এ বি পি আনন্দ যাঁরা এখন চালান তাঁরা কি এটা জানেন না বা বোঝেন না যে যা তাঁরা করছেন সেটা অধিকাংশ সুস্থ মানসিকতার মানুষ বা দর্শক তাঁরা ভালো ভাবে নেন না

পাছে পিছিয়ে পড়ি, তাই নিয়ম করে আনন্দ বাজার আজও পড়ি । এ বি পি আনন্দ আজও দেখি । যেমন দেখছিলাম রবিবার বিকেলে ।

প্রায় দেড় ঘণ্টা “হয় মা নয় বৌমা” নয়, টানটান পিসি ভাইপোর লাইভ বক্তৃতা । ভবানীপুর উপ নির্বাচনের প্রচার । প্রথমে মমতার বক্তৃতা, তারপর তাঁর তোলাবাজ ভাইপোর বক্তৃতা, আবার ফিরে অন্যত্র অন্য মঞ্চে মমতার বক্তৃতা । প্রায় টানা দেড় ঘণ্টা লাইভ । এ বি পি আনন্দর নন স্টপ কভারেজ ।

এ বি পি আনন্দ যখন বুঝল একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তখন বি জে পির একটি মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী বক্তৃতা দিচ্ছেন, সেখান থেকে ঠিক দেড় মিনিট লাইভ দেখাল । তাও পাশে মমতাকে ফ্রেমে রেখে মিউট করে । ঠিক দেড় মিনিট বাদেই ফিরে গেল মমতায় । এবার পাশের ফ্রেমে শুভেন্দুকে মিউট করে । নন স্টপ মমতা । দেড় ঘণ্টা ।

মমতার বক্তৃতার কনটেন্ট ? যা হয়, হাবি যাবি, প্রলাপ, মিথ্যে ও ভুলে ভরা ডিলেরিয়াম । একটানা যে কেউ শুনলে অসুস্থ হতে বাধ্য । মাথা ঘুরবে, বি পি বাড়বে । তবুও এ বি পি আনন্দ এইভাবে পাক্কা দেড় ঘণ্টা চালালো, নন স্টপ । কার কি মাথা ঘুরবে, বি পি বাড়বে থোড়াই কেয়ার করে ।

ভাবছিলাম এ বি পি আনন্দ যাঁরা এখন চালান তাঁরা কি এটা জানেন না বা বোঝেন না যে যা তাঁরা করছেন সেটা অধিকাংশ সুস্থ মানসিকতার মানুষ বা দর্শক তাঁরা ভালো ভাবে নেন না । এমনকি ঘোর তৃণমূল সমর্থক এক পরিচিত অধ্যাপক সেদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন বড্ড কাঁচা তেল দিচ্ছে এ বি পি, এতে আখেরে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে ।

প্রশ্ন হচ্ছে তৃণমূল সমর্থক অধ্যাপক মানুষটি যা বোঝেন এ বি পি আনন্দ যাঁরা এখন চালান তাঁরা কি এটা জানেন না বা বোঝেন না ? নাকি জেনে শুনেই এটা করছেন ?

মানতে হবে কি এটা যে এ বি পির এখনও বোধ আসেনি এই যে কাঁচা তেল তাঁরা দিয়ে যাচ্ছেন তাতে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতাও ( যে টুকু এখনও অবশিষ্ট আছে ) টাল খাচ্ছে কোথাও ।

আমার বিশ্বাস তাঁরা বুঝছেন কিন্তু তাঁরা পুরোপুরি নিরুপায় । কারণ এই প্যান্ডেমিক আবহে বাজারি বিজ্ঞাপনের অবস্থা খুব খারাপ ।

তারই মধ্যে সদ্য গত বছর মমতার সম্মতি নিয়েই আনন্দবাজার গ্রুপে ছাঁটাই হয়েছিলেন ৩৭০ জন । আমি জানি এঁদের মধ্যে বেশ কিছু কর্মী সরাসরি মমতাকে তাঁদের যন্ত্রণার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন । মমতা একবার শুধু নবান্ন থেকে প্রেস মিটে ব্যাপারটা উল্লেখ করে দায় সেরে দিয়েছিলেন । করেননি তাঁদের জন্য কিছুই । উল্টে এ বি পির এই আর্থিক অনটনটাকেই কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের আগের বছর থেকে এ বি পির গলায় বকলশটা বেশ জোরে বেঁধে দিয়েছিলেন । ভরিয়ে দিয়েছিলেন সরকারি বিজ্ঞাপন । কয়েক কোটি টাকার সাহায্যের হাত ।

ফল কি হয়েছিল ? বলতে হবে ? এ বি পি আনন্দ বলুন, আনন্দবাজার বলুন সব এখন আজ গৃহভৃত্য । মমতা যা বলবেন ঠিক তাই তাই করবেন । না করলে ? স্ট্রেট বিজ্ঞাপন বন্ধ । একে অস্বীকার করে কেউ রিস্ক নেবে ? শিরদাঁড়া সোজা রাখবে ? সম্ভব ?

একটা প্রমাণ পেশ করি ? শুনবেন ?

২৬ আগস্ট, ২০২১ নবান্নের নবম তলা থেকে পে এন্ড একাউন্টস্ দফতরকে এক নির্দেশনামায় ( আই সি এ ১৭০১১) আনন্দবাজারকে পে মেন্ট করতে বলা হল ২ কোটি ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৭২ টাকা ।

কিসের জন্য শুনবেন ? ছোট ছোট নীল সাদা টেন্ডার বিজ্ঞাপনের জন্য । ঠিক নির্বাচনের আগে ১ লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ ( ১৫ দিন ) আর ১৬ তারিখ, ২৬ তারিখ, ১১ মার্চ আর ২৪ মার্চ, প্রায় ২০ দিনে প্রকাশিত ছোট ছোট টেন্ডার বিজ্ঞাপন দেওয়ার নাম করে আনন্দবাজারকে মমতা দিয়েছিলেন ২ কোটি, ৫ লক্ষ, ১৫ হাজার ৫৭২ টাকা ।

এই পেমেন্টটা নবান্ন করল ২৬ আগস্ট নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর । ( প্রতিলিপি নীচে দিলাম ) । এই নীল সাদা ছোট ছোট প্রয়োজনহীন বিজ্ঞাপনগুলো না দিলেও সরকারের কিছু যেত আসত কি ?
কিছুই যেত আসত না । তাও মমতা দিলেন কারণ মমতা বুঝেছিলেন টাকাটা আনন্দবাজারের ভীষণভাবে দরকার । তাই দু হাত ভরে দিলেন যা না দিলেও সরকারের দিব্যি চলত ।

আমি শুধু টেন্ডার বিজ্ঞাপনের তথ্য পেশ করলাম । ঐ ২০ দিনে ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন, ডিজিটালের জন্য বিজ্ঞাপন, টেলিগ্রাফ পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন, এ বি পি আনন্দের জন্য বিজ্ঞাপন আলাদা । যার অর্থ মূল্য আরও কয়েক গুণ যার তথ্য অন্য কোনদিন পেশ করব ।

আনন্দবাজার বলুন, এ বি পি আনন্দ বলুন এখন আসলে সেই রিটার্ন গিফট ভাউচারের ঋণ শোধ করছেন । দেড় ঘন্টার নন স্টপ মমতা আর তার তোলা বাজ ভাইপোর কভারেজ সেই গিফট ভাউচারেরই এখন খেলা আদতে ।

চোখ বোলান নীচের পে অর্ডারে, সম্যক বুঝবেন ঠিক লিখলাম কি না ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.