ছদ্মবেশী রাজনৈতিক নেতারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভারতবর্ষের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে বিনাশের দিকে নিয়ে চলেছে

১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর সংবিধান সভায় পাশ করা হয় ভারতীয় সংবিধান যা নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সংবিধান, এমন কী আমেরিকার সংবিধানের থেকেও বড়ো। এই সংবিধান প্রায় তিন বছরের কিছু কম সময়ে রচনা করা হয়। রামরাজ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে যার প্রথম পাতায় ছিল শ্রীরাম-সীতার ছবিসহ শ্রীরামের অভিষেক পর্ব। সংবিধানের খসড়াটি ৩৮৯ জন সদস্য মিলে ১১ বার সংশোধন করার পর ১৬৫ দিনে সম্পূর্ণ হয়। এতে প্রথমেই লেখা আছে ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্ববোধের কথা। কিন্তু এই কথাগুলি কি দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয় ? আমরা এক হাজার বছর। ধরে মধ্য এশিয়া থেকে আসা আরবীয় আক্রমণকারী আর দুশো বছর ধরে পশ্চিমের। ইংরেজ শাসনের গোলামি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ধর্মের ভিত্তিতে জীবন্ত ভারতমাতাকে দ্বিখণ্ডিত করে, দেশীয় লোভী ও ভ্রষ্টাচারী রাজনেতারা মুসলমান ও ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পশ্চিমে-পূর্বে পাকিস্তান নামক এক ইসলামিকদেশের সৃষ্টি। করেছে। এশিয়া মহাদেশে ১৯ শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্য ষড়যন্ত্রের সবথেকে বড়ো শিকার হয়েছে শুধু হিন্দুরাই। ১৫ মিলিয়ন হিন্দু-শিখকে হাজার বছরের পিতৃপুরুষের। ভিটেমাটি ত্যাগ করে আজকের খণ্ডিত ভারতে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল। দশ। লক্ষাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, হিন্দুরা আজও সেই সেকুলারিজমের উপর নির্ভর করে বসে আছে, যার কোনো মূল্যই নেই। একজন কট্টর কমিউনিস্ট বা কট্টর মুসলমানের কাছে। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে ইন্দিরা গান্ধী ‘সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক ও সেকুলার’ শব্দগুলি জুড়ে দেন যা কিন্তু ছিল না মূল সংবিধানে। এটা ছিল হিন্দু থেকে ধর্মান্তরণের একটা সহজ আইনি প্রক্রিয়া মাত্র। দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে মৎস্যজীবী নিতান্ত গরিব হিন্দুদের কীভাবে খ্রিস্টধর্মে পরিবর্তিত করা যায় তার উদাহরণ দেখা যাবে কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক আর অন্ধ্র প্রদেশের ভোটার লিস্টের পাতায়। ১৯৫১ সালের জনগণনায় দেখা যায়, দ্বিখণ্ডিত ভারতে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৩০৬ মিলিয়ন (৮৪.১%), আর পাকিস্তান সৃষ্টির পরেও কিন্তু ভারতে থেকে গেল ৩৪ মিলিয়ন (৯.৮%) মুসলমান। স্বাধীনতা পরবর্তী ৭০ সালে কংগ্রেস সরকারের কল্যাণে ২০১১ সালের জনগণনায় দেখা যাচ্ছে তাদের সংখ্যা নাকি ১৭২ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এই পরিসংখ্যানে বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বন্যার স্রোতের মতো আসা রোহিঙ্গা বা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি, আফগানি আর পাকিস্তানি মুসলমানদের ধরা হয়নি। হিন্দু-শিখের সংখ্যা তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে যেটাকে সুনিপুণভাবে লুকানো হয়েছে ২০১১ সালের লোক গণনায়। কারণ, এক বিশেষ সম্প্রদায়ের তুষ্টিকরণ এবং ভোটব্যাঙ্ক পলিটিক্স এবং যার হোতা ২১টি বিরোধী পার্টি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো কংগ্রেস। আর কংগ্রেস ভেঙে পশ্চিমববঙ্গে তৈরি হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস আর মুসলিমদের সর্বকালের সর্বঋতুর সঙ্গী মার্ক্সবাদী আর মাওবাদীরা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সত্তরের দশকে কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও আজিজুল হকদের নেতৃত্বে নকশালিদের তাণ্ডব জনগণের দৃষ্টিকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের করে রেখেছিল বিভ্রান্ত। আর ঠিক সেই সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চলছিল তুমুল লড়াই। সীমান্তে সৈন্যরা প্রাণ দিচ্ছে আর দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল সেইসব হিন্দুনামধারী মুসলমান ও খ্রিস্টান মিশনারিদের দলদাস রাজনেতাদের তৈরি নকশালবাদ। আসলে এরা মুসলমানদেরই ছদ্মবেশী সৈন্য এবং এক গেরিলা যুদ্ধের কৌশল মাত্র। কাশ্মীরের পাথরবাজ আর সন্ত্রাসবাদীদের এরাই বলে স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধা। রোহিঙ্গাদের জন্য ঘড় ঘড়া অশ্রুবর্ষণ করে কিন্তু পাকিস্তান, বাংলাদেশ অথবা কেরল বা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের নিপীড়নে এরাই হয়ে যান মৌনীবাবা। দিল্লির দুর্গা মন্দিরের উপর আক্রমণ, ধ্রুব ত্যাগী ও ডাঃ নারাঙের মৃত্যু বা কলকাতার হাসপাতালে ডাক্তারদের উপর আক্রমণে শুনেছেন কোনো ‘মোমবাতি মিছিলে’র কথা? নামে ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু ভোটের জন্য সব সরকারই, রাজ্যে কিম্বা কেন্দ্রে মুসলমানদের জন্য ‘সংখ্যালঘু সেল’ আর হিন্দুর ট্যাক্সের টাকা থেকে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের নানারকম সুযোগসুবিধা এবং অনুদান দেওয়া হচ্ছে।‘ওয়াকফ বোড’ আর ‘মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে আছে হিন্দু নিধনের চাবিকাঠিটি। প্রতিটি মুসলমানই জানে হিন্দু তাদের শত্রু বা কাফের। আর তার পরিণামও কী হবে তাও লেখা আছে তাদের ধর্মগ্রন্থে। ভারতে মিশনারিদের কাছে যে পরিমাণ ভূমিসম্পদ আছে, তা কোনো হিন্দু প্রতিষ্ঠানের কাছেও নেই। হিন্দু মন্দিরের প্রণামীর টাকায় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিশালাকায় চার্চ ও মসজিদ তৈরি হয়। হিন্দুমন্দিরগুলি জরাজীর্ণ অবস্থায় অকালেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। জানেন কি, ২০১৯ সালের ভারতের সংসদে ২৭ জন কট্টর হিন্দুবিরোধী মুসলমান সাংসদ এসেছেন? জানেন কি, ভারতের উত্তরপূখণ্ডে আটটি রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, কিন্তু তারা কোনোরকম বিশেষ সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন? জানেন তো জম্মু ও লাদাখ অঞ্চল জনসংখ্যা বা আয়তনে কাশ্মীরভ্যালির থেকেও বৃহৎ কিন্তু গত ৭০ বছর ধরে কাশ্মীরের মুসলমান শাসকরা জোর করে অন্য দুটি অঞ্চলকে পদদলিত করে রেখেছিল এবং ১৯৯০ সালে সমস্ত হিন্দুকে কাশ্মীর থেকে একরাত্রে একবস্ত্রে বিতাড়িত করা হয়েছে।
ষাটের দশকে চীন (১৯৬২) আর পাকিস্তানের (১৯৬৫) সঙ্গে যখন ভারতীয় সেনারা প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বীরগতি প্রাপ্ত হচ্ছিল, সেসময় ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে শত্রুপক্ষের দালাল সিপিআই, এসইউসি এবং সিপিএমের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ্যে ন্যক্কারজনকভাবে সমর্থন করেছিল শত্রুপক্ষকে। মনে আছে। ১৯২১ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত কেরালায় মালাবার উপত্যকায় মোপলা মুসলমানের দ্বারা পাঁচহাজার হিন্দুহত্যাকে কীভাবে মার্ক্সবাদীরা শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস বলে আসল সত্যকে বিকৃত করে গোয়েবলীয় প্রথায় প্রচারপ্রসার করেছিল? এবারে রাহুল গান্ধীর কেরালার ‘ওয়াইনাড’ থেকে লোকসভা নির্বাচনে জেতার রহস্যটা কী বলে দিতে হবে কি? আজ থেকে একশো বছর আগে আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সুযোগ্য শিষ্য স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ (মুন্সীরাম ভিজ) কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “অখণ্ড ভারতে হিন্দুদের বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরবাপসি বা শুদ্ধিকরণ শুরু করা। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ যখন ১৬৭৪ সালে পুণা জয় করে ফিরছিলেন, রাস্তার দুপাশে দাঁড়ান ধর্মান্তরিত মুসলমানরা আবার তাদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। বিজেপির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম্ স্বামীর কথায়, ভারতীয় উপমহাদেশে যত মুসলমান আছে তাদের সবার পূর্বপুরুষই হিন্দু ছিলেন। আজকের কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লা ও বিজেপিনেতা এমজে আকবরও স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না যে, তাদের পূর্ব পুরুষরাও হিন্দু ছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের আদ্য সরসঘচালক ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ১৯২৫ সালেই বুঝেছিলেন, হিন্দুর বিনাশ রোধ করতে হলে হিন্দুদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে হবে। স্বাতন্ত্র্যবীর সাভারকরের হিন্দু মহাসভার সৃষ্টিও ঠিক এই কারণেইহয়েছিল। অপরিহার্য কারণেই আজ বিভিন্ন সংস্থার ‘ঘরবাপসি’ বা পুনরায় হিন্দুধর্মে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এর আবশ্যকতার কথা আমাদের পথের দিশারি পূর্বপুরুষরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।
১৯১২ সালে কলকাতার আর্য সভা মন্দিরে শ্রদ্ধানন্দজীর সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ সৈন্যবিভাগের বাঙ্গালি কর্নেল উপেন্দ্রনাথ মুখার্জি। তিনিও শুদ্ধিকরণ পদ্ধতিকে দ্বিধাহীন ভাবে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বহুবছর ধরে রাশিবিজ্ঞান অনুশীলন করে তার মনে হয়েছে মাত্র ৪২০ বছরের মধ্যেই সনাতন হিন্দুধর্মের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী হবে যদি না জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে এর প্রতিকার করা যায়। তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার তৈরি ১৯১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান দিয়ে দেখান, যে মাত্র ৩০ বছরে হিন্দুর জনসংখ্যা ৭৪% থেকে হ্রাস পেয়ে ৬৯% হয়েছে (ইণ্ডিয়ান সেনসাস গেজেটঃ ভম ১; পৃষ্ঠা ১২২)। অর্থাৎ ৫% হ্রাস পেয়েছে। আর এভাবে যদি একতরফা হিন্দুর অবাধ ধর্মান্তকরণ চলতে থাকে এবং ১ প্রজন্মকে যদি ৩০ বছর ধরা যায়, তাহলে মাত্র ১৪ প্রজন্মেই ( ৩০ গুণিতক ১৪ = ৪২০) সনাতন হিন্দুর দেশ ভারতভূমি থেকে হিন্দু নামটি মুছে যাবে। সেই সময় কর্নেল মুখার্জি একক প্রচেষ্টায়, ১৯০১ সালের জনগণনার সঙ্গে ১৯১১ সালের তুলনা করে, একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন যার নাম ‘হিন্দুস, এ ডাইং রেস’। পুস্তিকাটির প্রকাশনের পর সারা ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলে এক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। অনেকেই মেনে নিতে পারেননি এমনকী ঋষিঅরবিন্দ পর্যন্ত এর সঙ্গে একমত হতে পারেননি, (দ্রঃ কর্মযোগীন; ৬ই নভেম্বর, ১৯০৯)। যাইহোক প্রখর বাস্তববাদী স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দ ১৯২৩ সালে আগ্রার কাছে লক্ষাধিক ‘মালকানি’ মুসলমানকে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনেন যাদের পূর্বপুরুষরা রাজপুত ছিলেন। অবশ্য তার জন্য তাঁকে প্রাণও আহুতি দিতে হয়েছিল ২৩শে ডিসেম্বর ১৯২৬ সালে আব্দুল রশিদ নামের এক ধর্মান্ধের গুলিতে দিল্লির জামা মসজিদের চত্বরে। সৌভাগ্যের বিষয়, তার পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে শ্ৰদ্ধানন্দ পার্ক স্থাপিত হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখে, সূর্যসেন স্ট্রিট ও বৈঠকখানা রোডের সংযোগস্থলে।
যাইহোক, সেই জটিল প্রশ্নটা, যেটা নিয়ে ভারতের তথাকথিত সমাজবাদী, সেকুলার পন্থী এবং মার্ক্স ও মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী নেতাদের নিরন্তর মতান্তর চলছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ইসলামিক দেশ হতে বাধা নেই কিন্তু ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বলা যাবেনা। সমস্ত হিন্দুদের জন্য, ২০০৬ সাল পর্যন্ত নেপালই একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র ছিল কিন্তু হিন্দুনামাধারী লোভী ও ভ্রষ্টাচারী নেতারা (নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট) ষড়যন্ত্র করে ধর্মনিরপেক্ষতার তকমা দিয়ে অবাধে হিন্দুর ধর্মান্তরণ করে দেশটাকে ইসলামিক ও খ্রিস্টান দেশে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর হয়েছে। এর প্রতিকার কল্পে ভারতের সংবিধানের আমূল সংশোধন অত্যন্ত জররি, কারণ ইতিহাস বিকৃতকারী হিন্দুনামধারী ইসলামের একনিষ্ঠ পূজারি মমতা-মায়া-মুলায়মের মতো ছদ্মবেশী রাজনৈতিক নেতারা সনাতন হিন্দুর দেশ থেকে অচিরেই হাজার হাজার বছরের ভাষা, ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বিনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
ডাঃ আর এন দাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.