পাক সেনার মাথায় গুলি করে মেরেছিলেন, প্রোমোশন হচ্ছে ট্রাফিক সামলানো সতপালের

বছর ২০ আগে এমন জীবন ছিল না তাঁর। তখন তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনার সদস্য। কার্গিল যুদ্ধে পাক সেনার আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন সেপাই সতপাল সিং। তাঁর পরাক্রমেরই নিহত হয় পাক সেনার ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান সহ নর্দার্ন লাইট ইনফ্যানট্রি বাহিনীর চারজন। তাই বীরত্বের জন্য পান বীর চক্র। কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক ৪৬ বছরের সেই সতপাল সিং আজ পুলিশ কনস্টেবল। যুদ্ধের ২০ বছর পেরিয়ে গর্বের স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে পাওনা মিলল এটুকুই!

এই পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে সতপাল সিং-য়ের ডবল প্রোমোশনের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। এরপর তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টরের পদে থাকবেন।

পঞ্জাবের সাংগ্রুর জেলার ভবানীগড়। সেখানেই ব্যস্ত রাস্তার ট্রাফিক সামলান হেড কনস্টেবল সতপাল সিং। কিন্তু আর পাঁচজন পুলিশকর্মীর থেকে যেন অনেকখানি আলাদা। উর্দির বাঁ দিকে বুকের কাছে লাগানো রয়েছে তাঁর মেডেল রিব্যান্ড। সেখানেই মিটমিট করছে বীর চক্র।

সতপালের কথায়, ‘আমাদের ট্রুপ তখন পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। আমাদের ধ্বনি ‘জো বোলে সো নিহাল, সত শ্রী অকাল’ তুলে আমরা পাক সেনার আক্রমণ প্রতিহত করি। প্রথম আমি আমার মেশিনগান থেকে চারটে বুলেট ছুঁড়ি। কিন্তু ওরা থামছিল না। তখন জল গড়ায় হাতাহাতির পর্যায়। মেশিনগানের বাট দিয়ে আমি এরপর একজন লম্বা, ট্র্যাকস্যুট পরা সেনার মাথায় আঘাত করি। মূহূর্তের মধ্যেই মৃত্যু হয় তার। তখনও জানতাম না নিহত ব্যক্তি ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান। পরে রেডিওতে খবর শুনে তার পরিচয় জানলাম।’

এরপরেই ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া সতপালের বীরত্বের জন্য তাঁর নাম পরমবীর চক্রের জন্য সুপারিশ করেন। সতপালকে বীর চক্র সম্মান দেয় ভারত সরকার। ২০০৯ সালে অবসর নেন সতপাল। সেই বছরই পঞ্জাব পুলিশে যোগ দেন তিনি। কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, ‘আমি হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু বীর চক্রের জন্য কোনও যোগ্য সম্মান পাইনি। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কোটায় পুলিশের চাকরি পাই। এখন আমি হেড কনস্টেবল। যাই হোক, ভগবান দয়াবান। আমি বেঁচে আছি এই অনেক। শুধু খারাপ লাগে আমার বেকার শিক্ষিত ছেলের জন্য। স্নাতকোত্তর পাশ করেও চাকরি জোটেনি ওঁর।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.