গতকাল হঠাৎই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে পৌঁছে গিয়েছিলেন আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তথা দেশের অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পপতি গৌতম আদানি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠক হয় তাঁদের। আর তার পর থেকেই মমতা-আদানি সাক্ষাৎ নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
আজ বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুকে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে তাঁর বক্রোক্তি, “টাটাকে যারা তাড়িয়েছে, তারপর কোনও শিল্পপতি আসবেন? তাঁরা পাগল নাকি? তাঁরা জানান কোন টাকার বিনিয়োগ হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী আসতেই পারেন। কিন্তু বাস্তবিক কিছু হবে না বলে মনে হয়? কোনও শিল্পপতি বলেছেন পরিস্থিতি খারাপ? কিন্তু কেউ আসেননি।”
এই একই কথা বলছেন বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর আবার বক্তব্য, “আদানিরা বিনিয়োগ করবে, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিনিয়োগ হলে শিল্পমন্ত্রী থাকতেন। এই সাক্ষাতের সঙ্গে বিনিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই। তাহলে প্রকাশ্যে হল না কেন?”
উল্লেখ্য, গতকালের মমতার সঙ্গে বৈঠক শেষে আদানি টুইটে জানান, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা আছে তাঁর। কোথায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ কেমন, সেই বিষয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদানি। গতকালের বৈঠকে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।
আদানি গোষ্ঠী বরাবরই মোদী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সেই গোষ্ঠীর কর্ণধারের সঙ্গে মমতার বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। আর এরই মধ্যে মমতা রাজ্যে ফিরতেই সোজা আদানি চলে এলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
সিঙ্গুর থেকে টাটাকে কার্যত উচ্ছেদ করে বাংলার তখতে এসেছিলেন মমতা। তখন থেকেই মমতার বিষয়ে একটি শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তি ভীষণভাবে প্রকট হয়ে উঠেছিল। রতন টাটা বিভিন্ন সময়ে সেই ভাবমূর্তির উপর ঘৃতাহুতি করে এসেছেন। রাজ্যের তরফে শিল্প টানার জন্য কম চেষ্টা করা হয়নি। বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে। সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন মমতা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিভিন্ন সময়ে মৌ চুক্তিতে সই হলেও শেষ পর্যন্ত বড় কোনও শিল্পের মুখ দেখেননি মমতা।
এবার কি তবে মোদীকে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে নিয়ে এসে, বাংলার সেই শিল্পবিমুখ ভাবমূর্তিই ঘোচাতে চাইছেন মমতা? আর তারই সূচনা কি হয়ে গেল গতকাল মমতা-আদানি বৈঠকের মাধ্যমে?