গতকালই গ্লাসগোয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ -এ কার্বন নির্গমন মুক্ত পৃথিবী গড়ার পথে এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতকে কার্বন মুক্ত দেশ করা হবে বলে সাহসী অঙ্গীকার করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বর্তমান জলবায়ু সঙ্কটের পরিস্থিতির দায় যে অনেকটাই উন্নত দেশগুলির উপরই বর্তায়, তাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন নমো। আর প্রধানমন্ত্রীর ওই সাহসী পদক্ষেপের জন্য তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। উন্নত দেশগুলির থেকে বিশ্ব জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় যে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তা যথেষ্টই সঙ্গত বলে মনে করছেন তাঁরা।
কাউন্সিল অন এনার্জি, এনভার্নমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অরুণাভা ঘোষ যত দ্রুত সম্ভব ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় বিনিয়োগের যে দাবি ভারত করেছে তাতে সমর্থন জানিয়েছেন। ভারতের তরফে বলা হয়েছে শুধু জলবায়ু সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পর্যবেক্ষণ করলেই চলবে না, জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থও দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারত আবারও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার ডাক দিয়েছে। আমরা কীভাবে বসবাস করব তা ঠিক করতে না পারলে, আমরা যে গ্রহে বাস করি তা কোনওভাবেই ঠিক করতে পারব না। একইসঙ্গে কার্বন নির্গমন মুক্ত ভারতের যে সাহসী প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেন তিনি।
ক্লাইমেট ট্রেন্ডসের ডিরেক্টর তথা বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আরতি খোসলা জানিয়েছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন মুক্ত ভারত গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তিনি বেঁধে দিয়েছেন, তাতে গোটা বিশ্বে এক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গতকাল গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল এটি। এর পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির আধার তৈরির যে প্রতিশ্রুতি নমো দিয়েছেন, তা হিসেব মতো দেখলে বর্তমানে কয়লা দ্বারা উৎপাদিত শক্তির আধারের দ্বিগুণেরও বেশি। আর এর জন্য দ্রুত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদন ক্ষেত্রে রূপান্তরের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি হওয়া উচিত। তবে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলেই মত তাঁর।
আরতি খোসলা আরও জানিয়েছেন, নতুন এই শক্তির আধার তৈরি করতে, বর্তমানে প্রচলিত শক্তির আধারের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করাটা হবে একটি মৌলিক দায়িত্ব। আগামী দিয়ে যে কার্বন নির্গমন মুক্ত ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাতে সৌর ও বায়ু শক্তি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন ক্লাইমেট ট্রেন্ডসের ডিরেক্টর।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছিলেন, এখন থেকে শুরু করে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ কোটি টন কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনবে ভারত। একইসঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট ‘নন ফসিল’ শক্তির আধার হিসেবে ভারতকে গড়ে তোলা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আর এই দুই পদক্ষেপই এক ব্যাপক এবং যুগান্তকারী পরিবর্তনের আশ্বাস হিসেবে দেখছেন ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় মাথুর।