আফগানিস্তানে তালিবানের রাজ্যপাট দখলে বাংলাদেশের ও ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্রভর্তির নতুন জোয়ার এসেছে। “বাংলা হবে আফগানিস্তান আমরা হবো তালিবান” এই স্লোগানের জিগির তুলে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোকে বিপুল পরিমান অর্থ ও জনবলের দ্বারা ব্যাপকভাবে পুষ্ট করার পাশাপাশি জেহাদিদের নজর পশ্চিমবঙ্গের বিভন্ন দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলো যেগুলো তবলীগি জামাতের মদতপুষ্ট।
সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক খবর গোয়েন্দা মহলে চাঞ্চল্যের ও জনমানসে ভীতির সঞ্চার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয় হুগলির ডানকুনি সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় বর্তমানে এক হাজারের বেশি পড়ুয়া রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ২০০জনই বাংলাদেশি।
বলা হয় বিভিন্ন সময় চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসা দম্পতিরা নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করেছিল। সম্প্রতি এমনই পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশি পরিবার নদীয়ার হাঁসখালি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
তৎপর বিএসএফ জওয়ানরা তাদের ধরে ফেলে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই মাদ্রাসায় থাকা বাংলাদেশি পড়ুয়াদের বিষয়টি সামনে এসেছে। ধৃতদের দেওয়া তথ্য বিএসএফের তরফে ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিস ও গোয়েন্দাদের দেওয়া হয়েছে।
৮নম্বর ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডিং অফিসার বি মধুসূদন রাও বলেন,” অনুপ্রবেশ আটকাতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই কারণে মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করা অপরাধীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে। ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য মিলেছে তা পুলিস ও অন্যান্য সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। এতে দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। আমরা কোনওভাবেই অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করব না।”
গত মঙ্গলবার বিএসএফের ৮নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা পাঁচ সদস্যের ওই বাংলাদেশি পরিবারকে হাতেনাতে ধরে। ওই দম্পতি সহ এক কিশোরী ও দুই শিশু রয়েছে। জানা গিয়েছে, ধৃত আজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা। ১২বছর আগে তারা চোরাপথে এদেশে এসেছিল। এরপর ডানকুনিতে একটি বাড়ি ভাড়া করে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। গৃহকর্তা কাঠমিস্ত্রির কাজ করত। তার স্ত্রী সব্জি বিক্রি করত।
বিএসএফের জেরার মুখে আজিবুর বলে, সে সন্তানদের ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিল। তবে তার আগে ডানকুনির এক বাসিন্দা ভুয়ো আধার কার্ড, প্যান কার্ড তৈরি করে দেয়। সেই নথির ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীর নকল পরিচয়পত্র তৈরি করেছে সে। যদিও বাংলাদেশি পড়ুয়াদের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডানকুনির সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমার স্কুলে কোনও বাংলাদেশি পড়ুয়া পড়াশোনা করে না। এটি সরকারি স্কুল। তাই সরকারি নিয়ম মেনেই স্কুলে ভর্তি করা হয়। যারা এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তাদের নথিপত্র দেখেই ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা নিয়েও কেউ স্কুলে ভর্তি হয়নি।
বাংলাদেশি দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিএসএফ আরও জানতে পেরেছে, ওই দম্পতি বড় মেয়েকে হুগলির এক যুবকের সঙ্গে বিয়েও দিয়েছে। ওই দম্পতির বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিএসএফের জেরায় আজিবুর জানিয়েছে, তার মা বাংলাদেশে রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার খবর পেয়ে চোরাপথে ওই পরিবারটি বাংলাদেশে যেতে চাইছিল। সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার জন্য তারা নদীয়ার ছোট চুপড়িয়ার আহমেদ নামে এক দালালকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ এখন বাংলাদেশিতে ছয়লাপ। নির্দষ্ট ধর্মালম্বী জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজ্যকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলা যেমন এক চিন্তার কারণ তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রবণতা বিপদজনক বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মাদ্রাসাগুলোর সাথে জঙ্গিযোগের সুস্পষ্ট প্রমানের কথা গোয়েন্দা আধিকারিকরা বলেই থাকেন। আসাম ও উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।