ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিলের প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল ( আইএমএ )। এর ফলে বন্ধ রাজ্যের সব হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা। আর তারই খেসারত দিতে হচ্ছে রোগীদের। সকাল থেকে সব হাসপাতালে লম্বা লাইন। ডাক্তারদের দেখা মিলছে না আউটডোরে। এর মাঝে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে এ হাসপাতাল, সে হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়েও চিকিৎসা পেল না এক তিন বছরের বাচ্চা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ নদিয়ার তেহট্টের কাছে মৃগী গ্রামের বাসিন্দা আলারব মণ্ডলের তিন বছরের ছেলে নুরহাসিন খেলতে খেলতে ছাদ থেকে নীচে পড়ে যায়। তার হাত ও কলার বোন ভেঙে যায়। মাথায় গুরুতর ফ্রন্টাল চোটও পায় সে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাকাশিপাড়া হাসপাতালে। সেখানে হাতে প্লাস্টার করে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বলা হয় কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।
সেখানে গেলে তাদের বলা হয়, ডাক্তার নেই। ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলা হয়। সেইমতো মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ এনআরএস-এ এসে পৌঁছন আলারব। কিন্তু এনআরএস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালে মাথার চোটের ডাক্তার নেই, অন্য হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যেতে। তারপর ভোরবেলা এসএসকেএম হাসপাতালে ছেলেক নিয়ে আসেন আলারব। প্রথমে ইমারজেন্সিতে গেলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এটা আউটডোর কেস। তাই প্রথমে আউটডোরে দেখাতে হবে।
এ কথা শুনে আউটডোরে এসে টিকিট কেটে প্রায় হাজার লোকের পিছনে লাইনে দাঁড়ান আলারব। কোলে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসা মেলেনি। এর মাঝে ফের ইমারজেন্সিতে গেলে বলা হয়, আউটডোরেই দেখা হবে, ডাক্তারবাবু বসবেন। কিন্তু এখনও কোনও ডাক্তার বসেনি। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরেও মাথায় গুরুতর চোট পাওয়া বাচ্চা চিকিৎসা পায়নি। সে বাবার কোলে অনবরত কেঁদেই চলেছে। অসহায় ভাবে হাসপাতালেই লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাবা।
তবে এই ঘটনা শুধু এসএসকেএম-এ নয়, রাজ্যের সব হাসপাতালের। মেডিক্যাল কলেজে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কোল্যাপসিবল গেট। পরে রোগীদের পরিজনরা ঝামেলা করলে গেট খোলা হয়, টিকিটও দেওয়া হয়, কিন্তু কোনও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। সকালে থেকেই লম্বা লাইন রাজ্যের প্রায় সব হাসপাতালের আউটডোরে।
গোসাবার কাছে প্রত্যন্ত দ্বীপ থেকে মাকে নিয়ে এসএসকেএম-এ এসেছিলেন দিবাকর মণ্ডল। তিনি বলেন, “মায়ের কোমর ভেঙে গিয়েছে। ৫বার লঞ্চ বদল করে এলাম। টিকিট কাটলাম। কিন্তু এখন শুনছি ডাক্তার বসবেন না। আগে থেকে তো জানাতে পারতেন। এতটা হয়রানি হতো না।” হাওড়ার সালকিয়া থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নিউরোলজি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন রত্না দাস। কিন্তু সব তো বন্ধ। তাই ভর্তি করা যায়নি স্বামীকে।
এই ধর্মঘটের ব্যাপারে আইএমএ সভাপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, “একটা জনবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাধারণ মানুষের জন্যই এই প্রতিবাদ। সব ডাক্তারদের বলা হয়েছে, যাঁরা এই ধর্মঘট পালন করবেন, তাঁরা খেয়াল রাখবেন মুমূর্ষু কোনও রোগী আসছে কিনা। সেরকম হলে হাসপাতালের বাইরেই চিকিৎসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জরুরি পরিষেবা ঠিক থাকবে।”
শান্তনুবাবু যাই বলুন না কেন, বাস্তব চিত্রটা কিন্তু আলাদা। ফের ডাক্তারদের ধর্মঘটে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা।