দাপট বাড়ছে ডেঙ্গুর, সাতদিনে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৪৭, কলকাতাতেই ২৭৩

ক্রমেই খারাপ হচ্ছে রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। দিন কয়েক আগে অজানা জ্বরে কাঁপছিল গোটা বাংলা। নমুনা পরীক্ষা শুরু হতেই আর পাঁচটা রোগের মধ্যে ধরা পড়ছিল ডেঙ্গুও। দিনকে দিন বাড়ছে এই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

চলতি বছর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯১৬ জন। গত বছর এই একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৯৪ জন।

গত সাতদিনেই রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৭ জন। গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫৬ জন।

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, কলকাতায় এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৩ জন। মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৩৬৪ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত ২৫৫ জন। মোট আক্রান্ত ১ হাজার ১৬৭।

হাওড়ায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ জন। মোট আক্রান্ত ৪০১ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫০। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৫ জন। দার্জিলিংয়ে সাতদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। মোট আক্রান্ত ১৯৯ জন।

শিলিগুড়ির অবস্থাও বেশ শোচনীয়। পাড়ায় পাড়ায় বেড়েছে মশার দাপট। অবস্থা বেশ খারাপ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাদের তথ্য বলছে, বাগডোগরা, নকশালবাড়িতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সুকনাতেও জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, জায়গায় জায়গায় জমা জল বিপদ বাড়াচ্ছে। পুরসভার ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই সরকার চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। তার দায় তো মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। কারণ উনিই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কোথাও দেখা যায়নি স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছে।”

শিলিগুড়ির ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে ভাল নয় তা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাও। তৃণমূল নেতা ভোলা গুহের কথায়, “কোনও কোনও জায়গায়, কিছু কিছু জায়গায় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে। আমরা যেহেতু মানুষের জন্য কাজ করি, সে দায় আমাদেরও কিছুটা থেকেই যায়।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য বলছেন তাঁরা সজাগ আছেন। দার্জিলিংয়ের সিএমওএইচ প্রলয় আচার্যের কথায়, “যাতে জল জমে মশার লার্ভা না জন্মায় তার জন্য সমস্ত কাজ করা হচ্ছে।” ধূপগুড়িতেও বাড়ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। ধূপগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার ডেঙ্গু ধরা পরে শনিবার। এর আগে এই ওয়ার্ডেই এক যুবতীর শরীরে ডেঙ্গুর উপস্থিতি মেলে।

উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গে ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, “একটু সতর্ক থাকুন। বাড়ির পাশে সামান্য জলও জমতে দেবেন না। কারণ জমা জল পেলেই ডেঙ্গুর মশা জন্মায়। জ্বর হলেই নমুনা পরীক্ষা করান। চার পাঁচদিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত না করা গেলে রোগীর আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।”

অর্থাৎ মানুষের সর্বনাশ করেই মশার পৌষমাস কাটছে। উৎসবের বাংলায় করোনার মাথাচাড়া তো রয়েছেই। একই সঙ্গে আবার গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার ভূমিকায় ডেঙ্গু। এখনও সতর্ক না হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.