কলকাতার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাস দাসের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরেই সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিল গেরুয়া শিবির। বিজেপির পক্ষ থেকে রাহুল সিনহা স্পষ্টই অভিযোগ করেছিলেন তিস্তার মৃত্যুতে চক্রান্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনাটি পুরোটাই সাজানো বলেই দাবি করেছিলেন বিজেপি নেতা। এ বার, তিস্তার মৃত্যুর ঘটনায় রবিবার বিকেলেই নিমতৌড়িতে পৌঁছচ্ছে বিশেষ ফরেনসিক দল।
সূত্রের খবর, আজ অর্থাৎ রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নিমতৌড়ির ওই ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছে বিশেষ ফরেনসিক টিম। ওই দুর্ঘটনার পরে তিনদিন কাটলেও এদিনই নমুনা সংগ্রহ ও ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে দেখবেন ফরেনসিক কর্তারা। প্রয়োজনে অন্যান্য জরুরি পদক্ষেপও করতে পারেন তাঁরা। তবে যতদূর জানা গিয়েছে এই ঘটনার তদন্তভার এখনও সিবিআই বা সিআইডি কারোর হতেই দেওয়া হয়নি। ফরেনসিক দলের পরীক্ষার পর বিজেপির তরফে কী পদক্ষেপ করা হয় সেদিকেই আপাতত তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই তিস্তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে, তমলুক জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনা পরিপূর্ণই একটি দুর্ঘটনা। তার জেরেই তিস্তার মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার, নিজেদের গাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে হেঁড়িয়া কলেজ থেকে দিঘা হয়ে ফিরছিলেন কলকাতার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পুরপ্রতিনিধি তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর তিস্তা বিশ্বাস দাস। কিন্তু ফেরার পথেই দুর্ঘটনা। আচমকা নিমতৌড়ির কাছে পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি ট্যাঙ্কার। গাড়ির পেছনেই বসেছিলেন তিস্তা। দ্রুত গতিতে আসা ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় সর্বাধিক জখম হন তিনিই। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই গাড়িতেই ছিলেন তিস্তার স্বামী ও মেয়ে। তাঁরাও গুরুতর জখম হন।
বিজেপি পুরপ্রতিনিধির মৃত্যুর খবর পেয়ে তৎপর পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তমলুকের এসপি ও জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। মৃত তিস্তার মেয়ে ও স্বামীকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁদের চিকিত্সা হবে। এদিকে তিস্তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভিড় করেন সেখানকার বিজেপি নেতারা। কলকাতায় তিস্তার গডসে ফার্স্ট লেনের বাড়িতেও ভিড় প্রতিবেশীদের। তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিষ কুমার।
তিস্তার স্বামী গৌরব বিশ্বাসের কথায়, “ওর আজ এমএড-এর রেজাল্ট বেরিয়েছিল। সেইটা আনতেই আমরা এসেছিলাম। ফেরার সময়ে যে এমন ঘটনা ঘটবে তা বুঝতেও পারিনি। আমরা কেবল দুমদাম আওয়াজ পেলাম। আমাদের গাড়ির সামনে একটা লরি এসে পড়ে। লরিটা ব্রেকডাউন হয়েই ছিল বোধহয়। আমি ব্রেক কষি। সেইসময় পেছন থেকে একটা অয়েল ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারে। তিস্তা পেছনে বসেছিল। তারপর আর কিছু জানিন না।” মৃত বিজেপি কাউন্সিলরের পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পর তিস্তার মেয়ে অবন্তিকাই কোনওক্রমে ফোন করে বাড়িতে জানায় তার মা কথা বলছে না। বাবা রাস্তায় পড়ে রয়েছে। গাড়িটার অবস্থা শোচনীয়। সঙ্গে সঙ্গে ওখানকার থানায় খবর দেন তিস্তার পরিবার। যোগাযোগ করা হয় তমলুকের থানাতেও।
প্রসঙ্গত, নেত্রী হিসেবে পদ্ম শিবিরে রীতিমতো সুখ্যাতি ছিল তিস্তার। ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নাম ঘোষণা হওয়ার আগে তিস্তার নাম নিয়েও বেশ চর্চাও হয়েছিল দলের অন্দরে। যদিও পরে প্রিয়াঙ্কাকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। নিজ ওয়ার্ডেও বেশ প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন তিস্তা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিস্তার মৃত্যুতে তাঁরা হতবাক। বিপদে-আপদে সবসময়ই তিস্তাকে পাশে পেয়েছেন তাঁরা। সেই তিস্তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হবে তা ভাবতেও পারেননি কেউ।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার বাড়িতে এসে পৌঁছেছে তিস্তার মরদেহ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তিস্তার মৃত্যুর নেপথ্য ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের কথাও বলেন রাহুল।
বিজেপি নেতার কথায়, “আমরা কোনওদিন শুনিনি একটা দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িকে পেছন থেকে কোনও অয়েল ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারে। তিস্তার স্বামী গৌরব বলেছেন, ওঁরা নাকি প্রথমে রাস্তার ধারে একটি বিরাট লরি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে দেন। সেইসময় অয়েল ট্যাঙ্কারটি পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয়। গৌরব আর ওঁদের মেয়ে সামনে বসেছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। পেছনে থাকলে গোটা পরিবারটাই মারা পড়ত। যেহেতু তিস্তা বিজেপির প্রতিনিধি তাই ওঁকে মারার চক্রান্ত করা হতেই পারে। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে সিবিআই এই ঘটনার তদন্ত করুক। এটা চক্রান্ত ও পরিকল্পনামাফিক ঘটনা। আমি আমার দলের তরফ থেকে সিবিআই তদন্তের আবেদন করছি।”