ইউনানিতে নিয়োগ-দুর্নীতি, প্রশ্ন চিহ্নের সামনে চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজির ভূমিকা।

আয়ুশ ইউনানি রেজিস্ট্রারের নিয়োগে তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আর এই নিয়োগ বিতর্ক ঘিরে আরও একবার শিরোনামে উঠে এল শাসকদলের চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজির নাম। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল মাজির নিয়োগ করা ইউনানি রেজিস্ট্রারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই মামলা দায়ের হয়েছে। যদিও এ প্রসঙ্গে নির্মল মাজির কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রেজিস্ট্রারের নিয়োগের বিরুদ্ধেই সোমবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সোমবার মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘যা হয়েছে তাতে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।’ ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসেসকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’ মাসের মধ্যে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত।

আয়ুশ চিকিৎসকরা ইউনানি রেজিস্ট্রেশন পেয়ে থাকেন। ইউনানি প্র‍্যাক্টিস তখনই বৈধ হয়। এদিকে অভিযোগ ওঠে, এমন বহু ইউনানি চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁদের রেজিস্ট্রেশন একেবারেই ভুয়ো। ৪ হাজার ৯০৫ জন এমন ইউনানি চিকিৎসক রয়েছে যাঁদের নিয়োগ প্রশ্নসাপেক্ষ বলেও আদালতে জানান মামলাকারী।

অভিযোগ, রাজ্য ইউনানি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ইমতিয়াজ হুসেন ভুয়ো পদ্ধতিতে ৯৪৭ জনকে নিয়োগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের শুরুর দিকে জানুয়ারি নাগাদ গ্রেফতারও করা হয় ইমতিয়াজ হুসেনকে। পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি। অভিযোগ, ফের ইমতিয়াজ হুসেনকেই স্টেস্ট কাউন্সিল অব ইউনানি মেডিসিন পর্যবেক্ষক নির্মল মাজি পুনর্বহাল করেন। ২৪ নভেম্বর ইমতিয়াজ হুসেনকে ফের কাজে বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মামলাকারী নাদিম আহমদের বক্তব্য, বর্তমানে প্রায় চার হাজার জন ইউনানি প্র‍্যাক্টিস করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আদৌ কতজন আসল চিকিৎসক তা তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। মামলাকারীর বক্তব্য, এই চিকিৎসকরা মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে পারেন। অর্থাৎ তাঁদের ভূমিকা কোন ভাবেই খাটো করে দেখা যায় না। তাঁর দাবি, ৯৪৭ জনের নিয়োগপত্র যাচাই করে দেখা হোক। যাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ ঘিরে অভিযোগ, কী ভাবে তাঁকে পুনর্বহাল করা হল তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলের মামলাকারী। এরপরই বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। আগামী দু’ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতেও বলে ডিভিশন বেঞ্চ।

গত বছরই বিধাননগর উত্তর থানায় দ্য ক্যালকাটা ইউনানি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের এক চিকিৎসক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। স্টেট কাউন্সিলের প্রাক্তন সদস্য ওই চিকিৎসক অভিযোগ তোলেন, ইমতিয়াজ হুসেন ইউনানি ভুয়ো চিকিৎসক ‘তৈরির’ র‌্যাকেট চালাচ্ছেন। অবৈধ শংসাপত্র দিয়ে রাতারাতি বহু লোককে ইউনানি চিকিৎসক বানিয়ে তুলেছেন তিনি। এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ ওঠে। এরপরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

এদিকে ভুয়ো চিকিৎসক ধরতে সিআইডি যখন তদন্তে নেমেছিল, তখন নাকি এই ইমতিয়াজই একাধিক ইউনানি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে তদন্তকারীরা দেখেন, এমন অনেক বৈধ চিকিৎসক রয়েছেন যাঁদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন ইমতিয়াজ। এ নিয়ে সিআইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। এরপরই গত জানুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে জামিন পান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.