বিগত দু বছর ধরেই করোনা মহামারী এক নতুন ধরণের কর্মপদ্ধতির সূচনা করেছিল। গত ২ বছর ধরে বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও লকডাউন পর্ব চলেছে, যার ফলে জরুরী পরিষেবা বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত কর্মপ্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়েছে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করাতে। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বিশেষ ক্ষেত্রে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজের অনুমতি দিত, কিন্তু অতিমারীর কালে সংক্রমণের ভয়, লকডাউন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই ‘বাড়ি থেকে কাজ’এর পরিসর বেড়েছে।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাড়ি থেকে কাজের বিকল্প থাকা বহু কর্মীরই চাকরি বজায় থাকলেও বর্তমানে কাজের এই পদ্ধতি নিয়ে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ। কর্মীদের অভিযোগ বেসরকারি সংস্থাগুলি কর্মীদের অনেকবেশি সময় কাজ করালেও তাদের প্রাপ্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে না। যা চিন্তা বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। এবার এই সমস্যা সমাধানে বেসরকারী কর্মীদের আইনি সুরক্ষাকবচ দেওয়ার ভাবনা চিন্তা করছে মোদি সরকার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হয়েছে যাতে দ্রুতই বাড়ি থেকে কাজের ব্যাপারে কিছু নিয়ম চালু করতে। জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনাও শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ মাত্রা ছাড়ানোয় বহু প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখও দেখতে হয়। ফলশ্রুতিতে বহু কর্মীকে ছাঁটাই করতেও বাধ্য হয় তারা। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটার প্রাথমিকভাবে বাড়ি থেকে কাজ করার নতুন উপায় শুরু হয়েছিল। বর্তমানেও বহু সংস্থার কর্মীরাই বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু সংস্থাতে সপ্তাহের কিছু দিন অফিসে এসে এবং কিছুদিন বাড়ি থেকে কাজ করার মিশ্র পদ্ধতিও চালু রয়েছে। তবে দেশে ‘বাড়ি থেকে কাজ’এর কোনও আইনি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বর্তমানে সরকার এই নিয়ে আইন আনতে চাইছে। এর কারণ অভিযোগ উঠছে বহু সংস্থাই এই সুযোগে কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের থেকেও অনেক বেশি কাজ করাচ্ছে। তবে এই সময় বা ওভারটাইমের জন্য সংস্থাগুলি থেকে কর্মীদের কোনও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিচ্ছে না। কর্ম প্রতিষ্ঠানগুলির বক্তব্য বাড়ি থেকে কাজ করায় কর্মীদের অনেক বাড়তি সুযোগ রয়েছে। এর ফলে কর্মীদের যাতায়াতের সময় এবং খরচ দুই-ই সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু কর্মীদের দাবি বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে তাদের কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
শুধু তাই নয় বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের খরচ বাড়ার কথাও উল্লেখ করছেন কর্মীরা। বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে ইন্টারনেট, বিদ্যুতের মতো পরিষেবার খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে তাদের। বহু সংস্থাই যার খরচ কর্মীদের দেয় না। সূত্রের খবর কর্মীরা যাতে এই দুই খরচ পান সে দিকটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে। সরকারের তরফে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে যাতে বাড়ি থেকে কাজের ব্যাপারে কোন কোন নিয়ম তৈরি করা যেতে পারে তা নির্ধারিত করতে। তবে করোনা পূর্ববর্তী সময় থেকেই যেহেতু তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বাড়ি থেকে কাজের নিয়ম চালু ছিল, তাই তাদের ক্ষেত্রে বহু নিয়ম আগে থেকেই বলবৎ ছিল। বর্তমানে কেন্দ্রের উদ্দেশ্য কর্ম সংস্থানের সব ক্ষেত্রগুলিকেই একটি নিয়মের আওতায় আনা। তবে এই নিয়ম কবে কার্যকর হবে সে বিষয়ে সরকারের তরফে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।