ডিজেলের চড়া দাম, ডিপোয় সারি সারি আটকে সিএসটিসি-র বাস

জেলের দাম আয়ত্বের বাইরে। ফলে বিভিন্ন ডিপোয় সারি সারি আটকে সিএসটিসি-র বাস। একদিকে কমছে টিকিট-বিক্রি বাবদ আয়। কর্মীদের বসিয়ে রেখে তাঁদের বেতন গুনতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ভরতুকির পরিমাণ। যাত্রীভোগান্তি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে সংস্থার সার্বিক অনিশ্চয়তা।

একটি বাস চালিয়ে প্রতিদিন যে টাকা আয় হচ্ছে, সেই বাস চালাতে গেলে জ্বালানি বাবদ যে টাকা ব্যয় হচ্ছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারি বাস কম বেরোচ্ছে ডিপো থেকেও। ক্যালকাটা স্টেট ট্রান্সপোর্ট এমপ্লইজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত এই প্রতিবেদককে এ কথা জানিয়ে বলেন, “একটি ট্যাঙ্কারে তেল থাকে ১২০০০ লিটার। যার দাম দেড়-দুই বছর আগে ছিল আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা। সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ টাকা। এই দাম আগে মেটাতে সয় আইওসি-কে। এত দাম দিয়ে তেল কেনা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই ডিপোগুলোয় গাড়ি বসে আছে।”

একটা ডিপোতেই এক ট্যাঙ্কার তেলের খরচ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। কিন্তু বাস চালিয়ে সেই আয় হচ্ছে না। সিএসটিসি-র মোট বাস প্রায় সাড়ে ন’শো। এর মধ্যে তিনশ’র ওপর এ সি বাস। ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা প্রায় ৮০। হিসাব বলছে, আগে ৫০০ থেকে ৫৫০ বাস প্রথম ট্রিপে নামাত। তারপর ৩৫০ বাস সেকেন্ড ট্রিপে নামাত।

রামপ্রসাদবাবুর হিসাবে, “৬০ ট্যাঙ্কার ডিজেল হলে হয়ত ৬৫ শতাংশ বাস চালানো যেত। এখন ফার্স্ট ট্রিপে বড়জোর ৪০০ বাস বার হয়। সেকেন্ড ট্রিপে চলছে আড়াইশ মত। হাসপাতালের কর্মীদের যাতায়তের জন্য গোটা ৫০ বাস চালানো হত। সোমবার থেকে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৩-৪টে ডিপো থেকে তো গাড়িই বার হচ্ছে না।“ আগে সিএসটিসি’র সোম থেকে শুক্র আয় হত ২৮-৩০ লাখ টাকা। এখন কমে হচ্ছে ১৪-১৫ লাখ টাকা। শনি ও রবিবার সেটা ৬ লাখ টাকা। ফলে এখন খরচ বাড়ছে। সেই অনুপাতে আয় নেই।

সিএসটিসি-র স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীসংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ২,২৫০ ও ৯০০। এদের বেতন ও দৈনিক-বাবদ বরাদ্দ হচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর ওপর রয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকার পেনশন। সব মিলিয়ে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রির অবস্থা। স্থায়ী কর্মীদের গড় বয়স প্রায় ৫৭ বছর। একটা বড় অংশের বছর বছর ধরে বসে থেকে কাজ করার মানসিকতাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বছর তিনের মধ্যে এঁদের একটা বড় অংশ অবসর নেবেন। যেটুকু বাস চলছে, চালক-কন্ডাক্টরের একটা বড় অংশ ঠিকায় কাজ করছেন। মাসে হাতে পান মাথাপিছু ১০ হাজার টাকারও কম। তাঁরা স্থায়ীকরণের দাবি করছেন।

রামপ্রসাদবাবু জানান, “২০০৯ সালে রঞ্জিত কুন্ডু পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন সিএসটিসি-র ২৭৬ জন অস্থায়ীকে স্থায়ী করা হয়েছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কাউকে স্থায়ী করা হয়নি। করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের ২-৩ জন কাজ পেলেও মৃত অন্য কর্মীদের পরিবারের কেউ কাজ পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অস্থায়ীদের পর্যায়ক্রমে স্থায়ীকরণ এবং মৃত কর্মীদের পরিবারের কাউকে কাজ দেওয়ার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.