পুলওয়ামা কাণ্ডের প্রতিবাদে অসহ্য ক্রোধে দেশবাসী গর্জে উঠে বলেছিল— ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’। এঁরা কোন রাজনৈতিক দলের আমরা সে খবর রাখি না, এঁরা কোন জাতের, এঁদের ধর্ম কী— সে খবরও আমাদের কাছে নেই। আমরা কেবল জানি, প্রতিবেশী দেশের শত্রুভাবাপন্ন আচরণের প্রতিবাদে আমাদের দেশের মানুষের এ হলো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। কিন্তু আনন্দবাজার প্রশ্ন তুলল—“ওঁরা কারা?’ যাঁরা স্লোগান তুলেছিলেন ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’, তারা ‘মুসলমান মুর্দাবাদ’ বলেছেন এমন কথা আনন্দবাজার বলতে পারেনি। যদিও ‘পাকিস্তান মুদাবাদ’কে ‘মুসলমান মুর্দাবাদে’র সমার্থক করে দেখাতে আনন্দবাজারের চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। এক মাননীয় কবি, রবীন্দ্রনাথের উত্তরসূরি হিসেবে যাঁকে মেলে ধরতে যাঁর ভক্তবৃন্দের প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য, যিনি নিরুচ্চারে থাকতেই পছন্দ করেন, অন্তত তেমনটাই রটনা, যদিও রাজ্যবাসীর অভিজ্ঞতা কিছু বিচিত্র। তথাকথিত ‘সাম্প্রদায়িকতা’র ইন্ধন ঠেকাতে অহরহ তিনি বাণী বিলোন, কাব্যিক বা অকাব্যিক সে যাই হোক না কেন। অথচ পুলওয়ামার ঘটনার পর তিনি অমন মূক হয়ে গেলেন কোন মন্ত্রবলে রাজ্যের স্বল্পবুদ্ধি মানুষ তা বুঝতে পারছেন না। নাকি তার পেটোয়া সংবাদপত্রের লোকেরা কবিটির কামড় (বাইট) নিতেই ভুলে গিয়েছিল?
এক্ষেত্রে কবিকন্যার ভূমিকার প্রশংসা তো করতেই হয়। কারণ তিনি একই সঙ্গে কবি ও কবির তল্পিবাহক পত্রিকার মুখোশটা টেনে নামিয়েছেন। ইতি পূর্বে কবিকন্যাটি ‘সাম্প্রদায়িকতা’ রুখতে নানা ধরনের কেচ্ছা লিখেছেন। তবে পুলওয়ামা পরবর্তী উত্তর সম্পাদকীয়টি দুর্ধর্ষ বললেও অত্যুক্তি হয় না। ইনি কাশ্মীরি ‘জাতীয়তাবাদ’-এ ইন্ধন দেওয়ার পাশাপাশি মোক্ষম কথাটি বলে ফেলেছেন— ‘জাতীয়তাবাদ’ বলতে কাশ্মীরিরা কাশ্মীরই বোঝে, ভারত নয়। লেখিকার অবশ্য এসব নিয়ে বিশেষ আক্ষেপ টাক্ষেপ নেই। মোদ্দা কথায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেনা মরে মরুক। এই মৃত্যু তাদের পেশাগত অধিকার। কিন্তু নিরীহ কাশ্মীরি বাদ দিন, পাথর ছোঁড়নেওলাদের জামাই আদরে রাখাটাই আমাদের ‘অসাম্প্রদায়িক চরিত্র’। এই সম্পাদকীয়টি সকলেই পড়ে দেখতে পারেন, আনন্দবাজার নামক পত্রিকার চরিত্র ও আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারা যাবে। জে এন ইউ-তে আফজল গুরুর জন্মদিন পালন, গো-পাচার, শহুরে নকশালদের দেশে অরাজকতা সৃষ্টি, সর্বোপরি সেনা-নিধন যজ্ঞে নরেন্দ্র মোদীর কঠোর সমালোচককে এই পত্রিকাটির দ্বেষপ্রেমী ভাবনা যারপরনাই পরিস্ফুট হয়ে যাবে ওই একটি মাত্র সম্পাদকীয়তেই।
জে এন ইউ কাণ্ডের পরে ‘ভারতমাতা’ শব্দের প্রবল অপক্ষপাতী এক অর্বাচীন গায়ক ‘মা যদি ভুল করে, তবে মা-কে জুতো মারব না কেন’ গোছের একটি বালখিল্য সম্পাদকীয় লিখে, আনন্দবাজারের বর্তমান দেশদ্রোহী চরিত্রটি একেবারে সামনে এনে ফেলেছিল। বর্তমান আবহাওয়ায় গায়কটি বিশেষ ট্যাঁ ফো করছেন না বটে, যদিও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা পত্রিকাটির দেশদ্রোহী চরিত্রকেই একেবারে বেআব্রু করে দিয়েছে। আলাদা করে সম্পাদকের কথা বলতেই হয়। মালিকপক্ষের গণ্ডগোলে আর লোভ লালসায় তার সম্পাদক হওয়ার ভাগ্যে শিকে ছিড়েছে বটে, তবে পূর্বর্তন বে-সরকারি স্বনামধন্য সম্পাদকদের মনে রাখলে, তাদের পাশে এই ‘বেচারি’টিকে দেখলে, নিতান্ত এক নকশাল ক্যাডারকে সমবেদনা জানাতেই ইচ্ছা করে।
নকশালদের যে আলাদা ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন রয়েছে, শত ঝড়ঝাপটাতেও তা যে অটুট থাকে; বরং অতিরিক্ত তেল মেরে নকশালি ভাবনার প্রতিফলনে পত্রিকার পাতা অবিরত মুখরিত করলেই যে নকশালি নেটওয়ার্কে ঠাঁই মেলে না, দিল্লির ঘোষাল মশাই একেবারে হাতে-কলমে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। সম্পাদককে গ্যালন গ্যালন তেল মেরেও শেষে কিনা পদত্যাগ করতে হলো তাকে! তাই আজ স্পষ্ট ভাষায় একটা কথা বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে যে এই সেই আনন্দবাজার, যার সঙ্গে অতীতের জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমী আনন্দবাজার পত্রিকার কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের সম্পাদকীয় স্তম্ভের উপর লেখা ‘বন্দে মাতরম্’, এখন তাদের দ্বারাই যেভাবে প্রতিপদে অপমানিত, লাঞ্ছিত হচ্ছে তাতে আনন্দবাজারের পূর্বপুরুষের আত্মা তাদের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে বিযুক্ত হতেই চাইবেন।
কমিউনিস্ট মতাদর্শ পরাধীন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশের গোলামে পরিণত করতে চেয়েছিল। নকশালি, মাওবাদী মতাদর্শ স্বাধীন ভারতবর্ষকে পররাষ্ট্রে পদানত করতে চায়, চীন আর তারপর পাকিস্তানই এদের সবচেয়ে পছন্দ। তাই বর্তমান আনন্দবাজার পত্রিকাকে কেবল হিন্দুবিদ্বেষী ইত্যাদি বললে বিষয়টি লঘু হয়ে যায়, পাকিস্তানের দালালিই এদের একমাত্র লক্ষ্য। খেয়াল করে দেখুন গত বিধানসভা নির্বাচনে এদের দুর্ধর্ষ তৃণমূল বিরোধিতা এক লহমায় মমতা-আনুগত্যে পরিণত হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী সেনার বিরুদ্ধে বলায়। খোদ সম্পাদক তো জোর গলায় বলেই দিয়েছেন ‘দেশদ্রোহী’ তকমা মোদীর আমলে নাকি রীতিমতো গৌরবের বিষয়।তাই পাঠক বুঝে নিন, মোদী বিরোধিতা, বিজেপির বিরোধিতা বা আর এস এস বিদ্বেষের আড়ালে দেশদ্রোহিতাই এই পত্রিকার প্রকৃত উদ্দেশ্য।