বিয়ে বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চাইছে একটি লোক। দেখে ভিখারী ও মনে হয় না। বেশ সৌম্য সুদর্শন চেহারা। তবুও ভিক্ষা করছেন। কেউ ভিক্ষা দিচ্ছে কেউ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সালটা ১৯০৪ কিংবা ১৯০৫ হবে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দে বিলেত গেলেন রাধা গোবিন্দ নামের এক সদ্য যুবক। সেখান থেকে এম আর সি পি হয়ে দেশে ফিরলেন। তারপর দেশে ফিরে প্র্যাকটিশ শুরু করলেন। আর এক গরীবের ভগবান! রোগীর ওষুধ কেনার পয়সা নেই। ফি তো নিলেন না। ওষুধের টাকাও দিলেন।
এলো কলকাতায় সেই ভয়ংকর প্লেগ মহামারী। প্রচুর মানুষ প্রতিদিন মারা যেতে লাগল। সব ভয় তুচ্ছ করে উত্তর কলকাতায় সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন এক ডাক্তার। রোগীর পরিবারকে সচেতন করছেন।
এ কাজে সঙ্গী আর একজন মহীয়সী নারী। তিনি হলেন সিস্টার নিবেদিতা। নিবেদিতাও সারাদিন চান খাওয়া ভুলে গেছেন। আর সেই বিলেত ফেরত ডাক্তার বাবু প্রখর রোদে সাইকলে চেপে পাড়ায় পাড়ায় রোগী দেখে যাচ্ছেন।
মানুষকে ভালবাসার এত নেশা! কই আমরা তো সবাই পারিনা? কি প্রয়োজন ছিল তখনকার দিনে একজন এম আর সি পি ডাক্তারের এসব করার? ঐ যে বললাম কিছু মানুষ এই পৃথিবীতে আসেন যাঁরা অন্য ধাতুতে গড়া…নবজাগরণের আলোকবর্তিকা!
তখন কলকাতা মেডিকেল কলেজ হয়েছে। সেখানে ইউরোপীয় মানুষদেরই দাপট। নেটিভদের ভাল চিকিৎসা করা হয় না।
তিনি ভাবলেন, একটা মেডিকেল কলেজ যদি করা যায় তাহলে দেশের মানুষগুলো একটু চিকিৎসা পায়। কিন্তু কে দেবে এত টাকা? নিজের সব দিয়েও তো কলেজ ও হাসপাতাল করা সম্ভব নয়!তখন নিজে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভিক্ষা করতে শুরু করলেন বড়লোকদের দ্বারে।বড়লোকের বাড়িতে বিবাহেরঅনুষ্ঠান। বিলেত ফেরত ডাক্তারবাবু দাঁড়িয়ে আছেন গেটের সামনে..”কিছু অর্থ দান করুন না? হাসপাতাল করবো.. “চেনেনা কেউ ডাক্তারকে!কপালে হাত ঠেকিয়ে (যেমন ট্রেনে ভিখারিদের অনেকে করে থাকে) … “যত্ত সব ফোর টুয়েন্টির দল!হাসপাতাল করবে!…হয়’ত এসব বলতে বলতে বিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যাচ্ছে। আবার কেউ চিনতেপেরে,ডাক্তার বাবু!আপনি?এই বলে নমস্কার করে পকেটথেকে টাকা বার করে দিচ্ছেন।এইভাবে নানাভাবে তিনি হাসপাতালের জন্য টাকা তুলতে লাগলেন। অবশেষে একদিন স্বপ্ন সফল হল! বেলগাছিয়ায় ভারতবর্ষে প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করলেন।পরে আর এক মুখ্যমন্ত্রী ডঃবিধানচন্দ্র রায় হাসপাতাল টির নাম করণ করলেন#R.G KAR medical college hospital.