নীলমণি বর্মণের চাকরিটা গেল ।
সাগর দিঘির সাহাপুর সাঁওতাল হাইস্কুলের শিক্ষক নীলমণি বর্মণের নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করতে বাধ্য সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন । আদালতে caught red handed হয়ে ।
কে এই নীলমণি বর্মন ? কলকাতার এক মস্ত বড় মাথার সুপারিশে মেধা তালিকায় অনেক নীচে নাম থাকা সত্বেও সবাইকে টপকে চাকরি পান তিনি । মাস সাতেক ধরে ছাত্র না আসা ফাঁকা স্কুলে বহাল তবিয়তে অঙ্কের শিক্ষকতা করেও গেছেন । নিয়ম করে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শিক্ষকতার মাইনেও ঢুকেছে । কেউ জানতোনা কিভাবে কার সুপারিশে জালিয়াতি করে চাকরিটা হয়েছে, স্কুলের বিশেষ একজন ছাড়া ।
বেশ চলছিল । জনৈক প্রশান্ত দাস মেধায় ওপরে থাকা সত্বেও চাকরি না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে আসেন । ফিরদৌস শামীমকে ধরে মামলা করেন । ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বেড়াল । সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতেই স্বীকার করেন
” কেলোটা ” হুজুর আমরাই করেছি, এখন কি করব বলুন । আদালত যা বলার বলে দিয়েছে । চাকরি গেছে নীলমণির । বেচারি অঙ্ক শেখাতে গিয়ে বেহিসেবী অঙ্কে চাকরি খুইয়েছেন নিজেই । এখন কাকে দোষ দেবেন ?
নীলমণির শাস্তি হল বটে, কিন্তু যিনি সুপারিশটা করেছিলেন তাঁর শাস্তি হবে না ? কেন ? কিসের জন্য ?
এমন হাজার হাজার সুপারিশে গত কয়েক বছরে কত ছেলে মেয়ে অবৈধ কাজ পেয়েছে কেউ আমরা জানি ? কে ধরবে তাঁদের ? কে শাস্তি দেবে তাঁদের ? ৬ লাখ, ৮ লাখে বছর কয়েক আগেও বিক্রি হত চাকরি । এখন ১০, ১২, ১৪ তেও নাকি বিকোয় চাকরি । তারপর হরিশ চ্যাটার্জি, হরিশ মুখার্জি, তোপসিয়া ভবনের সুপারিশ তো আছেই । ঠগ বাছতে গেলে বাংলা উজাড় হয়ে যাবে ।
ওদিকে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মেধার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পেয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ছেলেমেয়েগুলো আজ প্রথমে বিধান নগরে ২৮৭ দিন, পরে প্রায় ৬০ দিন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে রাত জাগছেন, দিন কাটাচ্ছেন অনশন করে । খবর রাখি আমরা ?
ঠিক এরই মাঝে কলকাতা হাইকোর্টে গ্রুপ ডি জালিয়াতি থেকে সি বি আই অনুসন্ধান তুলে নিল হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ । মাইনে বন্ধ করার অভিজিত গাঙ্গুলির নির্দেশ ফিরিয়ে নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে রিলিফ দিল। দু মাস সময় দিয়ে সিট দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিল । পাগলেও জানে তথ্য সরানোর পক্ষে যে সময় মোর দ্যান এনাফ । সিটের মাথায় থাকবেন প্রাক্তন বিচারপতি রণজিৎ বাগ । কে এই মানুষটি ? রাজ্য সরকারের কৃপায় যিনি সম্ভবত স্যাটের দায়িত্ব পেয়েছিলেন । ডি এ মামলা যেখানে ঝুলে । তাঁকে সাহায্য করবেন কে কে ? উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আশুতোষ ঘোষ, মাধ্যমিক পর্ষদের পারমিতা রায়, আর একজন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী । ঘরেই হবে ঘরের বিচার ।
তাহলে কি দাঁড়ালো ? শেষপর্যন্ত যা দাঁড়ালো আদালতের সম্মান রক্ষার্থে প্রকাশ্যে তা বলা যাবে না । আপনারাই যা বোঝার বুঝে নিন । শুধু ভাবছিলাম নীলমণি বর্মনও হয়তো ঘুর পথে এরপর চাকরিটা ফিরে পাবে ।
আর আমরা ? আমরা হাঁ করে শুধু তাকিয়েই দেখব এসব । অনশনরত এস এল এস টির পোস্ট গ্রাজুয়েট ছেলেমেয়েগুলো ৩১ ডিসেম্বরের রাতেও গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে রাতের আকাশে নববর্ষর বরণ দেখবে ।
বাঙালির জীবনে এভাবেই আরও একটা বছর যাবে, নববর্ষ আসবে । প্রচুর আলোর মধ্যেও তখন অন্ধকার রাতটা খুব জ্বল জ্বল করবে । আর নিঃশব্দে সেই রাত হয়তো বলে উঠবে – কে বলেছিল এত পড়াশুনা করতে ? এবার দ্যাখ কেমন লাগে ?
এখন হাড়ে হাড়ে বুঝি এটাই আসলে “এগিয়ে বাংলা” ।
ভুল বললাম ? কি বলেন ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)