NEET বিরোধীতা কার স্বার্থে? কেন তামিলনাড়ু বিধানসভায় নিট বিরোধী বিল?

আমাদের দেশের দুর্নীতির গুণোত্তর প্রগতিতে বৃদ্ধি হয় লালবাহাদুর শাস্ত্রীজির মৃত্যুর পর l প্রসঙ্গত এই সময় আরও কিছু রহস্যময় মৃত্যুও ভারত দেখেছিল, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দীনদয়াল উপাধ্যায় এবং রামমনোহর লোহিয়া l আমাদের রাজ্যে হেমন্ত বসু থেকে গোপাল সেন l এখন এই বিপুল কালো টাকা কোথায় রাখা যায়? নোটবন্দির ভয় কিন্তু বারবারই ছিল কালোবাজারিদের l 1959 তে তপন সিনহার একটি ছবিতে কালী ব্যানার্জী, অনুপ কুমার এবং হরিধন মুখোপাধ্যায়ের এই নিয়ে একটি আলোচনা ছিল l আর এই কালো টাকা সাদা করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য l সুইস ব্যাংকের চেয়েও নিরাপদ l কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক, UGC, রাজ্য শিক্ষাদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিউনিসিপালিটিতে কালো টাকা ছড়িয়ে একটা বড় মেডিক্যাল কলেজ খোলো, তারপরে প্রতি বছর বড়লোকের অপদার্থ বখে যাওয়া সন্তানদের থেকে কোটি কোটি ক্যাপিটেশন ফী থেকে সাদা টাকায় আয় l অর্থাৎ, কালো টাকায় আজ বিনিয়োগ কারো এবং আগামী পঞ্চাশ বছর সাদা টাকায় এই থেকে আয় করো l অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ ভারতে l সেই সময় ভারত সরকার জাতীয়করণের নামে সরকারি কোষগারের টাকা খরচ করছেন বেসরকারী ব্যাংক, ইস্কো ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্থা কেনায় l শিক্ষায় বিনিয়োগ কমতে থাকলো এবং বাড়তে থাকলো জনসংখ্যা l 1991 এর পর ভারতীয়দের হতে পয়সা আসা শুরু হল এবং কিছু সঠিক পথে আয় করা মানুষেরও হতে খরচা করার ক্ষমতা এলো l উচ্চবিত্তরা সন্তানকে ডাক্তার বানাতে দক্ষিণে পাঠাতে শুরু করলো l প্রসঙ্গত, ডাক্তারি পড়ার খরচ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট বা আইনের চেয়ে বহুগুন বেশী l বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্ট ছাত্রদের বা তাঁদের অভিভাবকদের কথা এখানে বলা হচ্ছে না l

কিন্তু এত টাকা ডাক্তারি পড়াতে বিনিয়োগ করে লাভ কি? বেসরকারী নার্সিংহোম বা হাসপাতাল খুলতে একজন ডাক্তার দরকার হয় l যেমন আমরির মালিক টোডিরা হলেও লাইসেন্স নেয়া হয়েছে ডঃ মনি ছেত্রীর নামে l আর যিনি লাইসেন্স হোল্ডার, তাঁকে সারা জীবন একটা লাভের অংশ গুনে যেতে হয় বিনিয়োগকারীকে l এখন সারা জীবন একজন তৃতীয় বেক্তিকে টাকা না দিয়ে যদি ঘরের ছেলের একটা ডিগ্রি কেনা যায় তবে ক্ষতি কি? পাশ করে ওই বেসরকারি কলেজের ডিগ্রি পাওয়া ওই ডাক্তার একটি বেসরকারি নার্সিংহোম খুলবেন এবং সেখানে চাকরি করবেন CMC /NRS /RG KAR থেকে পাশ করা দেশের সেরা মেধাবী ডাক্তাররা l সরকার খরচ শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে বরাদ্দ কমিয়ে এই বাবাসার সুযোগ করে দেবে, আর এই নার্সিংহোম ব্যাবসায়ীরা গরিব মানুষের ঘটি বাটি বেঁচিয়ে তাদের রাস্তায় বসাবে l এই ভাবেই বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ব্যাবসার চাহিদা ও যোগানের অর্থনীতি চলছিল 2017 পর্যন্ত l

বাধ সাধলো NEET পরীক্ষা চালু হয়ে l এই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় পাশ না করলে ডাক্তার হবার ছাড়পত্র পাওয়া যায় না l এখন ওই আলালের ঘরের দুলালরা সেই পরীক্ষা পাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং খালি যাচ্ছে কালো টাকায় তৈরী ওই বেসরকারী কলেজগুলির হাজার হাজার আসন l তাঁরা এখন ধরেছে জুনিয়র স্তালিনকে l স্তালিন আইন পাশ করেছে যে তামিলনাড়ু NEET মানবে না l তারা অবশ্য না মানতেই পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে যারা তামিলনাড়ু থেকে পাশ করবে তাঁদের কোয়াক হিসেবে গন্য করা হবে l কারণ কেন্দ্র সরকার শিক্ষায় এই কালোবাজারি শেষ করতে বধ্যপরিকর l এই বিলকে মান্যতা দেবার প্রশ্নই নেই l

এই বিলের সমর্থনে বিভিন্ন NGO, কিছু আঞ্চলিক দল এবং বামপন্থী দলগুলি নেমেছে l তাঁরা বলা শুরু করেছে NEET এ নাকি গ্রামের ছেলেমেয়েরা চান্স পাচ্ছে না l গরিব -বড়লোক রাজনীতির মোড়কে, মূল দুর্নীতির থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে l আনন্দবাজারও নেমে গেছে যথারীতি তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে এবং ‘অনুপ্রাণিত’ লিভার ফাউন্ডেশনের সচিবকে নিয়ে এসেছেন কালো টাকাকে সাদা করার অর্ধশতকের কারবার বজায় রাখতে l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.