অবশেষে অবসন্ন শরীর নিয়ে দুর্গা পুজো সেরে পুরোহিত বাড়ি ফিরল । সবার একটাই কথা পুজোয় পুরোহিতের প্রচুর ইনকাম। সাথে ফল মিষ্টি শাড়ি । কিন্ত কে বোঝাবে কুড়ি লাখ টাকার বাজেটে কমিটি থেকে পুরোহিতের বরাদ্দ চারটে লাল পাড় সাদা শাড়ি । সেটাও যতটা জ্যালজ্যালে হয় । গামছার সাইজ রুমালকেও লজ্জা দেবে । এর মধ্যে আবার যেসব শাড়ি আসে তার মধ্যে কমিটির নির্দেশ কিছুগুলো রেখে দেবেন ।
সব কমিটিতে দু একজন মাতব্বর থাকে । এসে নিয়ে পুরোহিতের খুঁত ধরার জন্য বসে থাকে । মাঝে মধ্যে জ্ঞান দেন তিনি দক্ষিণেশ্বর , পুরীর পুরোহিতের সঙ্গে তর্ক করে নাকি কাছা খোলার অবস্থা করেছিলেন। এরপর দক্ষিণা । অষ্টমীর দিন দক্ষিণা কমিটি নিয়ন্ত্রণ করবে । এইভাবে পাঁচ দিনের পুজো শেষ করে শর্ত অনুযায়ী টাকা আর রাজ্য সরকারের দেওয়া রেশনের নিম্নমানের চাল রুমালের থেকেও ছোট গামছা আর গোটা চারেক ভালো শাড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরা ।
ততক্ষণে গলার স্বর বসে গেছে । যখন সবাই পুজোয় বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছে তখন পুরোহিত মন্দিরে উচ্চ কন্ঠে খালি পেটে মন্ত্রোচ্চারণ করছেন । যাঁরা ভাবেন অ বং করেই ইনকাম তাদের বলব ঐ তিন ঘন্টা করেই পাঁচদিন খালি পেটে অং বং করেই দেখান । করে দেখান দেড় ঘন্টার মহা হোম । খুব উচ্চ কন্ঠে নয় স্বাভাবিক গলাতেই চণ্ডীপাঠ করে দেখিয়ে দিন ।
তাই এসব মেনে নিয়েও পুরোহিতের মা , বৌ মনোকষ্ট বুকে চেপে প্রত্যাশায় থাকে পুজোর পর বাড়ি ফেরার দিকে । ফিরতেই পাড়ার কথা ভালোই কামাই হল । কেউ বলবে নারকোল খাওয়ালি না , কেউ বলবে দুটো গামছা দিস বা শাড়ি দিস ।
পুরোহিতের জীবনের এই শারীরিক ও মানসিক কষ্ট এদের চোখে পড়ে না । যখন কেউ রেলে মোটা বোনাস পায় বা অনান্য পেশায় প্রচুর টাকা আয় করে তখন বলে না ভালোই তো টাকা কামালি । কিছু দে । বা এরাই কখনও পুরোহিতকে বলে না এই নিন পুজোর সময় কিছু রাখুন।
এরা সবসময়ই উদাহরণ দেয় কালীঘাট, তিরুপতি বা জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতের আয়ের সাথে তুলনা করে । কিন্ত অধিকাংশ পুরোহিতের জীবন কত কষ্টের সে তারাই জানে । পুরোহিত সবার মঙ্গল কামনা করে অথচ উপবাসে চিৎকারে লিভার ও হার্টের অকালেই বারোটা বাজায় । এমনও দেখেছি বাড়িতে মাসিক আয় দেড় লাখের উপর । নারায়ণ পুজোর দক্ষিণা একান্ন টাকা । বাড়াতে বললেই একটা পরিচিত শব্দ "পুরোহিত লোভী" । পুরোহিতকে এক টাকাতেও সন্তুষ্ট হওয়া উচিত । হ্যাঁ পুরোহিদের পেট , পিঠ , রোগ, পোশাক কোন কিছুই নেই । এইসব দেঁড়েল গুলো যখন কোন নার্সিংহোম অতিরিক্ত টাকা নেয় তখন কিছু বলতে পারে না । স্কুলে ডোনেশান নিলেও চুপ । ওগুলো লোভ নয় ।
হ্যাঁ এটাই সমাজ । আর এটাই বিচার । আর লজ্জা কখন হয় জানেন ? যখন কোন ব্রাহ্মণ পদবীধারী এসব কথা গুলো বলেন । এখন আবার শুনতে হচ্ছে পুরোহিত ভাতা মারছিস তো ? কে বোঝাবে ওই এক হাজার টাকা পেতে গেলে একটা অতি মূর্খ নেতার পায়ে তেল দিতে হবে । তাই আমার মতো অধিকাংশ পুরোহিতের আজও সেটুকু জোটেনি । এসব শুনলে সত্যিই পুরোহিত হিসেবে নিজের লজ্জা লাগে । পুরোহিত, আপনার অভিজ্ঞতা কি বলে ?