স্রেফ ২৫ জন নয়, কমপক্ষে ৫০০ জনের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। স্কুলে গ্রুপ ‘ডি’ কর্মী নিয়োগ মামলায় এমনই দাবি করলেন মামলাকারীরা। ওই ৫০০ জনের নাম এবং ঠিকানা-সহ তালিকা জমা দিতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে নিয়োগে যে অনিয়মের ঘিরে অভিযোগ উঠছে, তাতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নামও জড়িয়ে গিয়েছে।
বুধবার সেই মামলার শুনানিতে স্কুল শিক্ষা কমিশনের (এসএসসি) তরফে দাবি করা হয়েছিল, ২০১৯ সালের ৪ মে’র নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও সুপারিশ করা হয়নি। ফলে যে ২৫ জনকে ধরে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে, তা ভুয়ো। যদিও বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়, কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই ওই ২৫ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তা নিয়ে রীতিমতো কমিশন এবং পর্ষদের মধ্যে দোষারোপের পালা চলতে থাকে।
তারইমধ্যে আগামী সোমবারের মধ্যে পর্ষদকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাতে বাড়তি একদিন চায় পর্ষদ। যদিও তাতে রীতিমতো কড়া ভাষায় বিচারপতি বলেন, ‘সমাজ দুর্নীতিতে ভরে গেলে বাড়তি সময় বরাদ্দ করা যায় না।’ কেউ অন্যায় করেনি বলা হচ্ছে। প্রত্যেকে নিজেদের সৎ বলে দাবি করছেন। অথচ দুর্নীতিতে দেশ ভরে যাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাথমিকভাবে কমিশন যে হলফনামা পেশ করেছিল, তা গ্রহণ করেনি হাইকোর্ট। তবে সংশোধিত হলফনামা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের যে সুপারিশ করেছিল রাজ্য সরকার, তাতে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের পর প্যানেল তৈরি করে দেয় কমিশন। অভিযোগ ওঠে, ২০১৯ সালে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। ২৫ জনকে নিয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা হয় মামলা। সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার কমিশনের সচিবকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। সেইমতো বুধবার হাইকোর্টে হাজিরা দিতে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন কমিশনের সচিব। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, দুপুর তিনটের মধ্যে কমিশনকে আদালতে যাবতীয় তথ্য পেশ করতে হবে। দেওয়া হবে না কোনও বাড়তি সময়। যদি সেটা না হয়, তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সিআইএসএফ অফিস ঘিরে থাকবে।
পরে হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) তরফে জানানো হয়েছে, যে ২৫ জনের নিয়োগ তুলে ধরে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের নামের কোনও সুপারিশ করেনি কমিশন। ২০১৯ সালের মে’র পর নিয়োগ নিয়ে কোনও সুপারিশ করা হয়নি। যদিও হাইকোর্টের তরফে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন করা হয়, ওই ২৫ জনের মেমো নম্বরে অসংগতি আছে। সেটা কীভাবে সম্ভব? কমিশনের তরফে দাবি করা হয়, ওই ২৫ জনের নিয়োগ ভুয়ো। তাঁদের নিয়োগ করেনি কমিশন। অর্থাৎ কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, কীভাবে ওই ২৫ জন চাকরি পেয়েছেন, তা নিয়ে কমিশনের কাছেও কোনও তথ্য নেই। সেই প্রেক্ষিতে ওই ২৫ জনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারইমধ্যে রাজ্যের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে তদন্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়।