সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে নবান্নের ইকুয়েশনটা কি কেউ জানেন ?
বহুকাল আগে আনন্দবাজারের এক প্রাক্তন সাংবাদিকের মুখে কাহিনীটা শোনা । সাল ২০০৮ । বুদ্ধদেব মুখ্যমন্ত্রী । সি ই এস সির বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিড়লা প্ল্যানেটরিয়াম থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস পর্যন্ত মিছিল করলেন । পরের দিনই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা অভীক সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন । অভীকবাবুর নির্দেশে আনন্দবাজারের এক করিতকর্মা সাংবাদিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে আলিপুরে মমতা ব্যানার্জির একটা একান্ত বৈঠকের ব্যবস্থা করলেন ।
হলও সেই বৈঠক নির্দিষ্ট দিনে । সেই বৈঠকে কি কথা হল আজও কেউ জানেন না । যে সাংবাদিক বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনিও মিটিং কক্ষের বাইরে ছিলেন । প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকের শেষে দু জনেই কেউ কোনোদিন আজ অবধি মুখ খোলেননি কি আলোচনা হয়েছিল সেই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ।
মমতা তারপর, ২০০৮ থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম নিয়ে আন্দোলন দূরে থাক কোনোদিন মুখ পর্যন্ত খোলেননি । সেই মিছিলই শেষ মিছিল ছিল । মমতা ক্ষমতায় আসার পর গত দশ বছরে চোদ্দ বার দাম বেড়েছে বিদ্যুতের । সরকার নীরব থেকেছে ।
এ নিয়ে বিরোধী দল, যাঁদের ধারাবাহিক আন্দোলনে যাওয়ার কথা ছিল লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি ছাড়া তারাও খুব বেশি দূর এগোন নি । কেন, তারও উত্তর আজও অধরা ।
আসলে সঞ্জীব অঙ্ক আর মনোবিজ্ঞানে খুব পাকা । ২০০৬ এ যেদিন বুদ্ধদেব ক্ষমতায় ফিরেছিলেন সেদিন হর্স নেওটিয়াকে নিয়ে সোজা আলিমুদ্দিনে পৌঁছে গিয়েছিলেন সঞ্জীব । আবার ২০১১ র পটপরিবর্তনের পর খুব দ্রুত কালীঘাটে সম্পর্ক ঝালাইও করে নিয়েছিলেন । ফলে cesc নিয়ে সঞ্জীবকে ভোগান্তি বেশী পোয়াতে হয়নি ।
রেগুলেটরি কমিশনকে ঢাল করে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নিয়ম করে । পাবলিক গুনাগার দিয়ে গেছে ।
পাছে এসব নিয়ে লোকজন ক্ষেপে ওঠে খেয়াল করবেন প্রতি তিন মাসে একবার cesc বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায় কলকাতায় বিদ্যুতের দাম নাকি বেশ কম । লক্ষ করবেন একটা নির্দিষ্ট স্ল্যাবের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনে । লোকে ভাবে তাই তো !
আসল চিত্রটা আদতে কি ?
একটু চোখ বোলাই ট্যারিফে।
কলকাতার আশে পাশে cesc প্রথম ২৫ ইউনিটে দাম নেয় ইউনিট পিছু ৪ টাকা ৮৯ পয়সা । পরের ৩৫ ইউনিটে নেয় ইউনিট পিছু ৫ টাকা ৪০ পয়সা । তারপরের ৪০ ইউনিটে নেয় ৬ টাকা ৪১ পয়সা । পরের ৫০ ইউনিটে ৭ টাকা ১৬ পয়সা, তারও পরের ইউনিটে নেয় ৭ টাকা ৩৩ পয়সা ।
হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রথম ২০০ ইউনিটে প্রতি ইউনিট পিছু cesc আমার আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে ৭ টাকা ৩৩ পয়সা । এরপর ৩০০ ইউনিটের ওপর উঠলেই সেই দাম প্রতি ইউনিট পিছু হয়ে যাচ্ছে ৮ টাকা ৯২ পয়সা ।
এবার পাশের রাজ্য ওড়িশায় চলুন । হিসেবটা দেখুন ।
সম্প্রতি সেখানে ৩০ পার্সেন্ট দাম বেড়েছে বিদ্যুতের । দাম বাড়ার পরও অবস্থাটা কি সেখানে দেখুন ।
প্রথম ৫০ ইউনিটের জন্য ওড়িশার মানুষ এখন দিচ্ছেন প্রতি ইউনিট পিছু ৩ টাকা ( যেখানে cesc কলকাতায় নিচ্ছে ৪ টাকা ৮৯ পয়সা ) ।
পরের ৫১ থেকে ২০০ ইউনিট ওড়িশার মানুষ দিচ্ছেন ৪ টাকা ৮০ পয়সা প্রতি ইউনিট ( যেখানে cesc কলকাতায় নিচ্ছে ৭ টাকা ১৬ পয়সা প্রতি ইউনিটে ) ।
এরপর ৪০০ ইউনিটের ওপর ওড়িশার মানুষ দিচ্ছেন প্রতি ইউনিটে ৬ টাকা ২০ পয়সা ( সেখানে এখানে cesc নিচ্ছে ৮ টাকা ৯২ পয়সা ) ।
আর ঠিক এইভাবেই চলছে পকেটমারি । সরকার বিরোধী পক্ষ সবাই মুখে সেলোটেপ বেঁধেছেন । আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময়ে কোন দিন দেখবেন না এ নিয়ে রিপোর্ট । ঘণ্টা খানেক, ক্রস ফায়ার, জনতার দরবারে নব ঘুরিয়েও পাবেন না কোন ডিবেট ।
কি অদ্ভুত যাদু মন্ত্রে সবাই বধ হয়ে আছেন ।
বলছিলাম না সঞ্জীব শুধু অঙ্কে নয়, মনোবিজ্ঞানেও বেশ পাকা ।
আপনার পকেট খসছে, অথচ আপনিও কিরকম নীরব । এ কি যাদুমন্ত্র নয় ? কি বলবেন ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)