সম্প্রতি একের পর এক জঙ্গি হানায় ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কাশ্মীর পরিস্থিতি। জঙ্গি হানায় বলি হয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। বারবার জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই আক্রমণ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যথেষ্ঠ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যেই কাশ্মীরে ৫ হাজার ৫০০ জন জওয়ানের দল পাঠাচ্ছে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফ। কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, চলতি বছরে কাশ্মীরে ১৩৮ জন জঙ্গিকে খতম করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর পাশাপাশি ৫৫ জন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
বছরের শুরু থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় ৭০০ জনকে মোতায়েন করেছিল নিরাপত্তা বাহিনীগুলি। এরপর থেকে কাশ্মীরে জঙ্গিদের আস্ফালন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই গত মাসেই ২৫ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করেছে সিআরপিএফ। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে এক সিআরপিএফ আধিকারিক জানিয়েছেন, “কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই সিআরপিএফের পাঁচটি অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার কথা ভাবা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই কাশ্মীরে এই বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এর আগে কাশ্মীরে ২৫ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো হয়েছে।”
গত মাসেই কাশ্মীরে এক কেমিস্ট, দুই শিক্ষক এবং রাস্তার এক হকারকে পরপর হত্যা করে জঙ্গিরা। সোমবার, বান্দিপুর জেলার ইব্রাহিম খান নামের এক সেলসম্যানকে হত্যা করে জঙ্গিরা। রবিবার আরও এক কাশ্মীরি নাগরিক তৌসিফ আহমেদকে শ্রীনগরের বাতামালু এলাকায় খুন করে জঙ্গিরা। নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে নজরদারি জোরদার করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়োজিত কর্মীরা প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার গাড়িতে পর্যটক সহ ১৫ হাজার জন লোককে পরীক্ষা করছে। জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈয়বা এবং ইউনাইটেড লিবারেশনস ফ্রন্ট উপত্যকায় যাবতীয় জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে। সম্প্রতি জারি করা বিবৃতিতে জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশনস ফ্রন্ট সব অকাশ্মীরি নাগরিকদের উপত্যকা থেকে চলে যেতে বলেছেন। চলে না গেলে ফল খারাপ হবে এই হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, একের পর এক জঙ্গি হানায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই তিন দিনের কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর সেটাই ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম কাশ্মীর সফর। কাশ্মীরে পৌঁছেই একের পর এক জঙ্গি হানা, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আস্ফালন, জঙ্গি হানায় নাগরিকদের মৃত্যু, সীমান্তবর্তী এলাকায় বেআইনি অনুপ্রবেশ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পৌরহিত্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কাশ্মীরে বিশাল সংখ্যায় মোতায়েন করা নিরপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও কেন উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। কাশ্মীরিদের নাগরিকদের মন জয়ে অমিত জানিয়েছিলেন এতদিন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছিল কাশ্মীর কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।