ভুলেও বিরোধী লাশ হবেন না । যদি ভুল করে হন ?
মরে গিয়েও শুনবেন – আপনার লাশ = মরা কুকুরের লাশ ।
যা আজকে বললেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । মগরাহাটে পশ্চিমে তৃণমূলের গিয়াসউদ্দিনের হাতে খুন হয়েছেন বি জে পি প্রার্থী মানস সাহা । চার মাস লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা গেলেন । আজ তাঁর দেহ নিয়ে শবযাত্রা কেওড়াতলা যাচ্ছিল কালীঘাট ছুঁয়ে । মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির গলির ঠিক সামনে দিয়ে । এতেই চটে লাল মুখ্যমন্ত্রী । ভবানীপুরে প্রচারে গিয়ে উগরে দিলেন তাঁর বিখ্যাত রাগ । আমার বাড়ির সামনে দিয়ে মড়া নিয়ে যাওয়া ! সাহস তো কম নয় ! আর তারপর যা বললেন তার নির্যাসটাই লিখলাম ।
আপনার লাশ = মরা কুকুরের লাশ ।
সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করলাম কথাগুলো । কেউ ভুল বুঝবেন না মুখ্যমন্ত্রীকে, ভুল করেও । মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে বিষয়টা ব্যক্ত করেছেন তা কিন্তু আরও কুৎসিত । আরও বীভৎস । দু বারের পর তিন বার মুখ্যমন্ত্রীর এই সংক্রান্ত কথা গুলো শুনতে চেষ্টা করে গা ঘিন ঘিন করছিল ।
এতো গেল দক্ষিণের কথা । উত্তরের অবস্থা কি রকম ? একটু শুনুন ।
জমা জলে খোলা ইলেকট্রিকের তারে প্রাণ হারানো দমদমের কাহিনীটাও বা কম কিসের ? দমদম যেখানে ব্রাত্য বসুরা নালে ঝোলে উৎসব করেন পাবলিকের ট্যাক্সের টাকায়, সেই দমদম ।
পাঁচু রায়, সেখানকার পুর প্রশাসক । ১৩ বছরের মৃত স্নেহার পরিবারকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে গোপনে মুখ বন্ধ করাতে চেয়েছিলেন । পরিবারটি নেয়নি । উল্টে আজ স্নেহার দিদি ক্যামেরার সামনে বলেই দিলেন পুরসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে চলে গেছে তাকে তো ফেরত পাবে না, বরঞ্চ এই টাকা নিয়ে ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করে মনটাকে ভালো কর । মন ভালো থাকলে কষ্ট কমবে !
পাশাপাশি ব্রাত্য বসুও নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনুষ্কা আর স্নেহার বাড়িতে । স্নেহার বাবা নাকি নেননি, ফিরিয়েছেন ব্রাত্যর উপহার ।
আরেক মৃত অনুষ্কার মা’র কথাগুলো শুনেছেন নিশ্চয়ী । ক্যামেরার সামনেই বলেছেন দু লাখ টাকা সরকারকে দিতে হবে না । আমি বাড়ি বেচে সরকারকে চার লাখ টাকা দেব । আমার ১৩ বছরের মেয়েটাকে ওরা ফেরত দিক ।
সৌগত রায় তারই মধ্যে হাজির হয়েছেন অকুস্থলে । নিশ্চিত ভাবেই কালীঘাটের নির্দেশ মত । ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে । as usual সরকারের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে বলেছেন – জলতো জমবেই, জমছেও কিন্তু সেই জলে ডুবেতো কেউ মারা যায় নি । কারেন্টের শক খেয়ে মারা গেছে ওরা ।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে যখন রিপাবলিক বাংলা অনুষ্কার মায়ের কথা বলে তাঁর মন্তব্য জানতে চেয়েছে, ব্রাত্য তখন রিপাবলিক বাংলাকেই উল্টে নারদ বলেছেন । বলেছেন কোন নারদের কথা শুনে কিছু মন্তব্য করব না ।
ঘটনাগুলো সব লিখলাম যা আজ সারা দিন দেখলাম । স্নেহা, অনুষ্কা, মানস সাহা কাউকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনতাম না । মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তাঁদের রেখে যাওয়া, ফেলে যাওয়া নামগুলোর সঙ্গে আজ পরিচিত হলাম ।
আর একই সঙ্গে একই দিনে বাংলার চার সমাজ সংস্কারককে নতুন আঙ্গিকে পেলাম
পাঁচু রায়, সৌগত রায়, ব্রাত্য বসু, মমতা ব্যানার্জি ।
তাঁরা কোন ভন্ডামি না করেই আজ দেখালেন নির্লজ্জতার কোন ভৌগলিক সীমানা নেই এবং সত্যিই হয়ওনা ।
বাংলার সেই সীমানাহীন মহাকাশে নির্লজ্জতায় তাঁরা আজও অদ্বিতীয় এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী । আপন শয়তানির উজ্জ্বলতায় তাঁরা এক একজন গ্রহ, নক্ষত্র এবং চক্ষুলজ্জার পর্দাহীন এক একটি জ্যোতিষ্ক ।
তাঁদের আলোতেই আমাদের উদ্ভাসিত থাকতে হবে, তাঁদের বয়ানে, বাচনে আমদের আস্থা রাখতে হবে । তাঁদের কর্মদক্ষতায় স্নেহা, অনুষ্কার পরিবারকে হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে ভালো মন্দ খেয়ে ভালো থাকতেই হবে । এটাই বিধির বিধান । ২১৩র অমোঘ নির্দেশ ।
অমান্য করবেন ? স্পর্ধা তো কম নয় !!
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)