©அருணாவா
দুর্গ- টুর্গ নিয়ে আমার খুব বেশী কৌতূহল কোনোদিন ছিল না। বরং জঙ্গল বা জঙ্গলবাসীদের জীবন আমার কাছে অনেক বেশী আকর্ষণীয়। তবে স্বাদ বদলের জন্য বা বন্ধুবান্ধবের টানা হেঁচড়াতে বেশ কিছু কেল্লা দর্শন হয়ে গিয়েছে।এরকমই দলে পরে বছর চারেক আগে বেরিয়ে পড়েছিলাম গোয়ালিয়রের দুর্গ দেখতে। প্ল্যান ছিল দুদিন গোয়ালিয়রে কাটিয়ে ঝাঁসি যাওয়া হবে।তারপর লক্ষ্ণৌতে গিয়ে এক দুদিন দাপাদাপি করে ব্যাক টু চেন্নাই।
পরিকল্পনাটা পরিবর্তন হলো গোয়ালিয়রে পৌঁছে। ঝাঁসি থেকে কয়েক কিমি দূরেই যে আর এক ঐতিহাসিক নগর ওরছার অবস্থান তা আমাদের কারো সেভাবে জানা ছিল না। হোটেলের সহৃদয় ম্যানেজার কথা প্রসঙ্গে ওরছার নামটি বলেছিলেন।
এইবার মূল বিষয়ে আসি।১৫৩১-১৭৮৩ অব্দি ওরছা ছিল বুন্দেলা রাজপুতদের রাজধানী। ওরছা নামটাও খুব অদ্ভুত যার অর্থ লুকানো।কেন এরকম নাম তা বলতে পারবো না।১৫৩০ সালের দিকে রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং বুন্দেলা পান্না, অজয়গর, ডাটিয়া, বিজাওয়ার ও ছারখারি অঞ্চলকে নিয়ে তৈরি করেন বুন্দেলা রাজ্য। তিনি তার রাজধানীকে গড় কুন্দর থেকে সরিয়ে আনেন ওরছাতে। বেতওয়া নদীর তীরে নির্মাণ করেন এক বিশাল দূর্গ । রুদ্রপ্রতাপের ছেলে মধুকর আকবরের কতৃত্বকে অস্বীকার করেন। রুদ্রপ্রতাপের বড় ছেলে ভারতি চাঁদের মৃত্যুর পর ১৫৫৪ সালে ওরছার রাজা হন মধুকর। রাজা মধুকরের তৃতীয় সন্তান রাজকুমার ইন্দ্রজিৎ এর জীবন নিয়ে এক অসাধারণ কাহিনী আছে। রাজকুমার ইন্দ্রজিৎ তার দরবারের গায়িকা রায় প্রবীনার প্রেমে পড়েন। রায় প্রবীনা ছিলেন রূপে গুনে এক অন্যন্যা মহিলা। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গায়িকা ও নর্তকী। তার জনপ্রিয়তা দিল্লী অব্দি পৌঁছেছিল।
©அருணாவா
অন্যদিকে রাজা মধুকর মুঘল সৈন্যদের কাছে যুদ্ধে হেরে যান। বাদশাহ আকবর শর্ত রাখেন যদি রাজনর্তকী রায় প্রবীনাকে রাজা মধুকর মুঘল দরবারে পাঠাতে রাজি হন তাহলে বাদশাহ তার রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন। রাজকুমার ইন্দ্রজিৎ বাধ্য হলেন প্রেমিকা রায় প্রবীনাকে দিল্লীতে পাঠাতে। বাদশাহের দরবারে রায় প্রবীনাকে উপস্থিত করা হলে তিনি নাচ গানের আগে একটি স্বরচিত দোহা আবৃত্তি করার অনুমতি চান। বাদশাহের অনুমতিতে তিনি করুন সুরে গেয়ে ওঠেন,
” বিনতি রায় প্রবীণ কি, শুনিয়ে শাহ সুজান,
ঝুঠি পাটার ভকত হ্যায়, বারি বায়াস সোয়ান।।”
” হে মহান সম্রাট, রায় প্রবীণ এর বিনতি টি একবার শুনুন। একমাত্র ছোট জাত, কুকুর বা কাক অন্যের এটো খায়।”
©அருணாவா
প্রসঙ্গত রায় প্রবীনা তার দোহার মধ্যে দিয়ে পরোক্ষভাবে ইন্দ্রজিৎ এর প্রতি তার ভালোবাসাকে ব্যক্ত করেছিলেন।বাদশাহ আকবর রায় প্রবীনার সততা এবং বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়ে তাকে পুনরায় ওরছার দরবারে ফেরত পাঠান। কিন্তু রাজকুমার ইন্দ্রজিৎ কখনও রায় প্রবীনাকে বিয়ে করেন নি। ১৬১৮ সালে ওরছা দুর্গের মধ্যেই তার মৃত প্রেমিকার স্মরণে তিনি প্রবীণ রায় মহল তৈরি করেন।
ওরছা দুর্গের আশে পাশে প্রচুর খাবারের দোকান আছে। এমনই এক দোকানে সিঙ্গারা কোল্ড ড্রিংকস খেতে খেতে দোকানদারের কাছে জানলাম প্রতি রাতেই নাকি প্রেমিক যুগল প্রবীণ রায় মহলে সাক্ষাৎ করেন। অনেক লোকই নাকি দেখেছে। অতৃপ্ত প্রেমিক প্রেমিকা আজও এই দুর্গ ছেড়ে যায় নি। ভুত প্রেত নিয়ে খুব বেশি জানি না। তবে গাইড আমাদের দুর্গের সব কোন ঘুরিয়ে দেখালেও রায় প্রবীনা মহলের ভিতরে কিন্তু নিয়ে যায় নি। যতদুর মনে পড়ছে কোনো গাইডই নিয়ে যাচ্ছিল না।
©அருணாவா
অরুণাভ রায়