৩ শতাংশ পজিটিভ হয়েছে।
সোমবার হাসপাতালটিতে ৯ শতাংশ, মঙ্গলবার ১৭ শতাংশ এবং বুধবার ১৮ শতাংশ নমুনা পজিটিভ হয়।
দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানেও প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত সপ্তাহের প্রথম দিকে সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে সেই হার ৪৬ শতাংশের বেশি বলে সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার ৫৬টি নমুনার মধ্যে ২৬টি নমুনায় কোভিড মিলেছে। বুধবার সংক্রমণের হার ছিল ৪২ শতাংশ মতো। ওই দিন ৫৯টির মধ্যে ২৫টি নমুনায় কোভিড মিলেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
যদিও চিকৎসকদের মতে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা হওয়া নমুনা থেকে প্রাপ্ত সংক্রমণের হারকে কলকাতার সার্বিক চিত্র হিসাবে ধরা যাবে না। কারণ হাসপাতালে বেশিরভাগ মানুষই কোভিড উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসেন। তাই এখানে পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
সুরক্ষা ডায়গনিস্টিকসের ডিরেক্টর সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, হাসপাতালে বেশিরভাগই অসুস্থ অবস্থায় আসেন। অন্য দিকে, বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে তুলনামূলক কম অসুস্থেরাও পরীক্ষা করান। অনেক সময় উপসর্গ না থাকলেও বিদেশযাত্রা বা কোভিড পরীক্ষার রিপোর্টের প্রয়োজনয়ীতা থেকেও পরীক্ষা করান। তিনি বলেন,‘‘সুরক্ষায় যেহেতু অনেকেই ভ্রমণ বা বিদেশযাত্রার জন্য পরীক্ষা করাতে আসেন, তাই তাঁদের পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকে।’’ তাতেও এই পরীক্ষাকেন্দ্রের সংক্রমণের হার গত সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়,‘‘গত সপ্তাহে সুরক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্রে গড়ে ৪ শতাংশ নমুনা পজিটিভ হত। চলতি সপ্তাহে সেটা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।’’