১. বাঙালি মহিলা কৃষিবিদ খনা
যে দেশের অর্থনীতি কৃষিকাজের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে দেশের লোকসংস্কৃতিতে কৃষি ও কৃষিজগতের চিত্র যে খুঁজে পাওয়া যাবে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনের পূর্বে ভারত ও বাংলার কৃষক আবহমান কাল ধরে লোকায়ত ধারার মধ্যে কৃষি উন্নতির চেষ্টা করেছে। তাদের লোকজ্ঞান কৃষি উৎপাদনের নানান ধারায় পরিপুষ্ট। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে প্রচলিত ‘খনার বচন’ এমনই মণিমাণিক্যে পরিপূর্ণ কৃষি-লোকজ্ঞান। যতদূর জানা যায়, খনা একজন বাঙালি মহিলা জ্যোতিষী; কিংবদন্তি অনুসারে প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহমিহিরের সমসাময়িক। ড. নীহাররঞ্জন রায় (১৯৫০) অবশ্য লিখেছেন, “ডাক ও খনার নামে যে বচনগুলি বাংলাদেশে আজও প্রচলিত তাহাও বোধহয় প্রাক্ তুর্কী আমলের প্রবাদ সংগ্রহ, কালে কালে তাহাদের ভাষা বদলাইয়া গিয়াছে মাত্র।” সেদিক থেকে বিচার করলে দাঁড়ায় খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে খনার বচনগুলি রচিত অথবা প্রচারিত হয়ে থাকবে। পর্যবেক্ষণ-ভিত্তিক ছিল এই লোকজ্ঞান, কিন্তু মানুষের অন্তরাত্মায় তা আজ প্রোথিত হয়ে আছে, টেকসই এর নোঙর।
খনার বচনকে কৃষি-বেদবাক্য বলে স্বীকার করে নিয়েছে লোকায়ত সমাজ। খনা নিজেই বলছেন, “বেদের কথা না হয় আন/তুলা বিনা না পাকে ধান।” খনা যে বরাহের সমসাময়িক, তাও প্রবাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, “বলে গেছে বরাহের পো/দশটি মাসে বেগুন রো।/চৈত্র-বৈশাখ দিবি বাদ/ইথে নাই কোন বিবাদ।” তবে খনার বচনে বহু পাঠান্তর পাওয়া গেছে। পরবর্তীকালে অনেক প্রবাদ খনার নামে আরোপিত হয়ে চালু রয়েছে, তাও হতে পারে। বহু প্রগতিশীল কৃষক নিজের জমিতে নিত্য নতুন গবেষণা করেছেন, তার সুফল নানানভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন লোককবি দূরে দূরান্তে ছড়া-প্রবাদের মধ্যে। খনার বচনকে বলা যায় বাংলার দেশীয় কিংবা আঞ্চলিক কৃষিজ্ঞান। এই জ্ঞান লোকসমাজের মধ্যে লালিত এবং বংশ পরম্পরায় সংবাহিত হয়েছে। খনার বচন যেন বাংলা সাহিত্যের ‘অণুগল্প’, যা কৃষক সমাজের কাছে চাষাবাদের উল্লেখযোগ্য সূত্র। সমকালীন কৃষিচিত্রে এই বচনগুলি ছিল বাস্তবাশ্রিত এবং নির্ভেজাল; হত-দরিদ্র নিরক্ষর কৃষকের কাছে সহজে পৌঁছানো কৃষি প্রযুক্তির প্যাকেজ। খনার বচন এবং লোকায়তিক কৃষি গবেষণা বিষয়ে প্রখ্যাত লোকসংস্কৃতিবিদ ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় তথ্যনিষ্ঠ গবেষণা করেছেন।
২. কৃষকের বন্ধু বঙ্কিমচন্দ্র
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি অনবদ্য প্রবন্ধ হচ্ছে ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ এই শিরোনামে। প্রবন্ধটি ‘বঙ্গদর্শন’-এর বিভিন্ন সংখ্যায় ওই পত্রিকার সম্পাদক বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন। দেশের শ্রীবৃদ্ধি, প্রকৃত অবস্থা, জমিদারদের শোষণ, অত্যাচারীদের স্বরূপ, ভারতবর্ষীয় প্রজার উন্নতিহীন অবস্থা, দেশীয় কৃষি আইনের বিস্তৃত আলোচনা — এইসব নিয়েই দীর্ঘ প্রবন্ধ। তাতে প্রকাশ পেয়েছে কৃষক সাধারণের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের গভীর সংযোগ; জনপদ ও লৌকিক জীবন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ। বাংলার অসহায় কৃষক-সমাজের দুর্দশা, তাদের অবর্ণনীয় দুর্গতি, অর্থনৈতিক অবস্থার এক বিস্তারিত ছবি ফুটি উঠেছে এই প্রবন্ধে। তিনি দেখিয়েছেন এই সার্বিক দুর্দশার কারণ। তিনি প্রবন্ধে ‘রামা কৈবর্ত ও হাসিম শেখ’-কে হিন্দু বা মুসলমান হিসাবে দেখান নি; দেখিয়েছেন কৃষিজীবী একটি শ্রেণী হিসাবে। আশ্চর্য হতে হয় মার্কসবাদী দীক্ষায় চালিত না হয়েও তিনি কিভাবে মানুষকে এমন ভালোবেসেছেন! বঙ্কিমচন্দ্র বাংলায় সাম্যবাদের যে ‘বীছন’ বুনেছিলেন, তাই অতঃপর অঙ্কুরিত হয়ে মহীরুহ হয়েছিল। বঙ্কিম ছিলেন হিতবাদী দেশপ্রেমী মানুষ; দেশের কৃষিজীবী মানুষের দুঃখে ছিলেন সংবেদনশীল। বাংলায় এমন সাম্যবাদী মানুষ আরও অনেকে জন্মেছেন; স্বামী বিবেকানন্দও আদ্যন্ত সাম্যবাদী ছিলেন। সাম্যবাদ প্রচারের জন্য তাই বঙ্গদেশে ‘বিদেশী ঠাকুর’ পুজোর দরকার ছিল না।
৩. কৃষিবিদ ডি. এল. রায়
দ্বিজেন্দ্র লাল রায় বা ডি. এল. রায় একজন তথ্য-নিপুণ কৃষি বিশেষজ্ঞ ছিলেন, বিলেত থেকে তিনি পড়ে এসেছিলেন কৃষিবিজ্ঞান; চাকরি করেছিলেন জরিপ ও ভূমি-রাজস্ব বিভাগে এবং রচনা করেছিলেন কৃষি বিষয়ক জনপ্রিয় গ্রন্থ। বইটিতে বাংলা ও ভারতীয় কৃষির উন্নয়ন কোন পথে হবে তার পরামর্শও তিনি উপস্থাপন করেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা পড়তে যান ইংল্যান্ডের সিসিটার কলেজে। ১৮৮৪ সালের এপ্রিল মাসে গিয়ে শিক্ষা সম্পূর্ণ করে ১৮৮৬ সালের ডিসেম্বরে ফিরে আসেন। তিনি F.R.A.S. উপাধি লাভ করলেন, সেই সঙ্গে রয়্যাল এগ্রিকালচার কলেজ ও রয়্যাল এগ্রিকালচার সোসাইটি, লন্ডনের সভ্য নির্বাচিত হয়ে লাভ করলেন M.R.A.C. এবং M.R.S.A.E. উপাধি। ১৮৯৪ সালে তিনি আবগারি বিভাগের প্রথম পরিদর্শক হলেন, ১৮৯৮ সালে জমি নথি ও কৃষি বিভাগের সহকারী নির্দেশক এবং ১৯০০ সালে আবগারি কমিশনারের সহকারী। তিনি সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিলেন ২২ শে মার্চ, ১৯১৩। তার দুই মাসের মধ্যেই পরলোকগমন করলেন, ১৭ ই মে, ১৯১৩। ভেবেছিলেন অবসরের পর যাতনা মুক্ত জীবন নিয়ে সাহিত্যকর্ম চালাবেন, নিজের একটি কৃষি খামার গড়ে তুলবেন; সুযোগ পেলেন না।
দ্বিজেন্দ্র যে একজন কৃষি-বিশেষজ্ঞ ছিলেন এই তথ্য আমাদের অনেকের জানা নেই। স্নাতকোত্তর ইংরাজী সাহিত্যের একজন কৃতীছাত্র কেন কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে বিলাতে গিয়েছিলেন তা আজও বাঙ্গলা সাহিত্যের গবেষকদের কাছে কৌতুহলের বিষয়। কৃষিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে উচ্চপদে কর্মরত হওয়া যাবে এ বাসনা হয়তো ছিল, বিশেষ করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর ভারতবর্ষে জমি জরিপ ও কৃষিবিদ্যায় কাজের সুযোগ যখন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তবে এমনও হতে পারে, তাঁর পরিবার এবং স্বজন-বান্ধবের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্রের বন্ধু কালীকৃষ্ণ মিত্র ছিলেন কৃষি-বিদ্যানুরাগী। তিনি বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতে একটি আদর্শ কৃষি-উদ্যান ও কৃষি-ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষকদের উন্নততর কৃষি প্রশিক্ষণ দিতে, লিখেছিলেন উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ। তিনি বারাসাতের কৃষি খামারে ব্যবহার করেছিলেন পাশ্চাত্যে উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতি। তাই পারিবারিক উৎসাহে এবং পিতৃবান্ধবের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে প্রেরণা লাভ করে পড়তে গিয়েছিলেন কৃষিবিজ্ঞান। যেখান কৃষি বিজ্ঞান পড়তে গেলেন তা লন্ডন থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এক গ্রামীণ শহর সিসিটার বা সিরেনসেস্টার, অনেকটা যেন কৃষ্ণনগরের মতই এক প্রাচীন আর গ্রামীণ শহর, গ্রাম দিয়ে ঘেরা। পাশে বয়ে চলেছে চূর্ণী নদীর মতই এক ক্ষীণকায়া, স্রোতস্বিনী, বন্যাপ্রবণ নদী ‘চার্ণ’। যেন চেনা শহর, চেনা নদী, চেনা গ্রাম, চেনা কৃষিচিত্র; কৃষ্ণনগর আর সিসিটার যেন অভিন্ন এক জনপদ হয়ে উঠলো তাঁর কাছে। বাল্যে দেখা প্রকৃতির সমতুল্য এক শহরে থেকে শেষ হল কৃষিবিদ্যা শিক্ষা; একাধিক কৃষিবিদ্যার উপাধি নিয়ে ফিরে এলেন বিলেত থেকে।
১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গ্রন্থ ‘The Crops of Bengal’, প্রকাশক ছিল Messrs. Thacker, Spink & Co., পুস্তক-মূল্য ২ টাকা। বইটিতে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পরিচয় হিসাবে উল্লেখ আছে — D. L. Roy, M.A., M.R.A.C., M.R.A.S.E. (London) ( Late Assistant to Director of Land Records and Agriculture, Bengal). বইটি কলকাতাতেই ছাপা হয়েছিল, মুদ্রক হিসাবে উল্লেখ রয়েছে আর. দত্ত, হেয়ার প্রেস, ৪৬, বেচু চ্যাটার্জী স্ট্রিট। বইটির শিরোনামে এক ঝলকে যে পরিচয় রয়েছে তা এইরকম — Being a practical treatise on the agricultural methods adopted in the Lower Provinces of Bengal. বইটির শুরুতে দুই পাতার একটি Preface, তারপর ২১ পাতার একটি Introduction. Preface বা কথামুখে ডি. এল. রায় উল্লেখ করেছেন কোন কোন সরকারি পুস্তক আর রিপোর্ট থেকে তিনি নানান উদ্ধৃতি দিয়েছেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে দেখা যায় তাঁর বিলেতের সহপাঠী যারা তখন সরকারের কৃষি বিভাগের নানান উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন তাদের বই আর রিপোর্ট রয়েছে, যেমন — Mr. B. C. Basu’s (Rai Bahadur) Report on the Agriculture in the district of Ranchi, Mr. B. C. Basu’s Notes on Indian Agriculture, Mr. N. G. Mookerjee’s Hand-book of Indian Agriculture ইত্যাদি। এছাড়া ব্যবহার করেছিলেন Dr. Voelcker’s Report on the Improvement of Agriculture in India, Agricultural Statistics published by the Bengal Government, Reports on the working of the Experimental Farms at Burdwan and Dumraon, Agricultural Leadgers and Bulletins, Wilson’s British Farming, Mr. A. C. Sen’s Report on the Agriculture in the districts of Dacca and Burdwan, Mr. N. N. Banerjee’s Report on the Agriculture in the district of Cuttacks.
কথামুখের শুরুতে ডি. এল. রায় লিখেছেন, The object of the present treatise is to give a succinct account of the agricultural practices prevailing in the Lower Provinces regarding the cultivation of some of the most important crops grown in these parts. সেখানে উল্লেখ করতে ভোলেন নি সমগ্র আলোচনার মধ্যে সমগ্র বাঙ্গলা জুড়ে তাঁর নিজস্ব কৃষি পর্যবেক্ষণের ফলাফলও যুক্ত রয়েছে। সেই সময় তিনি ব্রিটিশ ভারতের ল্যাণ্ড রেকর্ড অ্যাণ্ড এগ্রিকালচার ডিরেক্টরের সহকারী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। বইটিতে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, যে কৃষিবিদ্যা তিনি অধ্যয়ন করেছিলেন, সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে সেই অধীত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি নিজস্ব কৃষি খামার গড়ে তুলতে চান, “I look forward to the time when I may take advantage of my agricultural education by starting a farm of my own, after I shall have retired from Government service, and laid by a small capital to devote to the practical study of this intensely interesting subject.” কিন্ত তাঁর অকাল প্রয়াণে লালিত ইচ্ছা পূরণ হয় নি। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
বিলাতে তাঁর সঙ্গেই সিসিটার কলেজে পড়তে গিয়েছিলেন নৃত্যগোপাল মুখোপাধ্যায়, অতুলকৃষ্ণ রায়, ভূপালচন্দ্র বসু, গিরীশচন্দ্র বসু। এদের মধ্যে ভূপালচন্দ্র বসু পরবর্তী কালে হয়ে উঠলেন রায়বাহাদুর বি. সি. বোস এবং ডেপুটি ডাইরেক্টর অফ এগ্রিকালচার। নিত্যগোপাল মুখার্জীই হলেন ব্রিটিশ সরকারের কৃষিবিদ তথা পরবর্তীকালে কৃষি বিজ্ঞানের অধ্যাপক এন. জি. মুখার্জী, যিনি ‘Hand Book of Indian Agriculture” গ্রন্থটি লিখেছিলেন।
ডি. এল. রায়ের বই-এ যে ফসলগুলি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে তার মধ্যে ধানের উপর আলোচনা সবচেয়ে বেশি (৩০ পাতা), তারপর গমের বিষয়ে আলোচনা (১২ পাতা), বার্লি বা যব (৬ পাতা)। এছাড়া জই বা ওট্স্, ভুট্টা, নানান দানাশস্য বা মিলেট, ইতালীয় দানাশস্য, সাধারণ দানাশস্য বা কমন মিলেট, ছোলা, মটর, মুগ, মুসুরি, খেসারি, কলাই, অড়হর, ঘোড়ামুগ, গাইমুগ, তিসি, সরষে, গিঞ্জেল্লি, নাইজার তৈলবীজ, রেড়ি, বাদাম, কার্পাস তুলো, পাট, মেস্তা, ধইঞ্চা, আখ, আলু, তামাক, মিষ্টিআলু, খামালু, বেগুন, মূলো, পটল, করলা, উচ্ছে, মিষ্টিকুমড়ো, লাউ, ঝিঙ্গে, ঢ্যাঁড়শ, শসা, ফুটি, তরমুজ, কচু, আদা, হলুদ, কলা, আনারস, অ্যারারুট, পালং নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের জমিদারি এলাকায় দ্বিজেন্দ্রলালের আলু চাষের প্রচেষ্টা নিয়ে, “আমাদের দেশে তখনকার দিনে সাধারণের মধ্যে আলু খাওয়ার তেমন প্রচলন হয় নি। আলুর চাষ করতে কৃষকেরা জানত না। দ্বিজেন্দ্রলাল কৃষিবিশেষজ্ঞ ছিলেন, তিনি একবার এসে আলুর চাষ প্রচলিত করবার জন্য বাবাকে উৎসাহিত করেন। বাগানের এক প্রান্তে খেত প্রস্তুত করা হল। আলুর চাষের এটাই হবে পরীক্ষাকেন্দ্র। দ্বিজুবাবু বললেন, তিনিই বীজ পাঠিয়ে দেবেন এবং কী করে জমির পাট করতে হবে, কী সার দিতে হবে সব বিষয়ে মালীকে বুঝিয়ে দেবেন।”
কৃষিবিদ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় চেয়েছিলেন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী কৃষিকাজে নিয়োজিত হোক এবং অন্যদেরও উৎসাহ দিক। তখন বাংলা বা ভারতে শিল্পের বিকাশ তেমন ছিল না, শিক্ষিত বিরাট এক সংখ্যাকে চাকরি দেবার সুযোগও ছিল না, অথচ শিক্ষিত শ্রেণী গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছিল। শিক্ষিত শ্রেণী ভৌমকৃষি বা প্রাণীপালনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এই অবস্থায় তিনি উপলব্ধি করেছিলেন গ্রামে ফিরে যাওয়া ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়।
‘The Crops of Bengal’ গ্রন্থে ডি. এল. রায় যে কর্মসূচীগুলি সমকালে রূপায়ণ করতে চেয়েছিলেন, তা হল —
Research Farm গুলির উন্নততর তদারকি; এবং সেগুলি যেন সরাসরি ডিরেক্টরদের অধীনস্থ থাকে এবং তা ইংল্যান্ড থেকে কৃষিবিদ্যায় প্রশিক্ষিত, আবাসিক সুপারভাইজারদের তদারকিতে চলে। চেয়েছিলেন, Experimental Farm-এর পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্যগুলি Demonstration Farm – এ নিয়মিত প্রদর্শিত হোক। যেন প্রতিটি ডিভিশন পিছু অন্তত একটি করে Agricultural Demonstration Farm থাকে এবং সেখানে ভারতের পুসা কৃষি প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ স্নাতকেরা সুপারিন্টেনডেন্ট হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি চেয়েছিলেন জেলায় কৃষি সমীক্ষা নিয়মিতভাবে চলুক এবং তা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। শুধু চাকরি নয়, কৃষি স্নাতকেরা সরকারী উৎসাহে নিজেরা আদর্শ কৃষি খামার গড়ে তুলুক। ভারতের কৃষি কলেজে চাষির ছেলে, জমির মালিকের ছেলেরা প্রশিক্ষণ নিতে আসুক — এটা ভীষণভাবে চেয়েছিলেন।
বিলেত থেকে কৃষিবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে এলেও তাঁর দেশপ্রেম সম্পৃক্ত স্বকীয়-স্বাধীন আলাপচারিতায় বাংলার ছোটোলাট ইলিয়ট সাহেব খুশি হতে পারলেন না। তিনি বাংলার কৃষি বিভাগে কাজ করার সুযোগই পেলেন না। তাঁকে জমি জরিপ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে যেতে হল এবং অবশেষে সেখানেও দ্বিজেন্দ্রলালের দক্ষতার প্রমাণ পেয়ে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুটা পরগণার সেটেলমেন্ট অফিসার হিসাবে নিয়োগ করল। কিন্তু যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন গরীব কৃষক-দেশবাসীর সেবা করবেন তাঁকে কে আটকাবে? দেশীয় প্রজাদের উপর অন্যায় খাজনা বৃদ্ধি তিনি মেনে নিলেন না। তাঁর যুক্তি ছিল ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মোতাবেক যে জরিপ ব্যবস্থা দেশে বলবৎ ছিল, তার পরিবর্তন করে বেআইনী জরিপ ব্যবস্থার নিয়মে কর ধার্য করা কখনই উচিত নয়। কাজেই প্রচলিত প্রথা অনুসারে রাজস্ব আধিকারিকরা জমি জরিপের সময় অধিক জমির সন্ধান পেলেই যে বেশি কর ধার্য করে দিচ্ছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের সাধুবাদ পাচ্ছিলেন, তা তার এলাকায় বন্ধ করার সংকল্প নিলেন। কাজেই সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সংঘাত শুরু হল। প্রজাদের সংঘটিত করে এই জুলুমবাজির বিরুদ্ধে পাঠালেন কোর্টে, বিবাদি পক্ষ জমিদারেরা। কোর্ট জমিদারের পক্ষে রায় দিল। আগে থেকেই ডি. এল. রায়ের উপর ক্রোধান্বিত বাংলার লেফ্টটেনান্ট গর্ভনর স্যার চার্লস এলিয়ট সরকারের অর্থ ক্ষতির তদন্তে নিজেই এলেন, তাঁকে তিরস্কার করলেন। কলকাতায় ফিরে গিয়ে দ্বিজেন্দ্রর কেরিয়ারের বারোটা তো বাজালেনই, সেটেলমেন্ট অফিসারদের সার্বিক কর্তব্য সম্পর্কে দমন মূলক ধারা সেটেলমেন্ট ম্যানুয়ালে সংযোজন করলেন, যাতে বেয়ারা আধিকারিকরা বেশি ট্যাঁ-ফো করতে না পারেন। দ্বিজেন্দ্রর প্রমোশন বন্ধ হল।
ডি. এল. রায় দমে গেলেন না। প্রজাদের ফের সংগঠিত করে উচ্চতর আদালতে পাঠালেন। রায় এবার উল্টালো। ডি. এল. রায়ের মতামত-অভিমুখী রায় বেরোলো, এমনকি ম্যানুয়াল সংযোজন সম্পর্কিত ধারাও আর মান্যতা পেলো না। সরকার তা তুলে নিতে বাধ্য হল। রাজস্ব সংক্রান্ত সেই রায় এখনও বহাল আছে; আর সেই অমিত-বিক্রমের সুবাদে বাংলার দরিদ্র কৃষকের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে তিনি ‘ডি. এল. রায়’ থেকে হয়ে উঠলেন ‘দয়াল রায়’। পরে তিনি লিখছেন (‘স্বরচিত জীবনী’, ‘জন্মভূমি’ পত্রিকা), “আমি ইহা সত্যই শ্লাঘার বিষয় বিবেচনা করি যে, আমি এই ক্ষুদ্র ক্ষমতাতেই উক্ত কার্যে নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করিলেও সমস্ত দেশব্যাপী একটি উপকার সাধিত করিয়াছি — নিরীহ প্রজাদিগকে অন্যায় করবৃদ্ধি হইতে বাঁচাইয়াছি।”
৪. রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথের অবদান*
কৃষিবিজ্ঞান গবেষণা ও সম্প্রসারণে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির একটি অনবদ্য ভূমিকা ছিল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকার ৪৮ বর্ষের চৈত্র সংখ্যায় ‘বৈজ্ঞানিক কৃষিকার্য’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছিলেন সরলাদেবী। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে কৃষিচিন্তা নানানভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাঁর ‘মালঞ্চ’ উপন্যাসের উদ্যানভাবনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথও খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে জটিল কৃষি বিষয় সরল বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। ভালো বিজ্ঞান জানা না থাকলে একাজ সুসম্পন্ন করা যায় না।
কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিদ্যা পড়ে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও পুত্রবন্ধু সন্তোষ মজুমদারকেও বিদেশে কৃষিবিদ্যা ও গোপালন বিদ্যাশিক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। রবীন্দ্রনাথের নানান কর্মে তাঁর কৃষিভাবনা, পল্লীভাবনা এবং বাংলার কৃষিজীবী মানুষের প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। ১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে ও অর্থে শিলাইদহে নতুন জাতের ধান চাষ শুরু হয়েছিল; হয়েছিল আমেরিকান ভুট্টা, নৈনিতাল আলুর চাষ; পাটনাই মটর, আখ, কপি ও রেশম চাষের প্রচেষ্টাও। কুঠিবাড়ীর চারপাশের জমিকে কেন্দ্র করে প্রজাদের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করলেন তিনি। পতিসরে কৃষকদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দিতে কৃষি ব্যাঙ্ক স্থাপন করলেন। গঠিত হল তাঁত শিক্ষার কেন্দ্র। গ্রামীণ মানুষকে নিয়ে তাদের নিজেদের দ্বারা পল্লী উন্নয়নের চেষ্টা শুরু হল, হল গ্রাম পুনর্গঠনের কাজ। শক্ত এঁটেল মাটি ট্রাক্টর দিয়ে চাষের বন্দোবস্ত করা হল, কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হল, ধর্মগোলা তৈরি হল। অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিজনিত ক্ষয়ক্ষতি হলে খাজনা মুকুবের ব্যবস্থা হল। নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিপুল পরিমাণ টাকা পতিসরের ব্যাঙ্কে রেখে মূলধনের সমস্যা খানিকটা মেটানোর ব্যবস্থা করলেন। শাহাজাদপুরের গোপালকদের তিনি উন্নত জাতের গাভী ও চারণভূমি দান করেন। রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতন প্রকল্পেও গ্রামীণ কৃষি উন্নয়ন একটি সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, ‘আজ শুধু একলা চাষীর চাষ করিবার দিন নাই, আজ তাহার সঙ্গে বিদ্বানকে, বৈজ্ঞানিককে যোগ দিতে হইবে’ (রবীন্দ্রনাথ, ‘ভূমিলক্ষ্মী’)।
৫. ভারতে সবুজ বিপ্লবের অন্যতম প্রাণপুরুষ বশী সেন*
শ্রীশ্রী মা সারদা, সিস্টার নিবেদিতা, সিস্টার ক্রিস্টিন, স্বামী সদানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ও আচার্য জগদীশ চন্দ্রের স্নেহধন্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানী বশীশ্বর সেন (১৮৮৭ — ৩১ আগষ্ট, ১৯৭১) ১৯২৪ সালে কলকাতার ৮ নম্বর বোসপাড়া লেনে স্থাপনা করেন ‘বিবেকানন্দ ল্যাবরেটরি’। ১৯৩৬ সালে স্বামীজির অন্যতম প্রিয় পাহাড়ি স্থান আলমোড়ায় তা স্থানান্তরিত করলেন। তিনিই ভারতে প্রথম গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরার সফল সঙ্করায়ণ ঘটান। তাঁর উদ্ভিদ কোষতত্ত্ব, শারীরতত্ত্ব, উদ্ভিদ হর্মোন সংক্রান্ত গবেষণা উচ্চপ্রশংসিত হয়েছিল। পঞ্চাশের মন্বন্তর তাঁকে ফলিত উদ্ভিদ বিদ্যা গবেষণায় প্রেরণা যোগায়। উত্তর প্রদেশে তিনি কৃত্রিম মাশরুম চাষের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। মানুষ হিসাবে তিনি একজন হৃদয়বান পুরুষ ছিলেন। দরিদ্র, বুভুক্ষু মানুষের জন্য কৃষি বিজ্ঞানে কাজ করে ১৯৫৭ সালে তিনি পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ‘ওয়াতুমল ফাউন্ডেশন পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি। ভারতে সবুজ বিপ্লবের তিনি অন্যতম পুরুষ। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৪ সালে উত্তর প্রদেশ সরকার আলমোড়ার গবেষণা কেন্দ্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের আই.সি.এ.আর-কে হস্তান্তর করে। এর নতুন নাম হয় ‘বিবেকানন্দ পার্বত্য কৃষি অনুসন্ধানশালা’।
তাঁর জন্ম বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের গড়দরজা পাড়ায়। বশী সেনের সহধর্মিনীর নাম গারট্রুড এমার্সন। আমেরিকান এই মহিলা শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির ফেলো, ‘এশিয়া’ পত্রিকার সম্পাদিকা এবং আমেরিকান এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যা। তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘ভয়েসলেস ইণ্ডিয়া’-র ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতপক্ষে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বিবেকানন্দ ল্যাবরেটরি। বেলুড় মঠ ও মিশনের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন এবং স্বামীজির শিষ্য-শিষ্যারা তাদের নানাভাবে সহায়তা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিজ্ঞান গ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’ শেষ করেন আলমোড়ায় এসে। বশী তখন আলমোড়ায় গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত। তিনি বশীকে গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি দেখিয়ে নেন। বশী সেন অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পুরো পাণ্ডুলিপিটি পড়েন। রবীন্দ্রনাথ তাতে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন এবং তা বইটিতে লিপিবদ্ধ আছে। তাকে নিয়ে, তার গবেষণা খামার নিয়ে ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ খ্যাত সাহিত্যিক প্রবোধ কুমার সান্যাল অনেক তথ্য দিয়েছেন।
৬. বেঙ্গল প্রভিন্স ও পশ্চিমবঙ্গে কৃষিশিক্ষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধি করে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিশিক্ষার পর্যায়ক্রমিক একটি অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণিত হল।
১৮২০ — কলকাতার আলিপুরে ‘এগ্রি-হর্টি সোসাইটি’-র পত্তন।
১৮৬৩ — বিদ্যালয় স্তরে কৃষিশিক্ষার সূচনা হল উত্তরপাড়ায় মাখলা পীজ্যান্ট স্কুল স্থাপনের মধ্যে দিয়ে।
১৮৯৮ — মহাবিদ্যালয় স্তরে কৃষিশিক্ষার সূত্রপাত শিবপুরে সেন্ট্রাল ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে।
১৯৩৯ — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে স্নাতক কোর্স চালু হল। এবং ব্যারাকপুরে প্রতিষ্ঠিত হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রতিষ্ঠান।
১৯৪৮ — ঝাড়গ্রামে প্রতিষ্ঠা হল কৃষি কলেজ।
১৯৫২ — কলকাতার টালিগঞ্জের রাণীকুঠিতে প্রতিষ্ঠিত হল ‘স্টেট কলেজ অফ এগ্রিকালচার’।
১৯৫৮ — ‘স্টেট কলেজ অফ এগ্রিকালচার’ নাম পরিবর্তিত হয়ে নদীয়ার হরিণঘাটায় স্থানান্তরিত হল, নতুন নাম হল ‘বিড়লা কলেজ অফ এগ্রিকালচার’।
১৯৬০ — কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল, ‘বিড়লা কলেজ অফ এগ্রিকালচার’ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছত্রছায়ায় এলো।
১৯৬১ — কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বা প্ল্যান্ট প্যাথোলজি বিষয়ে চালু হল স্নাতকোত্তর পাঠক্রম।
১৯৬৩ — বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত হল ‘কলেজ অফ এগ্রিকালচার’।
১৯৭৪ — নদীয়ার মোহনপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭৮ — কোচবিহারে চালু হয় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস।
১৯৯৫ — ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০০১ — ‘উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ জন্মলাভ করে।
২০০২ — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ পরিবর্তিত হয়ে ‘ইন্সটিটিউট অফ এগ্রিকালচার’-এর পদমর্যাদা লাভ করে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।