অসুস্থতা দেখিয়ে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন না তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান।

তিনি গুরুতর অসুস্থ। অন্তত, এমনটাই জানিয়ে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন না তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে মঙ্গলবার তাঁকে তলব করা হলেও এদিন সিবিআইয়ের হলদিয়া সিপিটি গেস্টহাউসে হাজিরা দিলেন না সুফিয়ান। এদিন, তাঁর আইনজীবী উপস্থিত থেকে একটি পিটিশন জমা দেন।

সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ এদিন সুফিয়ানকে ডেকে পাঠানো হয়। সঙ্গে আরও ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু, সুফিয়ান এদিন আসেননি। তাঁর আইনজীবী স্বপন কুমার অধিকারী তৃণমূল নেতার অসুস্থতার সার্টিফিকেট-সহ  একটি লিখিত পিটিশন জমা দেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এক মাস যাবত্‍ সুফিয়ানকে বিশ্রাম করার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিত্‍সক। আচমকা সুফিয়ানের এই অসুস্থতার ঘটনা নজর এড়ায়নি সংশ্লিষ্ট মহলের।

আগেই নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় আগেই সুফিয়ানের জামাই-সহ ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আগেই ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটে নাম ছিল শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের জামাই শেখ বায়তুল ইসলাম নন্দীগ্রামের দুই নম্বর অঞ্চলের প্রধান। বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনে বায়তুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তিনি ছাড়াও আরও ৯জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

ভোট পরবরর্তী হিংসা তদন্তে শুক্রবারই আরও একটি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি হত্যা মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে সেই চার্জশিটে নাম ছিল। লক্ষ্যণীয়ভাবে, এই মামলা থেকে কার্যত একরকম মুছে যায় তৃণমূল নেতা তথা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য় এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের নাম। এই ‘বাদটুকু’ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। উঠেছে নানা প্রশ্নও। কিন্তু, সব ছাপিয়ে ফের তৃণমূল নেতাকে তলবের ঘটনায় কপালে ভাঁজ রাজনৈতিক মহলের একাংশের। একইসঙ্গে সুফিয়ানের হাজিরা না দেওয়ায় আরও জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। ওয়াকিবহাল  মহলের একাংশের অনুমান, জিজ্ঞাসাবাদের দায় এড়াতেই অসুস্থতার সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতার পক্ষ থেকে।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি সমর্থক দেবব্রত মাইতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই খুনের কাণ্ডে নাম জড়ায় সুফিয়ানেরও। নিহত দেবব্রতের পরিবার মানবাধিকার কমিশনের কাছে তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগও দায়ের করেন।

খোদ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় স্পষ্টতই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘অপরাধীদের প্রত্যককে খুঁজে বের করা হবে।’ এমনকী, বিজেপির তরফে অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় তৃণমূলেরই প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সিবিআই। এমনকী সুফিয়ান-সহ আরও দুই তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়।

টানা সাড়ে চারঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সুফিয়ান নিজেই জানান, তিনি সবরকমভাবে তদন্তকারীদের সাহায্য করবেন। একইসঙ্গে এও অভিযোগ তোলেন যে  বিজেপি বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনেই সুফিয়ানকে তলব করা হয়েছে। এমনকী, নিহত দেবব্রত মাইতি তৃণমূলের সমর্থক বলেও দাবি করেন এই দুঁদে তৃণমূল নেতা।

এরপর, তদন্ত এগোলেও  যখন কার্যত চার্জশিট পেশ হয় তখন দেখা যায় সেখানে অভিযুক্তের তালিকায় তো বটেই এমনকী সন্দেহভাজনের তালিকা থেকেও বাদ গিয়েছেন সুফিয়ান। শুধু সুফিয়ান নন, বাদ গিয়েছেন অন্য দুই তৃণমূল নেতাও যাঁদের সুফিয়ানের সঙ্গে একই দিনে তলব করা হয়েছিল। বদলে প্রকাশ্যে এসেছে তিনটি নতুন নাম। শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। যদিও এখনও এদের রাজনৈতিক কোনও পরিচয় সামনে আসেনি। কিন্তু,  পরে সম্পূর্ণ বদলে যায় ছবিটা। খোদ তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করায় কার্যত রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

উল্লেখ্য,  ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায়  ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। পরে সেই চার্জশিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫টি। বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫।  ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।

রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই হিংসা মামলার তদন্তে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.