দীপাবলির আগের রাতে কেন্দ্র উপহার দিয়েছে দেশবাসীকে। কমানো হয়েছে পেট্রো পণ্যের উপর কেন্দ্রের শুল্ক। কেন্দ্রের দেখানো পথে হেঁটে একাধিক রাজ্য নিজেদের ভ্যাট কমিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু এখনও হয়নি। রাজ্য সরকারের বর্তমান যা অবস্থান, তাতে জ্বালানির উপর শুল্ক যে কমানো হতে পারে, এমনটাও কোনও ইঙ্গিত আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। আর এরই মধ্যে পেট্রোল, ডিজেলের উপর কর কমানোর আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠালেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী লিখেছেন, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি আমজনতার দুর্দশার কথা ভেবে ইতিমধ্যেই পেট্রোপণ্যের উপর রাজ্যের শুল্ক কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই বাজারে যাতে সাধারণ নাগরিকরা কিছু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারেন, সেই কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সরব হয়েছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে অধীর বাবু মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, “আপনি নিজেও বার বার বিভিন্ন মাধ্যমে পেট্রোল ডিজেলের চড়া দামের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কংক্রিট সিদ্ধান্ত আপনি নেননি, যাতে পেট্রোপণ্যের দামের উপর কিছুটা লাগাম পড়ানো যায়।” কেন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মতো পশ্চিমবঙ্গেও পেট্রোল ডিজেলের শুল্ক কমানো হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন তোলেন অধীর চৌধুরী। রাজ্যবাসী সব কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা।
মুখ্যমন্ত্রীকে বেশ কড়া ভাষায় অধীর চৌধুরী লিখেছেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে, “আপনি দয়া করে এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করুন এবং রাজ্যের শুল্কের উপর কাটছাঁট করুন। এতে পশ্চিমবঙ্গেও পেট্রোলিয়াম জাত পণ্যের উপর দাম আরও কিছুটা কমবে। এর ফলে পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সামগ্রিকভাবে কিছুটা লাগাম পড়বে।” না হলে, শুধুমাত্র নিছক লোক দেখানো এবং ফাঁপা স্লোগান দিলে চলবে না। বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারের অবশ্য এ বিষয়ে নিজস্ব ‘সাফাই’ রয়েছে। সরকার পক্ষের দাবি তারা কেন্দ্রের তুলনায় কম শুল্ক পায়, তাই কেন্দ্রের উচিত আগে কর পরিকাঠামো ঠিক করা। কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার এক টাকা ছাড়া দিয়েছিল জ্বালানি তেলের উপর। দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী সেই কথা আবারও স্মরণ করিয়ে বলেছিলেন, ‘এক টাকা করে দিই প্রতি লিটারে কনসেশন।’ আর তার পর কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলার মতো জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা আর কোথাও নেই।”
তাঁর বক্তব্য ছিল, “সমস্যা হচ্ছে এত পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে… কৃষকরা চাষ করবে কীভাবে! ডিজেলে তো চাষ হয়!” তিনি আরও যোগ করেন, “সমস্যা হচ্ছে এত পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। চার লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র সরকার তুলেছে পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসে। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে অন্য রাজ্যে। আমাদের তো দেয়ই না। টিকাই দেয়না তো টাকা দেবে…”
তার পর মুখ্যমন্ত্রীর সংযুক্তি, “বড় বড় ফট্ ফট্ ফট্ ফট্ করে। আমরাও এক টাকা করে দিই প্রতি লিটারে কনসেশন। স্টেট গর্ভমেন্ট থেকে। কোথায় পাব? তা সত্ত্বেও করি।”
2021-11-13