আজকের ‘ধর্মরক্ষক’ শ্রী মহেশ কাশ্যপ

জয় হিন্দ বন্ধুগণ! আজ আরো একবার আপনাদের কাছে Mission Kali নিয়ে এসেছে Dharma Worrior- এর আরো একটি নতুন পর্ব। 

ছত্তিসগড়- এর এক-তৃতীয়াংশ জনবসতি হল আদিবাসী অধ্যুষিত এবং এই সহজ সরল আদিবাসী মানুষ গুলিকে খ্রীষ্ট ধর্মে রূপান্তরিত করার জন্য বিভিন্ন রকমের প্রলোভন দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তরের জেলা মুখ্যালয়, জগদলপুর থেকে ১০ km দূর উমরাবনকালচা গ্রামে বসকারী আমাদের আজকের ‘ধর্মরক্ষক’ শ্রী মহেশ কাশ্যপ ২৫ বছর ধরে এই ধর্মান্তকরণ বন্ধ করার প্রয়াস করে এসেছেন। মহেশ বাবু আমাদের জানিয়েছেন, “এইখান কার সমাজে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ বসবাস করতো। কিন্তু গ্রামের রীতিনীতি ও ঐতিহ্য যেমন ঠাকুরের ওয়াজ প্রভিতি, আমরা সবাই একসাথে, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পালন করতাম। ব্রিটিশরা ২৫০ বছর এবং মুঘলরা তার আগে আরো অনেক বছর ধরে এই দেশে রাজত্ব করে গেছে। কিন্তু বাস্তারের সুরক্ষা সর্বদাই বজায় ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষ দেড় কাছ থেকে জানা যায় যে , মোটামুটিভাবে ৪০ বছর আগে কোনো গির্জা বা কোনো প্রকারের ধর্মান্তরকরণ ছিলোনা এই গ্রামে। যখন মুঘল ও ইংরেজ রাজত্ব কালে এই গুলো ছিলোনা তখন আজ স্বাধীনতার ৭০ বছর পর বিশেষ করে গত ৩০-৪০ বছর এর মধ্যে এমন কি হল যে আমাদের গ্রামবাসীরা ধর্ম পরিবর্তন করছে ? গত ১০-১৫ বছর এর মধ্যে লোহান্ডিগুড়া, বাস্তানারে- এ বসবাসকারী মারিয়া সম্প্রদায়ের লোকেদেরই খ্রীস্টান  মিশনারীরা লক্ষ্য বানিয়েছে। এর কারণ হল এই সমস্ত উপজাতির মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছেন। শিক্ষা এবং স্বাস্থ, এই দুই জিনিসের প্রলোভন দেখিয়ে এই মানুষ গুলিকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য বাধ্য করা হয়ে। আগে গ্রামবাসীরা প্রেতচর্চা ও গ্রামের দেবতার কাছে প্রার্থনা করে রোগ নিরাময় করতেন। কিন্তু এখন খ্রীষ্টান মিশনারীরা বলে, “আমাদের দেবতার কাছে প্রার্থনা করলে তোমরা ঠিক হয়ে যাবে। এইভাবেই আদিবাসীরা ধর্মান্তরিত হচ্ছেন।”

শ্রী মহেশ কাশ্যপ- এর নিরলস প্রয়াস- এর প্রমান আমরা পেয়েছি জগদলপুরে নিকটবর্তী একটি গ্রাম এরমার- এ, যেখানে উনি একটিও গির্জা তৈরী হতে দেননি। এবং এর সাথেই খ্রীষ্ঠান মিশনারীর কাজকর্মও সেই গ্রামে সম্পূনভাবে নিষিদ্ধ করে দেন। মহেশবাবু আরও বলেছেন, “আমাদের গ্রামে Kotowar Patel বলে এক ধার্মিক আদিবাসী বসবাস করতেন। মিশনারী তাঁকে বলে, “আপনাদের গ্রামে আমরা পুকুর বানিয়েছি আমরা এবং আমরা এই ধরণের উন্নয়ন মূলক কাজ করি।” জগদলপুরের আরাবলে ‘বাস্তার সেবা মন্ডল’ ও এবং কামার গ্রামে ‘দীনবন্ধু কুটির উদ্যোগ’ ছিল এই ধরনের কাজকর্ম গুলির কেন্দ্রস্থল। গ্রামবাসীদের ওরা বলেছিলো যে ওরা ওদের কেন্দ্রে গিয়ে গ্রামবাসুদের নিজেদের কাজ দেখতে চায়।  এছাড়াও গ্রামবাসীদের দেখিয়ে ছিল, ওদের মিশনারী স্কুল ‘নির্মল বিদ্যালয়’, তাদের চিকিৎসালয় এবং তাদের তৈরী নিকটবর্তী একটি বাঁধ। তারা গ্রামবাসীদের বলেছিলো, “আমাদের এই ধরণের কাজ হয়ে। আপনারা আমাদের আপনাদের গ্রামে জায়গা দিন, আপনাদের গ্রামেও আমরা বানাবো।” আমাদের গ্রামবাসীরা এমনকি প্যাটেল ও পূজারীর মতো সম্মানিত ব্যাক্তিরাও ওদের ফাঁদে পরে গ্রামের জমি মিশনারীদের দান করতে রাজি হয়ে যান। তখন আমি অনেক জায়গাতে শুনে ছিলাম যে মিশিনারীরা এরকম করে। তাই আমি   এর বিরিধীতা করি এবং বলি যে যদি এখানে গির্জার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বানানো হয়, তাহলে তাদের কেটে ফেলা হবে।

আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে যখন আমার স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে, তখন আমি পঞ্চায়েত আইন গুলি পড়ি। তখন জানতে পারি পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজের গ্রামের সংস্কৃতি ও আচারিক ঐতিহ্য বজায় রাখার ক্ষমতা আছে। আমি কালচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর অধীনে বসবাস করি। ওখানে একজন যাজক সেবা প্রদানের নামে বসবাস করতেন। তিনি যদিও ধর্মান্তরকরণ-এ যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি যে তিনি গ্রামে চাল বিক্রি করতেন। তাই জন্য একদিন আমার ওনাকে ডাকি এবং বলি যে পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত একটি বিল পাস্ করেছেন। তাতে বলা আছে অন্য ধর্মের কোন ব্যাক্তির দ্বারা কোনো ধর্ম উপদেশ, ধর্ম সংস্কার বা ধর্মের শিক্ষা দেওয়া পূর্ণপুপে প্রতিবন্ধিত করা হল এই গ্রামে এবং কোন রকম ধার্মিক নির্মাণও হবেনা।”

সুখমতি বলে ওই গ্রামের এক মহিলা বলেছেন, “আমি যমজ বাচ্চার জন্ম দিয়ে ছিলাম।  তখন আমি খু বা দুর্বল হয়ে পড়ি। তাই উপজাতীয় পদ্ধতিতে আমার চিকিৎসা হয়ে, কিন্তু তাতে আমি আরো দুর্বল হয়ে পড়ি। তখন আমার বাবা পরামর্শ দেন যে আমাদের খ্রীষ্টান চিকিৎসালয়ে যাওয়া উচিত, তাই তার কথা অন্যায় আমরা সেই চিকিৎসালয়ে যাই এবং ওনারাই আমাকে সারিয়ে তোলেন। ওনার স্বামী পাণ্ডরাম বাঘেল বলেন, “আমার স্ত্রী সেরে ওঠার পর ওনারা আমাকে বলেন খ্রীষ্ট ধর্মে রূপান্তরিত হতে, তাহলে আমার জীবন শিল্লী হবে, নাহলে আমার জীবনে বিপদ আসবে। তাই আমরা হয়েও যাই।  কিন্তু তারপর গ্রামবাসীদের কথাতে আমরা আবার আমাদের ধর্মেই ফায়ার আসি।”

মহেশ বাবু আমাদের জানান, “যেসব গ্রামবাসী ধর্মান্তরিত হয়েছেন তাদের সাথে কথা বলে আবার পূর্ব ধর্মে ফায়ার আসার জন্য আমরা রাজি করাই। আমরা এর জন্য কোনো বড়ো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অতিরঞ্জিত করিনা ধারণ যারা ফায়ার আসছেন তারা আমাদের পরিবারের, এই সমাজের, এই গ্রামেরই সদস্য। সেই জন্য আমাদের ঐতিহ্য অনুসারে, আমরা দেবী মা-এর আরাধনা করি ও ওই ব্যাক্তিদের নারকেল ও কিছু জিনিসপত্র দেন করি। তারপর গ্রামের প্রধানরা সেইসব ব্যাক্তির সুদ্ধিকরণ করেন। তারপর, আমরা ওদের মাথায় তিলক কাটি এবং যদি সম্ভব হয়ে তাহলে তাদের কিছু উপহার দেন করি ও শেষে তাদের আমাদের ধর্মে পুনরায় ফিরিয়ে আনি।”

মানগাতা রাম নামে এক গ্রামবাসী আমাদের জানিয়েছেন, “একজন যাজক বাইরে থেকে এই গ্রামে আসে এবং পাণ্ড বলে একজনকে তার স্ত্রী-এর চিকিৎসা মিশনারী চিকিৎসালয় করানোর জন্য রাজি করায় এবং তারপর তাদের ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করে। আমরা এই কথা ওদের প্রতিবেশীর কাছ থেকে জানতে পারি এবং গ্রাম প্রধানের কাছে যাই এবং বলি পাণ্ড-র পরিবারকে আমাদের ধর্মে পুনরায় ফায়ার আস্তে বলার জন্য, কারণ আমরা সবাই একই ধর্মের।

          ধানীরাম বাঘেল নামে ওই গ্রামে বসবাসকারী এক গ্রামবাসী বলেছেন, “আমরা আদিবাসী প্রজাতির মানুষ। যদি এখানে আদিবাসীদের মধ্যে কোনো শারীরিক নির্যাতন হয়ে তাহলে যতক্ষণ না আমরা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে রিপোর্ট লেখাবো ততক্ষন পুলিশ এখানে আসবেনা। কিন্তু যদি খ্ৰীষ্টানদের সাথে কোনো ঝামেলা হয়ে তখন পুরো পুলিশ প্রশাসন কয়েক মূহুর্তের মধ্যে চলে আসে এবং এসে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।”

মহেশবাবু আরো বলেছেন, “এই গ্রামে একটা মেলা হতো। সেই মেলাতে খ্রীষ্টান মিশনারীরা এসে পরচা বিলি করতো। ওরা আমাদের ‘dashera’-তে ও পরচা বিলি করতো। বছরে একবার গ্রামে ওদের একটি দল বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসত। ওরা গ্রামের রাস্তাঘাটে গান বাজনা করতো এবং লোকেদের খ্রীষ্ট ধর্ম নিয়ে জ্ঞান দিত। লোকেরা তাদের কাছে গেলে তাদের পরচা বিলি করতো, এমনকি কিছু মানুষকে বলতো, “যীশুর উপদেশ এসেছে। আপনি ৫ টাকা দান  করুন।” গ্রামবাসীরা অমনোযোগী হয়ে নিয়ে নিতো ওই কাগজগুলি। এইভাবে ওই মিশনারী গুলি নিজেদের কাজকর্ম চালাত। কিন্তু এখন আমাদের গ্রামবাসীরা এমনই সচেতন হয়ে গেছেন যে কোনো বাইরের লোক এখানে আর ঢুকতে পারেনা এবং রাস্তাঘাট, মেলা, বাজার সব জায়গাতে সমস্ত মিশনারী কাজকর্ম বন্ধ হয়েছে। তবে ওরা এখনো গোপনে বিভিন্ন কাজকর্ম চালায়। তবে আমাদের এখানে এই সমস্ত কাজ এখন বন্ধ হয়েছে।”

মহেশ কাশ্যপের এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, ধর্মরক্ষার জন্য আমাদের কোনো নির্দিষ্ট সময় বা মানদণ্ডের প্রয়োজন হয়না। আমরা আমাদের নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী ধর্ম রক্ষা করতেই পারি। আমাদের শুধু প্রয়োজন হলো সাহস।

এর সাথেই আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম, আমি আমাদের পরবর্তী ধর্মরক্ষক-এর সাথে আবার আপনাদের সাক্ষাৎ করবো পরের পর্বে।

জয় হিন্দ !    

DHARMA WARRIOR- MAHESH KASHYA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.