বিকাশ মিশ্রের কয়লাকাণ্ডে এবার সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখে বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা।

এবার সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখে বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা। যেখানে এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন কয়লাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্র। বৃহস্পতিবারই যাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুক্রবার বেসরকারি ওই হাসপাতালের নামে আদালতে অভিযোগও জানিয়েছে সিবিআই।

সিবিআই সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিকাশ মিশ্রকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ‘রিলিজ’ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রও বেরিয়ে যায়। সিবিআইয়ের দাবি, আদালতের নির্দেশ মতো বিকাশ মিশ্রের গ্রেফতারি পরোয়ানার কোর্ট অর্ডার নিয়ে তারা হাসপাতালে আসার আগেই আবারও ভর্তি করে নেওয়া হয় বিনয় মিশ্রের ভাইকে।

এখানেই প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা। একবার ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর কেন ফের ভর্তি করা হল বিকাশকে? সে বিষয়ে হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে সিবিআই। বিকাশ মিশ্রকে এর আগে ইডির গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেছিলেন দিল্লিতে। এক মাস তিনি জেলেও ছিলেন। এর পর সেখান থেকে জামিন পান। এদিকে এই জামিনের পর সিবিআই বিকাশকে গ্রেফতার করতে গেলে আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি। আসানসোল সিবিআই আদালতে তারই শুনানি ছিল বুধবার। আদালত বিকাশকে ফিরিয়ে দেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় তদন্তে সহযোগিতা করছে না বিকাশ মিশ্র। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা যেতে পারে।

সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বুধবারই আদালতকে জানিয়েছিলেন, বিকাশ মিশ্রকে গ্রেফতার করা তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। বিকাশ জামিন পেলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে, এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তাঁরা। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ লোপাট হতে পারে বলেও সিবিআইয়ের তরফে আশঙ্কা করা হয়। এরপরই গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় আদালত।

কয়লাকাণ্ডে নিঃসন্দেহে বড় গ্রেফতারি এটি। কারণ, কয়লাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজির টাকা যিনি প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতেন বলে অভিযোগ সেই বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ। সিবিআই প্রথম থেকেই বলে এসেছে, কয়লার ‘কালো’ টাকা কলকাতার প্রভাবশালীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া কিংবা প্রভাবশালীদের একাংশের টাকা কীভাবে এই কয়লার ব্যবসায় ঢুকেছে তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতেন ‘মিশ্র ভ্রাতৃদ্বয়’। বিনয় ও বিকাশের একাধিক ভুয়ো ব্যবসা রয়েছে বলেও অভিযোগ।

সেই ব্যবসাতেও এই কয়লার টাকা খাটানো হোত বলেই জানতে পেরেছে সিবিআই। সেই টাকার হদিশও গোয়েন্দারা পেয়েছেন। কয়েক কোটি টাকা বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। ফলে বিকাশকে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই জেরা শুরু করতেই কেঁচোর বদলে কেউটে উঠে আসতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

বিকাশ মিশ্রকে জেরা করতে গেলে আগে হেফাজতে নিতে হবে সিবিআইকে। আদালতে তুলতে হবে বিকাশকে। কিন্তু বেসরকারি ওই হাসপাতাল কেন বিকাশকে ছাড়তে চাইছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিবিআইয়ের অন্দরে। শুক্রবার আদালতের কাছে এ নিয়ে নিজেদের বক্তব্যও জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কেন বিকাশ মিশ্রকে ছাড়তে গড়িমসি? এবার সিবিআই স্ক্যানারে কলকাতার নামজাদা বেসরকারি হাসপাতালও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.