বানভাসী হুগলি। লাল সতর্কতা জারি হল আরামবাগে। একদিকে টানা বৃষ্টি অন্যদিকে দফায় দফায় ডিভিসি-র ছাড়া জল আবার পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বর্ষণ সব মিলিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে রূপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, মুন্ডেশ্বরী ও দামোদর নদী । কোথাও বাঁধ ভেঙে আবার কোথাও বাঁধ উপচে জল ঢুকছে । তার মধ্যে রয়েছে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট ও পুরশুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়।
সব মিলিয়ে হুগলির আরামবাগ মহকুমা জুড়ে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও নিচু এলাকার মানুষদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টি ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বর্ষণ ফুঁসছে দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণ। তার জেরে আরামবাগর বাঁধ পাড়া, কালীপুর, নৈসরাই, মনসাতলা-সহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জল ঢুকতে শুরু করেছে। চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী। পাশাপাশি জল উঠেছে আরামবাগ – কামারপুকুর ও আরামবাগ,বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের উপর। জল ঢুকেছে গোঘাটেরও কামারপুকুর, সাতবেড়িয়া, অমরপুর, নকুন্ডা ও সাওড়া এলাকায়।
এদিকে, বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে রূপনারায়ণ ও দ্বারকেশ্বর নদী। খানাকুলের কিশোরপুর অঞ্চলের বন্দীপুর এলাকায় ভেঙে গিয়েছে বাঁধের একাংশ। সেই সকল এলাকায় জল ঢুকছে হু হু করে। জল ঢুকছে খানাকুলের ধান্যঘড়ি এলাকাতেও।
অন্যদিকে, পুরশুড়াতেও বিপদ বাড়িয়েছে ডিভিসির ছাড়া জল। দামোদর ও মুন্ডেশ্বরী নদীও বইছে বিপদ সীমার উপর দিয়ে। ইতিমধ্যেই দুই লক্ষ্য কিউসেকেরও বেশি জল ছেড়েছে ডিভিসি। যদিও এখনও ডিভিসির ছাড়া জল মুন্ডেশ্বরী দিয়ে খানাকুলে এসে পৌঁছায়নি। কিন্তু ডিভিসির জল খানাকুলে এসে পৌঁছালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে এবং সমস্ত বন্যা পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই নিয়ে ২ মাসে আরামবাগ মহকুমা পরপর তিনবার বন্যার সম্মুখীন হলো। সব মিলিয়ে বড় সড় বন্যা পরিস্থিতির আতঙ্কে আতঙ্কিত গোটা আরামবাগ মহকুমার মানুষ।
রাজ্যে ডিভিসির ছাড়া জলে একাধিক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুকুটমণিপুর কংসাবতী সেচ দফতর। গতকালের একটানা অবিরাম বৃষ্টির ফলে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। কংসাবতীর বিভিন্ন এলাকা ও বেশিরভাগ ব্রিজ চলে গিয়েছে জলের তলায়। এরমধ্যে জল ছাড়ার সিদ্ধান্তে চিন্তায় এলাকাবাসী।
জানা গিয়েছে, প্রায় ২৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মুকুটমণিপুর কংসাবতী জলাধার থেকে। এখন বর্ধমানে জলস্তর রয়েছে ৪৩৪.২ ফুট। এই অবস্থায় যদি জল ছাড়া হয় ক্ষতির মুখে পড়বে ঘাটাল-পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন এলাকা। ক্ষতির মুখে পড়বে চাষবাস।অন্যদিকে, জানা গিয়েছে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ডিভিসি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ। বর্তমানে ১.৮৬ লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়ছে দুর্গাপুর। এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার কারণে দামোদর, মুন্ডেশ্বরীতে প্লাবনের আশঙ্কা। এদিকে আশঙ্কা যে পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে তাতে বানভাসি হবে হাওড়ার আমতা, উদনারায়ণপুর ও দামোদরের নিম্ন তীরবর্তী এলাকা।