দিদি-র ডান হাতে রিমোট। বাঁ হাতে মাইকটা ধরা।
রিমোটের বোতাম টিপতেই মঞ্চের ব্যাকড্রপে নীল স্যাটিন কাপড়টা সরে গেল। বেরিয়ে এলো ক্যাম্পেন ব্যানার, -‘দিদিকে বলো’-‘আপনার কোনও সমস্যা বা মতামত থাকলে আমাকে ফোন করুন।’
এর দু’মিনিট আগে দিদি এও জানিয়েছেন, একটা ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। যার নাম, দিদিকেবলো.কম।
হতেই পারে আজ রাত থেকে গোটা শহর-মফস্বল মায় ছেয়ে যাবে এই ক্যাম্পেন হোর্ডিং। কাল সকাল থেকে রেডিও-এফএম চ্যানেলেও শোনা যাবে এর বিজ্ঞাপন। ফেসবুক, গুগল অ্যাডের মাধ্যমে আপনার ডেস্কটপ বা মোবাইলেও পৌঁছে যাবে। বা ঢাউস করে ছাপা হবে সংবাদপত্রে। ইদানীং পেশাদার বিজ্ঞাপন-কৌশলের ভাষায় যাকে বলে ‘বার্স্ট ক্যাম্পেন’। অর্থাৎ এমন ভাবে প্রচার করা, যা জনমনে প্রভাব ফেলতে পারে।
তা যদি নাও বা হয়, তা হলেও সোমবার সকাল থেকে প্রস্তুতির দিকে এ বার নজর দেওয়া যাক। নজরুল মঞ্চে দিদি-র সাংবাদিক বৈঠকের জন্য বিশেষ প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তার আগে দেখা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত একটি পেশাদার সংস্থার ছেলেমেয়েরা। তাঁদের পরনে ডেনিম জিন্স ও কালো টি শার্ট। টি শার্টে ওই পেশাদার সংস্থার নামও লেখা।
দিদি-র সাংবাদিক বৈঠকের পর যে প্রেস নোট সাংবাদিকদের দেওয়া হল, তাও দেখার মতোই। নজরে পড়ার এও বিষয় হল, নতুন ক্যাম্পেন ঘোষণার সময় দিদি যে সব শব্দচয়ন করলেন, অনেকের মনে করছেন তাও বিজ্ঞাপন তথা পেশাদার সংস্থারই লিখে দেওয়া।
তা ভাল! কিন্তু প্রশ্ন হল, গত প্রায় তিন দশকে তৃণমূলের সংস্কৃতিতে এমন কি আগে দেখা গেছে? তবে কি তৃণমূল বদলে গেল? কর্পোরেটাইজেশন হয়ে গেল বাংলার মা-মাটি-মানুষের পার্টির?
সাংবাদিক বৈঠক সেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঠিক এই প্রশ্নটাই দিদিকে করেছিলেন এক সাংবাদিক। জবাবে মমতা অবশ্য বলেন, “না তা কেন, মর্ডানাইজেশন (আধুনিকীকরণ) বলতে পারেন।”
সন্দেহ নেই, পেশাদার সংস্থা ভাড়া করার খরচ লাগে। এতদিন কালীঘাটে দিদি-র বাড়িতে, তৃণমূল ভবনে বা নবান্নের অলিন্দে দিদি-কে সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখেই অনেকে অভ্যস্ত। তুলনায় নজরুল মঞ্চে এ দিনের ব্যবস্থাপনার ফারাকটা চোখ এড়ানোর মতো নয়।
যদিও সাংবাদিক বৈঠকে দিদি এ দিনও বলেন, “আমাদের খুব গরিব পার্টি। বিজেপি-র মতো বড়লোক পার্টি নয়”।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘দিদিকে বলো’ ক্যাম্পেনের নেপথ্যে রয়েছে পেশাদার ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-প্যাক। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের থেকে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা কত ফি নিচ্ছে তা নিয়ে এতদিনে জল্পনায় নানান রঙের পরত লেগেছে। কেউ বলেছেন, চারশ কোটি টাকা, কেউ বা দু’শ কোটি টাকা। এ সব প্রশ্নের জবাবে দিদি অবশ্য আগেই বলেছেন, সবাই যে টাকা নিয়ে কাজ করবে তা নাও তো হতে পারে। অনেকেই কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির জন্য এ সব করে।
সত্যিই কি?