আজ সকালেই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। খোলা ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয়েছে দমদমের বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় অটোচালক রঞ্জন সাহার। দেহ উদ্ধারের পর, তা পাঠানো হয়েছিল ময়নাতদন্তের জন্য। আজ সন্ধ্যায় মৃত অটোচালক রঞ্জন সাহার দেহ এসে পৌঁছায় বেদিয়াপাড়ার বাড়িতে।
পরিবারের মূল রোজগেরে বলতে রঞ্জনই ছিলেন। দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড বেদিয়াপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকত রঞ্জন সাহা। তিন ভাইয়ের পরিবার এবং মায়ের সঙ্গে একইসঙ্গে থাকতেন রঞ্জনের পরিবার। চার মাস আগেই পিতৃবিয়োগ হয়েছিল রঞ্জন সাহার। তারপর থেকেই পরিবারের সব দায় দায়িত্ব এসে পড়েছিল বড় ছেল রঞ্জনের উপরেই। গতকাল পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সেভেন ট্যাঙ্কের কাছে ম্যানহোল খোলা থাকায়, তাতে উপুড় হয়ে পড়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রঞ্জনকে। আজ সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা পৌরনিগমের বিরুদ্ধে উদাসীনতা এবং গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। কেন ফুটপাতের মধ্যে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকবে? যদি খোলা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিপদ সংকেতের চিহ্ন দেওয়া হল না কেন? এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর পুষ্পালি সিনহার সাফাই, বস্তিবাসীরা ওই ম্যানহোল শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করত। রঞ্জন সাহা মেজ ভাইয়ের বৌ অচলা সাহা দত্ত অবশ্য এই ধরনের দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যদি তেমনই হয়, তাহলে কেন শৌচাগার বানিয়ে দিলেন না?
রঞ্জন সাহা ৩০-এ বাস স্ট্যান্ড থেকে সিঁথির মোড় রুটের অটো চালাতেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অটো চালাতেন। রঞ্জনের এই হঠাৎ মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বেদিয়াপাড়ায়। রঞ্জনের দুই ছেলে। বড় ছেলে পার্থ সাহা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শ্রীশচন্দ্র কলেজের। ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আর স্বামীর এই হঠাৎ মৃত্যুতে কীভাবে কী সামলাবেন, তা ভেবেই কূল কিনারা পাচ্ছেন না স্ত্রী সোমা সাহা। উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণেই রঞ্জন সাহার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
যদিও কেন খোলা ছিল ম্যানহোল? পুরসবার নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে পুর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য তারক সিংয়ের দাবি, এটা খুন অথবা আত্মহত্যা। কারণ মৃত ব্যক্তির মুখ নিচের দিকে ছিল।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এটাই হচ্ছে। পুর নির্বাচন বন্ধ। কো অর্ডিনেটর, কাউন্সিলররা ব্যস্ত অবৈধ নির্মাণ নিয়ে। বিভিন্ন নতুন প্রোমোটিংয়ে তাঁরা ব্যস্ত। কিন্তু মানুষের ন্যূনতম চাহিদা, স্বাস্থ্য, জল, পয়ঃপ্রমালী নিষ্কাশন সমস্যা তাঁরা মেটাতে পারেননি। এটাই সার্বিক চিত্র। যদি ম্যানহোল খুলে দিয়ে চলে যায়। সেটা দেখার দায়িত্ব কার? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা খবর রাখেন না।” তিনি আরও যোগ করেন, কোথাও বিদ্যুতের খোলা তারে তড়িদাহত হয়ে শিশু মারা যাচ্ছে, নির্বাচিত সাংসদ বলছেন, কেন বাইরে এসেছিল?”