ডিএ-র নতুন হার ঘোষণা তিন মাসের মধ্যেই, জানুন আর কী কী বললেন বিচারপতিরা

আড়াই বছরের প্রতীক্ষার পরে ডিএ মামলা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ ও সুবেশ দাস তাঁদের রায়ে ঠিক কী কী বললেন, জেনে নিন-

১) সারা দেশে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ দেওয়া হয় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স তথা মূল্য সূচকের ভিত্তিতে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাঁদের জীবনযাত্রায় যাতে চাপ না পড়ে সেই কারণেই এই নিয়ম মানা হয়। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও সেই নিয়ম মানতে হবে।

২) রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে ২০০৯ সালে রোকা আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে গোটা দেশে একটাই নিয়ম থাকা উচিত।

৩) বিচারপতিদের কথায়, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিয়ম মেনেই মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হতো। বছরে দু’কিস্তি মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১১ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই নিয়ম মানছে না। কেন মানছে না- তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। কী হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়।

৪) সর্বভারতীয় স্তরে মূল্য সূচকের ভিত্তিতে তিন মাসের মধ্যে মহার্ঘ ভাতার নতুন হার ঘোষণা করতে হবে। ৬ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫) কেন্দ্রের সমতুল মহার্ঘ ভাতা না পাওয়ায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ষষ্ঠ পে কমিশনের বাস্তবায়ন বা এক বছরের মধ্যে (যেটা কম) সেই বকেয়া মেটাতে হবে।

৬) বিচারপতিরা জানিয়েছেন, ডিএ বাবদ বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার নগদে দিতে পারে কিংবা কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফাণ্ডে সেই টাকা দিতে পারে। কী ভাবে বকেয়া মেটানো হবে তা রাজ্য সরকারই ঠিক করবে।

৭) রাজ্য সরকারি কর্মচারী হলেও যাঁরা চেন্নাই বা দিল্লিতে পোস্টেড, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে ডিএ পান। বিচারপতিদের স্পষ্ট বক্তব্য, এরকম কোনও বৈষম্যমূলক নীতি নিয়ে সরকার চলতে পারে না। এটা খেয়ালখুশির বিষয় নয়।এতে সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারি সব কর্মচারীকে একই হারে মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে। 

৮) তবে দিল্লি, মুম্বই বা চেন্নাইতে যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা পোস্টেড রয়েছেন, তাঁরা মহার্ঘ্য ভাতা বাবদ যে অতিরিক্ত টাকা পেয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে না।

৯) ২০১৭ সালে প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল বলেছিল, ডিএ হল সরকারের দয়ার দান। সেই অবস্থান কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী, তা আগেই জানিয়েছিল হাইকোর্ট। এ দিন প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে কেন্দ্র-রাজ্য বৈষম্য চলতে পারে না।

১০) প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে রাজ্য সরকার জানিয়েছে তাদের আর্থিক সংকট রয়েছে। কিন্তু বিচারপতিরা সেই যুক্তি মানতে চাননি। তাঁরা বলেন, রাজ্য সরকারই জানিয়েছে তারা রাজস্ব আদায় বাড়িয়েছে। তা ছাড়া জিএসটি তথা পণ্য পরিষেবা কর ব্যবস্থা চালুর পরেও সরকারের রাজস্ব বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.