ইদানীং রাজ্যে একটা গেল গেল রব শোনা যাচ্ছে। বাঙালি তার সংস্কৃতি হারাচ্ছে। বিজেপি ও আরএসএসের দৌরাত্ম্যে বাংলা যে চেহারা নিচ্ছে সেটা এ রাজ্যের সংস্কৃতির পরিপন্থী। বাঙালি বড়জোর ‘জয়দুর্গা’ বলতে পারে, কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ বলার প্রশ্নই ওঠে না। প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবী, কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় লেখা ঘোষিত বামপন্থীরাও আর থাকতে না-পেরে একেবারে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা মেনে নিলে বাংলার সংস্কৃতির আর কিছু থাকবে না।
এই রাজ্যের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারটা আসলে কী? ১৯৭০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই খুন হয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোপালচন্দ্র সেন। স্বাধীন ভারতে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। সেটাই কি বঙ্গ সংস্কৃতি? নাকি ১৯৭৯ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা তফসিলি জাতির অসহায় নিরস্ত্র মানুষের উপর যখন গুলি চালিয়েছিল পুলিস? মরিচঝাঁপির সেই ঘটনা বাংলার সংস্কৃতি? কিংবা ২০০৭ সালে কলকাতায় যখন তিনদিন ধরে দাঙ্গা চলল, দাঙ্গাবাজরা জ্বালিয়ে দিল সিপিএমের দু-দুটো পার্টি অফিস, বামফন্টের চেয়ারম্যান ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বললেন কবি তসলিমা নাসরিনকে। সেটাই কি ছিল বাংলার ঐতিহ্য?
এরাজ্যে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এতজন মানুষ খুন হলেন। অথচ একই বছরে দেশের তিনটি রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়ে বিজেপি থেকে কংগ্রেসের সরকার তৈরি হল। কোথাও একজন মানুষেরও মৃত্যু হয়নি। তবে কি রাজনৈতিক কারণে পিঁপড়ের মতো মানুষকে পিষে মারাটাই বঙ্গ সংস্কৃতি?
এতকাল কেমন ছিল বাঙালি সমাজ? সেটা বুঝতে গেলে একটু ফিরে দেখতে হবে। ভারতের নবজাগরণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাংলা। সেই জাগরণকে অনেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের জাগরণ বলে কটাক্ষ করেন। আসলে এই হিন্দুত্বের সঙ্গে কোনও উপাসনা পদ্ধতির বিশেষ সম্পর্ক নেই, সম্পর্কটা আছে ভারতীয়ত্বের, দেশপ্রেমের। নবগোপাল মিত্র যখন ‘হিন্দুমেলা’ শুরু করলেন বা রবীন্দ্রনাথ যেদিন ‘শিবাজি উৎসব’ পাঠ করলেন তখন তাতে দেশাত্মবোধ ছিল, সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। আধুনিক ভারতে ‘হিন্দুত্ব’ শব্দটাই তো বাঙালির অবদান। ১৮৯২ সালে চন্দ্রনাথ বসু তাঁর ‘হিন্দুত্ব: হিন্দুর প্রকৃত ইতিহাস’ বইটি প্রকাশ করলেন। ঠিক তার পরের বছরই কলকাতার সিমলাপল্লির নরেন্দ্রনাথ দত্ত শিকাগোতে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হয়ে জগৎ কাঁপিয়ে এলেন। এত বছরের পরাধীন একটা দেশ আত্মবিশ্বাসে জেগে উঠল স্বামী বিবেকানন্দের আহ্বানে। সেটা কি বাঙালি জাতির ঐতহ্য নয়?
বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দ মঠ’-এ বন্দেমাতরম গানে দেশমাতৃকাকে বললেন ‘ত্বাং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী’। সেই ‘বন্দেমাতরম’কেই জাতীয় মন্ত্র করলেন অরবিন্দ ঘোষ। ১৯০৫ সালে বাঙালি শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর আঁকলেন ভারতমাতার চিত্র। সেই প্রথম আঁকা হল ভারতমায়ের ছবি! ভগিনী নিবেদিতা সেই চিত্র নিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ঘরে ঘরে জাগরণের কথা বলেছিলেন। ১৯২২ সালে ধূমকেতু পত্রিকায় বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশিত হল। কবি দেশমাতৃকাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করলেন। জেল হল নজরুলের। নিষিদ্ধ হল ধূমকেতু। বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় লিখেছিলেন, ‘হিস্ট্রি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি। ঋষি বঙ্কিম, শ্রীঅরবিন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র তো বাঙালিই ছিলেন।
‘তোমাদের রামচন্দ্র আর আমাদের মা দুর্গা’ এটাও হাস্যকর জল্প। শ্রীরামচন্দ্রই দেবীদুর্গার অকালবোধন করেছিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পারিবারিক কুলদেবতা ছিলেন রঘুবীর শ্রীরামচন্দ্র। বাবা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় যেদিন জমিদারের হয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে অস্বীকার করে গ্রামছাড়া হলেন সেদিন রঘুবীরের মূর্তিটাই সম্বল করে কামার পুকুরে এসেছিলেন।
এস ওয়াজেদ আলী তাঁর ‘ভারতবর্ষ’ প্রবন্ধে এক অসাধারণ দৃশ্যকল্পের বর্ণনা করেছিলেন। এক বাঙালি মুদি দোকানদার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রামায়ণ পাঠ করছেন। বাড়ির সদস্যরা শুনেছেন। ওয়াজেদ আলী ঠিকই ধরেছিলেন, ভারতবর্ষকে বাদ দিলে বাংলার না-থাকে শ্রী, না-থাকে গৌরব। সত্যিই ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঙালির সেই সংস্কৃতিকে। যেখানে শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন, হিন্দুত্ব ছিল কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না।
তাই যাঁরা ‘বন্দেমাতরম’ বা ‘ভারতমাতা কী জয়’ বলতে গর্ব বোধ করেন, এমন বঙ্গসন্তান সানন্দে ‘জয় শ্রীরাম’ বলবেন। আপত্তি তাঁদের থাকবে যাঁরা ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’ বলে স্লোগান দেন। স্বদেশের সংস্কৃতি, পূর্বপুরুষের বিশ্বাসে আঘাত করাটাই যাঁদের আর্দশের মূল ভিত্তি। কীসের জন্য আজ এত হাহুতাশ? ঠিক কোন বঙ্গ সংস্কৃতির জন্য শোকাচ্ছন্ন তাঁরা? সেটাও একটা সংস্কৃতি ধরলে তার বয়স খুব বেশি নয়। ১৯১০ সালে বঙ্গভঙ্গ আইন রদ হল। বাংলার মানুষ বুঝিয়েছিল যে হিন্দু মুসলমান দু’ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করা যাবে না। কিন্তু চল্লিশ দশকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মুসলিম লিগের পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করল।
ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অক্লান্ত প্রয়াসে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গ ভারতে থেকে গেল,
না-হলে সম্পূর্ণ বাংলাটাই পাকিস্তানের অংশ হতো। ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ পাকিস্তানের’ও (সিপিপি) জন্ম হয়েছিল কলকাতাতেই। কিন্তু আজ পাকিস্তানের কোথাও সেই সিপিপি-র সাইন বোর্ডও নেই।
রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও পরস্পরকে সম্মান দেওয়ার রেওয়াজ ছিল বাংলায়। শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পরে সেই সংস্কৃতিও নষ্ট হয়ে গেল। শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে বিরোধীদের মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও গভীর হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কাশ্মীরে শ্যামাপ্রসাদকে হত্যার পরে এরাজ্য-রাজনীতিতে এক অদ্ভুত বিকৃতি দেখা দিল। ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন মৃত্যু হল শ্যামাপ্রসাদের। তাঁর মরদেহ মাঝরাতে কলকাতা বিমানবন্দরে আনা হল। তখনও সেখানে উপচেপড়া মানুষের ভিড়। শ্যামাপ্রসাদের উপরে এই অন্যায় আচরণে কলকাতা সেদিন ফুঁসছে। কিন্তু ২৭ জুন এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিল সিপিআই, প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির মতো বাম দলগুলি। ১ পয়সা ট্রামভাড়া বৃদ্ধির জন্য ভীষণ জঙ্গি আন্দোলন শুরু হল। কলকাতায় ১১টি ট্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হল। কংগ্রেস সরকার গ্রেপ্তার করল বাম নেতাদের। ২ জুলাই বামেরা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিল। তখনও শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর দশদিন অতিক্রান্ত হয়নি। ভুলিয়ে দেওয়া হল শ্যামাপ্রসাদকে। বাংলায় জন্ম নিল এক বিকৃত সংস্কৃতির। এরপর থেকে বাংলায় যা শুরু হল তাকে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা বললে ভুল হবে না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, সংবাদ মাধ্যমে সব জায়গাতেই শুরু হল ‘আমাদের লোক’ খোঁজার পালা। যা কিছু মার্ক্সীয় সেটাই প্রগতিশীল তার বিরোধিতা করাই প্রতিক্রিয়াশীলতা। গ্রামে গ্রামে, শহরের পাড়ায় পাড়ায় সমাজের জায়গা নিল পার্টি অফিস। এরাজ্যের মানুষের সব পরিচয় হারিয়ে কেবল রাজনৈতিক পরিচয় বড় হয়ে উঠল।
যেহেতু ধ্বনিবর্ধক যন্ত্রটা তাঁদের হাতে ছিল, তাই তাঁদের বিরোধীদের রক্তপিপাসু রাক্ষসের চেহারাটাই বাংলার মানুষকে সহজে পরিবেশন করা সম্ভব হল। বহুদিন ধরে বিজেপিকে ব্রাহ্মণ্যবাদী, মুসলমান-বিরোধী দাঙ্গাবাজ হিসাবেই দেখানোর অক্লান্ত প্রয়াস করেছে এই চক্র। যেখানে বাস্তবটা একেবারে উল্টোটাই। যে দু’টি রাজ্যে কমিউনিস্ট শাসন দশকের পর দশক চলেছে সেখানে পার্টি হয়ে গেছে বর্ণহিন্দু নেতৃত্বাধীন। অন্যদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে, রাজ্যস্তরে উঠে এসেছেন তথাকথিত অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বাধীন ভারতে মুসলমান-বিরোধী সবচেয়ে বড় দাঙ্গাগুলি ঘটেছে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে। ১৯৬৯ সালে দু’মাস ধরে গুজরাতে দাঙ্গা হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন দু’হাজার মানুষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হিতেন্দ্র কানাইয়ালাল দেশাই। ১৯৮৯ সালে ভাগলপুরে দাঙ্গাতে মৃত্যু হয়েছিল এক হাজারেরও বেশি মানুষের। যার বেশিরভাগই মুসলমান সম্প্রদায়ের। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তখন কংগ্রেসের সতেন্দ্রনারায়ণ সিংহ। ২০০২ সালে ২৭ফেব্রুয়ারি গোধরায় ৫৯ জন অযোধ্যা ফেরত করসেবককে ট্রেনের কামরাতে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি দাঙ্গা শুরু হয়। গুজরাত সরকার একদিনের মধ্যে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিস এবং আধাসামরিক বাহিনীকে দেখামাত্র গুলির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পুলিসের গুলিতে ২৫৪ জন দাঙ্গাবাজের মৃত্যু হয়। বিজেপি-শাসিত অন্য কোনও রাজ্যে কিংবা অটলবিহারী বাজপেয়ির ছ’বছর আর নরেন্দ্র মোদির বর্তমান শাসনকালে কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এমন লজ্জাজনক দাঙ্গার ঘটনা আর ঘটেনি।
এই সত্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাও বোঝেন। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যকে তাঁরা নিরাপদ মনে করেন। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার মুখ হয়ে উঠেছিলেন কুতুবুদ্দিন। কুতুবুদ্দিনকে কলকাতায় নিয়ে এসে রাজনৈতিক প্রচারে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেছিল সিপিএম। বলতে পারেন কুতুবুদ্দিন এখন কোথায় আছেন? সেই মানুষটা তাঁর দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আবার গুজরাত ফিরে গেছেন। কারণ, তাঁর মনের গভীরে বিশ্বাস আছে ২০০২ সালের দুঃস্বপ্ন ক্ষণিকের। গুজরাতে সংখ্যাগুরু সমাজ আর বিজেপি সরকার তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।
সারা ভারতের শাসনের দায়িত্বে মানুষ কখনও কমিউনিস্টদের হাতে দেননি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ বা কেরলে একাধিকবার সেই নৃশংসতা দেখা গেছে। ২০০০ সালে ২৭ জুলাই বীরভূমের নানুরে সিপিএমের হার্মাদদের হাতে খুন হন ১১ জন গ্রামবাসী। তার মধ্যে স্মরণ মেটে ছিল তফসিলি উপজাতির মানুষ। বাকি ১০ জনই ছিল সংখ্যালঘু মুসলমান সম্রদায়ের।
সত্যি বলতে কী, নরহত্যার নিরিখে কমিউনিস্টদের স্থান আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে উপরে। ইউক্রেনের স্থানীয় ভাষায় ‘হলোডোমর’ কথাটির অর্থ ‘না খেতে দিয়ে হত্যা করা’। ১৯৩২-৩৩ সালে তাঁর বিরোধিতা করায় সরকারি হিসেবেই ৩৫ লক্ষ ইউক্রেনবাসীকে হত্যা করেন জোসেফ স্ট্যালিন। সারা পৃথিবীতে আজ স্ট্যালিন বা পল পটের মতো কমিউনিস্ট শাসকের নাম চেঙ্গিজ খাঁ বা হিটলারের মতো নরঘাতকদের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। কিন্তু বাংলার মানুষের র্দুভাগ্য যে ওই অন্ধকারময় দিনগুলিতে, প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের কল্যাণে পত্রপত্রিকায়, খবরের কাগজে, আলোচনায়, বক্তৃতায় এইসব নাম শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, স্বামী বিবেকানন্দ বা রবীন্দ্রনাথের মতো মানবতাবাদী মনীষীর থেকে অনেক উপরে রাখা হতো। আজকে যাঁরা কাঁদছেন তাঁরা ওই কলঙ্কময় দিনগুলিকেই বাংলার ঐতিহ্য বলে ঢাক পেটাচ্ছেন।
আজ বাংলার মানুষ এইসব সহজ সত্য বুঝতে পেরেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে তথাকথিত প্রগতিবাদীদের চক্রান্ত আর আগের মতো কাজ করছে না। মানুষ জেনে গেছে যে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য এই প্রথম কোনও কেন্দ্রীয় সরকার সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে। ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ এত বছরের উদ্বাস্তু আন্দোলনের সব দাবিকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীকে সম্মান দিয়েছে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন সরকার এবছর ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন তিন তিনজন বাঙালি বিজ্ঞানীকে। এই রাজ্যের সাধারণ মানুষ এইসব বোঝেন। তাঁরা ঠিক করে নিয়েছেন, নেতাজিকে যারা জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজোর কুকুর বলেছিল তাদের মুখোশ খুলে প্রকাশ্যে নিয়ে আসবে। বিদেশি সংস্থার সহায়তায় বা বিদেশের পরিত্যক্ত কোন আদর্শবাদের পচা গলা মমি জড়িয়ে যদি কেউ বাঁচতে চান, সেটা তাদের ব্যক্তিগত রুচি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁদের সেই ‘স্বদেশি সমাজ’ ফিরে পেতে চান। চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে চান, ‘জয় শ্রীরাম, ভারত মায়ের জয় হোক’।
জিষ্ণু বসু
(লেখক কলকাতায় সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে কর্মরত)