মা দুর্গার মুখে মুখোশ! কার মা? সমগ্র জগতের মা। জগজ্জননী। তাই তো? তাহলে মুখোশ কেন? সুরক্ষা? কার সুরক্ষা? আদ্যাশক্তি, মহামায়ার সুরক্ষা? কার থেকে সুরক্ষা? তাঁরই সৃষ্টি এক আদিপ্রাণ বা আদিজীবের থেকে? তাও এক টুকরো কাপড় দিয়ে?
তোমাদের লজ্জা করে না?
প্রতিমাতে যদি দেবীকে দেখতেই না পাও, তার শক্তিকে অনুভবই না করতে পারো, তবে কিসের পুজো? আর কিসের পুরোহিত? কিসের মন্ত্র? আর কিসের পুস্পাঞ্জলি?
মাকে আহ্বান করছো কিসের জন্য? নতুন জামাকাপড় পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরার জন্য? ডিজে বাজিয়ে নাচার জন্য? সেলফি তোলার জন্য? নাকি ঘরে বসে সেফলি মদ খাবার জন্য?
নাকি মাকেই সন্দেহ করো? যদি এসিম্পটোম্যাটিক ছুপার স্প্রেডার হন? ওপর থেকে নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এসেছেন কিনা বলা তো যায় না!
হ্যাঁ, এই যুক্তিটাও আছে যে, মাকে তো আমরা ঘরের মেয়ে মনে করি। ঊমার ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি আসা। তাই ঘরের মেয়ের সুরক্ষার জন্যই তো মুখোশ পরানো।
বেশ, তাহলে দয়া করে দু হাত ওয়ালা লালপাড় শাড়ি পরা ঊমার পুতুল বানান। তাকে খাওয়ান, ঘুম পাড়ান, মুখোশ পরান, যা খুশি করুন।
দশভুজা, দশপ্রহরণধারিনী, মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা বানাবেন না। প্লিজ!
কি বললেন? অসুর নিধনের জন্যও তো মায়ের অস্ত্রের দরকার পড়েছিল! তাহলে এই করোনাসুরকে আটকানোর জন্য মুখোশ নয় কেন?
তাহলে তো একটু পড়াশোনা করতে হবে।
মহিষাসুরও মায়াবী ছিল। নানান রূপ পরিবর্তন করছিল। মা মহামায়াও কখনো দশভুজা কখনো সহস্রভুজা রূপে যুদ্ধ করছিলেন। শেষে দশভুজা রূপেই ত্রিশুলে বিদ্ধ করেন মহিষাসুরকে। ওই মুহূর্তের স্ন্যাপশট আজকের দুর্গাপ্রতিমা। একটা ফিরে দেখা। একটা gratitude, একটা acknowledgement, একটা প্রার্থনা- এভাবেই আমাদের সব অশুভশক্তির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করো মাগো!
আর ঠিক এইকারণেই যখন খুশি মায়ের হাতে চালের বস্তা ধরিয়ে দিলাম, মুখোশ পরিয়ে দিলাম, অস্ত্র খুলে রেখে দশহাতে বরাভয় মুদ্রা দিয়ে দিলাম, এগুলো চলে না।
মানে, প্রতিমা আপনি যা খুশি বানাতেই পারেন। পুজোও করতে পারেন। মুখোশ খুলে সন্দেশ ধুঁসে দিয়ে, আবার মুখোশ পরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু, দয়া করে সেগুলোকে দুর্গাপুজো বলবেন না।
সম্বরণ চট্টোপাধ্যায়