ভাষা ও লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মহাশয়

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, বাজপেয়ী – এই দুজন ব্যক্তিকে আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি| শাস্ত্রী মশাইয়ের মতো লোক তাঁর পরে আরও কয়েকজন আসলে ভারতের চেহারা আজ অন্যরকম হতো| ওনার অবদান প্রচুর|
বলে শেষ করা যাবেনা| তবে কয়েকটা হাইলাইট দেখে নেওয়া প্রয়োজন|
সর্বপ্রথম ধন্যবাদটা দেওয়ার কারণ হলো তিনি নেহরুর সোশ্যালিস্ট পলিসিকে এগিয়ে নিয়ে জাননি| পরিষ্কার বলেছিলেন “ভারতের মতো দেশে কোনো একটি নির্দিষ্ট একমাত্রিক অর্থনৈতিক নীতি প্রয়োগ করা যায়না”|
এছাড়াও তিনি ছিলেন হোয়াইট রেভোলুশন,গ্রীন রেভোলুশনের একজন অগ্রদূত| সেনা ও কৃষকদের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি| ১৯৬৫ যুদ্ধের সাফল্য তার কুটনৈতিকত ক্ষমতার পরিচায়ক|

এছাড়া একজন ফেডারালিজমে বিশ্বাসী জাতীয়তাবাদী হিসেবে তাঁকে আরেকটা কারণে ধন্যবাদ দিতে চাই| সোভিয়েতপ্রেমী সোশ্যালিস্ট নেহরুর হিন্দী চাপাও নীতি সম্বন্ধে আপনারা অনেকে জানেন| জোরপূর্বক হিন্দীকে অ-হিন্দী ভাষীদের উপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে ভারতে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরী করেছিলেন নেহেরু| অসংখ্য লোক নেহেরুর নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে গুলি খেয়ে মারা যান| অনেকে আত্মহত্যা করেন| তারপর সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখলেও নেহরুর সরকারের নীতি অনুযায়ী একটা সময়কাল স্থির হয়েছিল এই বলে যে – উক্ত সময়ে হিন্দী রাষ্ট্রভাষারূপে সমস্ত দেশে একপ্রকার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে দিতে হবে এবং ইংরেজির স্থান নেবে হিন্দী| কাকতালীয়ভাবে সময়টা ছিল লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর রাজত্বকাল| তখন আইন অনুযায়ী শাস্ত্রী মহাশয় সেই নীতি লাগু করে দিয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনিও হিন্দীর সমর্থক বলেও ১৯৬৫ তে যখন দক্ষিণে, বিশেষ করে তামিলনাডুতে আবার গণবিদ্রোহ দেখা যায় এবং প্রতিবাদী জনতার মধ্যে বেশ কিছু ছাত্ররা যখন আত্মহত্যা করেন, তখন তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং তিনি সাথে সাথে এই নীতি প্রত্যাহার করে নেন|
দেশ, জাতি, সম্প্রদায় সবকিছুর বৈচিত্র্য ধ্বংস করে সবাইকে একরকম বানিয়ে দেওয়ার নীতি আদতে বামপন্থী চিন্তাভাবনা যে নীতিতে দুঃখজনকভাবে অনেক তথাকথিত দেশপ্রেমীরাও বিশ্বাস করেন| স্তালিন থেকে নেহরু কেউ সফল হননি এইসব করতে গিয়ে, আগামীতেও কেউ হবেন না| এটা হয়তো শাস্ত্রী মশাই উপলব্ধি করেন|
তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও তে এসে বলেন যে ইংরেজিকেও অফিসিয়াল রাখা হবে,যতক্ষণ অহিন্দীভাষীরা চান এবং দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগুলির স্বার্থরক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ| বলাবাহুল্য যে এরপর ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধময় পরিস্থিতি থেকে ভারত মুক্তি লাভ করে|
[যদিও এরপরেও রাজীব গান্ধী ১৯৮৬ তে আবার নেহরুর নীতি লাগু করতে চান এবং আবার বিদ্রোহ দেখা যায়|]

বিঃদ্রঃ ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে জাতীয় ভাষা যদি করতে হয় তাহলে এমন একটি ভাষা গ্রহণ করা উচিৎ যা সবার কাছে নিরপেক্ষ| সংস্কৃত সেদিক থেকে আদর্শ| মজার কথা হলো সংস্কৃতকে জাতীয় ভাষা করার সমর্থন করেছিলেন অনেক দক্ষিণ ভারতীয় নেতারা, উত্তরে সহ হিন্দুরা তুলনায় কম করেছিলেন| যাইহোক, এই আলোচনা দীর্ঘায়িত করা এখানে অপ্রাসঙ্গিক|

লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে তাঁর জন্মদিনে প্রণাম জানাই|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.