তিন মাসেই মোহভঙ্গ তৃণমূলে, ধর্মের নামে বিভেদের অভিযোগ তুলে তৃণমূল ছাড়লেন প্রাক্তন বিধায়ক সহ পাঁচজন।

পশ্চিমবঙ্গের পর তৃণমূলের টার্গেট এখন ২০২৪। তবে দিল্লি পৌঁছনোর আগে ভিনরাজ্যে নিজেদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই পরপর দুবার গোয়া সফর সেরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে লিয়েন্ডার পেজ, নাফিসা আলির মতো ব্যক্তিত্বরা সে রাজ্যে তৃণমূলের হাত ধরেছেন। দলে যোগ দিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা লুইজিনহো ফেলেইরিও। তবে এরই মধ্যে ঘাসফুল শিবিরের বড় ধাক্কা। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে দল ছাড়লেন প্রাক্তন বিধায়ক সহ মোট পাঁচজন।

তৃণমূল ছাড়লেন গোয়ার প্রাক্তন বিধায়ক লাভু মামলেদার। তাঁর দাবি, গোয়াকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তাঁর সঙ্গে তৃণমূল ছাড়লেন আরও চার জন। মহারাষ্ট্রওয়াড়ি গোমন্তক পার্টির বিধায়ক ছিলেন এই মামলেদার। তিন মাস আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে এ দিন দল ছেড়েছেন রাম মান্দ্রেকর, কিশোর পারওয়ার, কোমল পারওয়ার ও সুজয় মালিক।

একদিকে যখন তৃণমূল গোয়ায় সংগঠন মজবুত করতে চাইছে, তারই মধ্যে এই দলত্যাগ বড়সড় ধাক্কা ঘাসফুল শিবিরের কাছে। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ওই প্রাক্তন বিধায়ক। তাঁর দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতাকে দেওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘গোয়াবাসীর মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। এমজিপির দিকে হিন্দু ভোট ও তৃণমূল কংগ্রেসের গিকে খ্রিস্টান ভোট টানার চেষ্টা চলছে। তৃণমূল একটি সাম্প্রদায়িক দল।’

বিধায়কের আরও দাবি, যে দল গোয়ার মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে, সেই দলে থাকতে চান না তাঁরা। তিনি চান না কোনও দল গোয়ার নিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানুক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিওর সঙ্গে যে ১০ জন একেবারে শুরুতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে মামলেদার অন্যতম।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মামলেদার বলেন, ‘যে ভাবে তৃণমূল হিন্দু ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে, তাতে আমার মনে হয়েছে এটা কোনও নিরপেক্ষ দল নয়। এটা একটা সাম্প্রদায়িক দল। গোয়ার হিন্দু আর ক্যাথলিকদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে।’ তিনি চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘গোয়ার ভালো হবে, এই আশা নিয়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম তৃণমূল গোয়াবাসীকে বোঝেই না।’

প্রথমে গোয়ায় বিজেপির প্রাক্তন জোটসঙ্গী গোয়া ফরওযার্ড পার্টির সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিল তৃণমূল। তবে তাতে সফল হয়নি দল। গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির প্রধান বিজয় সরদেশাই হাত মিলিয়েছিলেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গেই। তাই পরে গোয়ার প্রথম শাসকদল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সঙ্গে হাত মেলায় তৃণমূল। প্রাকনির্বাচনী জোটের ঘোষণা করে গোয়া তৃণমূল।

২০১৭-র বিধানসভা ভোটে গোয়ায় তিনটি আসনে জয়ী হয়েছিল এমজিপি। এর পর তারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে শামিল হয়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপি-র সঙ্গে এমজিপির সম্পর্ক দুর্বল হতে শুরু করে। সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে এমজিপি।

দুই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং লুইজিনহো ফেলেইরোর উপস্থিতিতে সম্প্রতি জোটের ঘোষণা করেন মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সভাপতি দীপক ধবলীকর। তিনি জানান, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে গোয়ার ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। এবার সেই দলেরই পাঁচ সদস্য তৃণমূল ছাড়ার ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে ফেলবে বাংলার শাসক দলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.