তালিবানের ভয়ে আতংকিত আফগান শিল্পীরা নিজেদের শিল্পকর্ম মাটিতে পুঁতে ফেলছেন, দু’দশক পর তালিবান দেশটাকে আবার ও মধ্যযুগেই নিয়ে গেলো

বিশ্বজনীন শিল্প, সংস্কৃতির অভিপ্রকাশ নিষিদ্ধ ইসলামে। নিজেদেরকে যতই পাল্টে গেছি বলুক সেই চিরাচরিত গোঁড়া ধর্মীয় কট্টরপন্থা থেকে যে সরে আসবে না আচারে ব্যবহারে তার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে তালিবান।
দুই দশক আগে ষষ্ঠ শতাব্দীর দু’টি বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার স্মৃতি আজও বিশ্ব ভোলেনি। নতুন করে কাবুল (Kabul) দখল করে ফের এক অন্ধকার যুগের সূচনা ঘটিয়েছে তালিবান। আর তার ফলে আফগান চিত্রশিল্পী থেকে ভাস্কর, সকলেই ভয় পাচ্ছেন তাঁদের শিল্পকর্মও হয়তো নষ্ট করে দেবে জেহাদিরা।

তালিবানের তরফে সেই অর্থে শিল্পকলা সংক্রান্ত কোনও ফতোয়া জারি হওয়ার আগেই আতঙ্কে ভুগতে থাকা শিল্পীরা মাটির তলায় পুঁতে দিতে শুরু করেছেন তাঁদের আঁকা ছবি। ইতিমধ্যেই সেদেশের এক খ্যাতনামা শিল্পী ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’কে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর আঁকা ১৫টি ছবি পুঁতে দিয়েছেন মাটির তলায়। ছবিগুলির বিষয় ছিল আধুনিক আফগান নারী।

ওই শিল্পীর কথায়, ”আমরা যখন কোনও মানুষ বা পশু আঁকি, তালিবান বলে আমরা এক টুকরো কাগজকে জীবনদান করছি যা অন্যায়। নিজের জীবন বাঁচানোর মতোই নিজের শিল্পকর্মকেও বাঁচানো জরুরি।” আর তাই বাকি ছবিগুলি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গোপনে লুকিয়ে রেখে এসেছেন তিনি।

কেবল ছবি নয়, নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে বহু ভাস্কর্যও। তালিবানি রক্তচক্ষু থেকে বাঁচতে আগাম সতর্কতা স্বরূপ এমন পদক্ষেপ। আফগান শিল্পী ও সংগ্রাহক মিনা ‘দ্য আর্ট নিউজপেপার’কে জানিয়েছেন, ”কে এখন শিল্প নিয়ে ভাবছে? কেউ না। সকলেই এখন জীবন বাঁচানোর পথ খুঁজতে ব্যস্ত।”

তালিবান অবশ্য এখনও এবিষয়ে তাদের অবস্থান খোলসা করেনি। ফলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে শিল্পকর্ম খুঁজে নষ্ট করে দেওয়ার আতঙ্ক যতই ছড়িয়ে পড়ুক এখনও এই ধরনের কোনও কাণ্ড ঘটায়নি তারা। তবে শিগগিরি যে ঘটাবে না তাও হলফ করে বলা মুশকিল। তালিবানের উপমুখপাত্র বিলাল করিমি জানিয়েছে, নতুন তালিবান সরকার এখনও কিছু ভাবনাচিন্তা করেনি এবিষয়ে। তবে যা হবে ইসলামের নিয়ম মেনেই ঠিক হবে কোন ছবির অনুমতি দেওয়া হবে আর কোনটাকে নিষিদ্ধ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.