“এত বেশি মহিলা শিক্ষিকা কী করে স্ত্রী-রোগে ভুগছেন, জানি না। আমি নিজেই আতঙ্কিত!”– প্রকাশ্য সভায় এই মন্তব্য করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পেলেন বিপুল হাততালিও। প্রশ্ন উঠেছে, একটি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী মহিলাদের নিয়ে এবং তাঁদের কোনও অসুখ নিয়ে কী ভাবে এই রকম মন্তব্য করতে পারেন! এ নিয়ে নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে সর্বত্র।
আজ, বৃহস্পতিবার, নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে একটি জরুরি জনসভার আয়োজন করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি শিক্ষকদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা আলোচনা করেন। তিনি প্রসঙ্গ তোলেন মিউচুয়াল ট্রান্সফারের বিষয়ে। তিনি জানান, কোনও শিক্ষক অসুস্থ হলে তাঁর মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদন গৃহীত হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এই ঘোষণার পরেই নাকি শিক্ষকেরা বেশি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ তাঁর।
এবং এই প্রসঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী বলে বসেন, “বিশেষ করে এত মহিলা শিক্ষিকা রয়েছেন, তাঁরা এত বেশি স্ত্রী-রোগে ভুগছেন, আমি নিজেই আতঙ্কিত।” তিনি এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের তরফে হাততালি ও হাসির রোল ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে, সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ সদস্যই তো শিক্ষক। তাঁরাও কী করে এরকম অসংবেদনশীল একটি মন্তব্যে হাততালি দিতে পারেন সমবেত ভাবে!
প্রশ্ন উঠেছে, ১৩ দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে অনশন করছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবি যোগ্য বেতন। সে নিয়ে কোনও কথা বলছেন না মন্ত্রী। শুনছেন না দাবিদাওয়া। অথচ সেই সময়েই দলের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে সভা ডেকে, এ সব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন!
অনেকেরই প্রশ্ন, স্ত্রী-রোগ হওয়া বা তাই নিয়ে হাসাহাসি করা, এটা কি কোনও সুস্থ বা সভ্য সমাজের লক্ষ্মণ হতে পারে? পার্থ-ঘনিষ্ঠরা অবশ্য জানাচ্ছেন, কাউকে অপমান করা বা ছোট করার জন্য নয়, এ কথা নিছকই মজা করে বলেছেন মন্ত্রী। তৃণমূলের অন্দরেই অনেকে বলছেন, বক্তব্য রাখার সময়ে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল মন্ত্রীর। কোনটা নিয়ে রসিকতা করা যায় আর কোনটা নিয়ে যায় না, সে বিষয়ে সচেতন থাকাটা খুব জরুরি।
এ বিষয়ে তাঁরই দলের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে, কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি তিনি। ‘দ্য ওয়াল’কে সাফ জানিয়ে দেন, তাঁরই দলের তাঁর থেকে সিনিয়ার কোনও নেতার ব্যাপারে তিনি মোটেই কোনও মন্তব্য করবেন না। তিনি বলেন, “উনি আমার নেতা। এ বিষয়ে যা জানার ওঁর থেকেই জানুন। আমার কোনও কথা বলার এক্তিয়ার নেই।”
এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজী হননি অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারও। তাঁর কথায়, “কে কোথায় কী বলছেন, সবেতে প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব নয়।” নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজারও বক্তব্য, “এ বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না। কোনও প্রতিক্রিয়া নেই আমার।”
বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ও এত সিনিয়র এক জন নেতা হয়ে কেউ যদি মহিলাদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেন, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওঁর উচিত ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগ করা। উনি বরং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে নিজের চিকিৎসা করান।”
আইনজীবী এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্যা ভারতী মুৎসুদ্দি বলেন, “অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অন্যায্য মন্তব্য। কারও যদি কোনও ছুটি বা অন্য কোনও ন্যায্য দাবি পাওনা থাকে, তা হলে সেটা তাঁর যোগ্যতা ও নিয়ম অনুযায়ী পাওয়া উচিত। সেখানে এই ধরনের মন্তব্য কখনওই কাম্য নয়। এটা অন্যায়।” তিনি আরও জানান, প্রাথমিক শিক্ষকেরা এখন অনশন করছেন খোলা আকাশের নীচে। তাঁদের ন্যূনতম দাবিদাওয়া নিয়ে কিছুই বলছেন না মন্ত্রী, অথচ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে এরকম অসংবেদনশীল মন্তব্য করছেন!
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি অবশ্য ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনে আপডেট করে দেওয়া হবে।