পশ্চিমা গণতন্ত্র কেন মুসলিম দেশে অবাস্তব? ইসলামিক অভিনন্দন ও চীনা প্রবাদ থেকেই সহজে বোঝার চেষ্টা!

সালাম ও আস সালাম আলাইকুম বা আদাব কখন ও কেন বলবেন?
Greeting: আস সালাম আলাইকুম (ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ‎)- Peace be upon you- শান্তি আপনার সহায় হোক ( কেবল মুসলিম মুসলিমকে দিতে পারে, অন্য ধর্মাবলম্বী দের দেওয়া নিষিদ্ধ )
Response: ওয়া আলাইকুম এস সালাম ওয়া রহমাতু ইলাহী ওয়া বরকতু (ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ ) -Peace be upon you, as well as the mercy of God and his blessings – আপনারও শান্তি সহায় হোক এবং আল্লার দয়া ও আশীর্বাদ আপনার উপর বর্ষিত হোক ( মুসলিমরা মুসলিমকে প্রত্যুত্তরে বলবে)

সালাম- শান্তি , অভিনন্দন ( মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে ও অন্য ধর্মের লোকদেরকে দিতে পারবে। হয়ত ইসলামের পূর্বে এই সালাম শব্দটাই বহুল প্রচলিত ছিল! সালাম-এর প্রত্যুত্তরে সালাম বললেই হয়!

আদাব: পুরো শব্দটা ḥusn al-ʾadab min al-ʾīmān- যার বাংলা হল–ভালো আচরণ বিশ্বাসের অংশ। সুফী মতে, শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে অভিনন্দন জানানো চলে আদাব দিয়ে। মুসলিম অমুসলিমরা পরস্পর পরস্পরকে আদাব বলতে পারে ও বলে!

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শব্দগুলোর ব্যাখ্যা ও সমাজের উপর তার প্রভাব :

সালাম ও আস সালাম আলাইকুম:
বেদুইনরা হয়ত আমাদের দেশের দু’পাড়ার মস্তান মাফিয়া বা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মতো মারামারি হানাহানি করেই দিন কাটাত। অশান্তির পরিবেশ বিরাজ করত। কেউ কাউকেই বিশ্বাস করতে পারত না। তারপর তাদেরকে যখন ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হল, তখন নিয়ম চালু হল: নিজেদের মধ্যে আর মারপিঠ খুন লুঠ অবিশ্বাস অশান্তি করা যাবে না। যেহেতু সবাই সবাইকে ভয় পেত ও অন্যদের থেকে খুন অশান্তির আশংকা করত, তাই মুসলিমদের দেখা হলেই সম্বোধনের নিয়ম করে দেওয়া হল: আস সালাম আলাইকুম ! এর অর্থ, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি খুন মারপিঠ লুঠ করতে আসিনি। আমি শান্তি চাই। আপনার মনেও শান্তি ফিরে আসুক। মোটেই অশান্তির চিন্তা করবেন না। এরপর মুসলিম প্রতি-উত্তরে বলা শুরু করল, হ্যাঁ ভাই আমি শান্তি চাই, যেহেতু আপনি শান্তি চেয়েছেন। আপনার মনেও শান্তি আসুক, আল্লার দয়া ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। আর সবাই জানে আল্লার দয়া ও আশীর্বাদ থাকলে মানুষ যা চায় তা পায়, অন্যের সম্পত্তি নারী ক্ষমতা হরণ করতে হয় না।

যেহেতু অমুসলিমরা কোনও মতেই শান্তি পাবার যোগ্য নয়,কেবল শাস্তি পাবার যোগ্য, তাই তাদেরকে ‘ আস সালাম আলাইকুম’ বলা নিষিদ্ধ । এরা অমুসলিমদের কাছে প্রচার করত, ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানে যদি ইসলাম গ্রহণ কর, তোমার সঙ্গেও শান্তি চুক্তি হবে। তোমাকেও সালাম ও আস সালাম আলাইকুম বলা হবে। নতুবা তুমি আমাদের শত্রু। তোমাকে ধ্বংস করা আমাদের দায়িত্ব। বাংলায় যদি কেউ বলে, জয় মা মাটি মানুষ , প্রত্যুত্তরে আপনিও জয় মা মাটি মানুষ বললে, শান্তি চুক্তি হয়ে যায়। ধরেই নেওয়া হয়, এক দলের কর্মী। “বন্দেমাতরম” বললে ঠিক বোঝা যায় না, আপনি কংগ্রেস না তৃণমূল না বিজেপি। কিন্তু সালাম বললে যেমন বোঝা যায়, আপনি আরবীয় অঞ্চলের মানুষ, তেমনি বন্দেমাতরম বললে বোঝা যায়, আপনি ভারতীয় হিন্দু। তবে কমুনিস্ট হিন্দু নন। যে হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু নাম রেখেই কমিউনিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে, তারা বন্দেমাতরম বলে না, বলে উর্দু ভাষায় ইনকিলাব জিন্দাবাদ- মানে বিপ্লব ( যার অপর নাম হতে পারে অশান্তি) দীর্ঘজীবী হোক! মানে অশান্তি বজায় থাকুক সমাজে।

সালাম: ওই সমাজে নানা অভাবের জন্য সব সময় অশান্তি বিরাজ করত। তাই সবাই সবার সঙ্গে দেখা হলেই বলত, শান্তি চাই, শান্তি রক্ষা করুন। হিন্দুদের ওঁম শান্তি আর সালাম-এর শান্তি এক নয়! ওঁম শান্তি হলো মানসিক শান্তি।

আদাব: এই শব্দটি দিয়ে শান্তি চুক্তি হয় না। আদাব সেই অর্থে আমার দৃষ্টিতে একটা সাবধান বাণী! আদাব দিয়ে বিধর্মীদের বা অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সাবধান করা হয়, আপনার আচরণ যদি ঠিক থাকে, আপনি এ যাত্রা বেঁচে যাবেন। আচরণ মানে আপনি যা করবেন। কিন্তু যদি আপনাকে সেই সময় ইসলামে দাওয়াত দেওয়া হয় বা অন্য দলে যোগদান করতে বলা হয়, আর আপনি যদি তার বিরোধিতা করতেন, তা হলে তো আপনার আচরণ গ্রহণযোগ্য হল না। অতএব আপনার সঙ্গে শান্তি চুক্তিও হবে না। কুল্লু খালাস করেই সে ক্ষেত্রে আপনার বিরুদ্ধ পক্ষ তাদের মনে শান্তি আনবে।

নমস্কার: হিন্দুরাই এটা বলে। সব ধর্মের লোকদের হিন্দুরা এটা বলতে পারে। কারণ হিন্দু ধর্মের পরেই বর্তমান প্রচলিত বাকি সব ধর্মের সৃষ্টি। এর অর্থ হল, আপনাকে প্রণতি নিবেদন করছি। আপনার উপর সব কিছু সমর্পন করছি। অর্থাৎ আপনার প্রভুত্ব স্বীকার করছি। এক অর্থে শান্তি চুক্তি। আসলে সামনের ব্যক্তিকে বললেও, নমস্কার দেয় ভগবানকে। প্রভুত্ব স্বীকার করলেই শান্তি আসে বটে। কারণ প্রভু যা বলে, সেটাই মেনে নেওয়া হয়। নমস্তে মানে আপনাকে প্রণাম।

মডার্ন জ্ঞানী ও শিক্ষিত সমাজে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ “শুভদিন” গ্রিটিং আমার কাছে বেশি পছন্দের ঠেকে!

সবাই এক মতের হলে শান্তি আসে অথবা অন্যমতের লোকদের বিনাশ করে দিলেই শান্তি আসে!

চীনের প্রবাদ: শত্রুকে বন্ধু বানিয়ে নাও বা শত্রুকে বিনাশ করে দাও! ইসলামেও একই নিয়ম! হয় ইসলাম গ্রহণ করে শান্তি বজায় রাখো, নতুবা মরো। তা হলে ইসলামে কেন শান্তি এখনও এল না? কারণ সবাই একই মতের ইসলাম চর্চা করে না। সবাই যেদিন উদাহরণ স্বরূপ ওহাবী মুসলিম হবে, একই ভাষায় কথা বলবে, একই পরিবারের হবে, সবার সমান অধিকার ও দায়িত্ব থাকবে, সেদিন সব ওহাবী মুসলিমই শান্তিতে থাকবে। সেটা কি কেয়ামতের পূর্বে হবে? আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের একই নিয়ম। হয় সরকারি দল করো বা ভোগো। তাই গণতন্ত্র ইসলামে নেই, চীনা সমাজেও নেই।

কেন গণতন্ত্র সব দেশে সম্ভব নয়?

যেহেতু চীনা ও ইসলাম সমাজে বহুত্ববাদ নিষিদ্ধ, তাই কখনই সেই দেশে গণতন্ত্র সফল হবে না। পশ্চিমারা বা কমুনিস্টরা যদি ইসলামী জ্ঞানী মনোবিদদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করত, তা হলে মুসলিম দেশে পশ্চিমা গণতন্ত্র আনার জন্য এত লড়াই বা টাকা ইনভেস্ট করত না। মার্কিনরা জাপান , জার্মানি ও কোরিয়াতে মডার্ন গণতন্ত্র কায়েম করতে পেরেছে , ওই দেশগুলো অমুসলিম দেশ হওয়ার জন্যই। চীনারা মুসলিম সমাজের মূল ব্যাপারটা বুঝেছে। তাই ওরা প্ল্যান করে এক দেশ এক ধর্মের নীতি কার্যকর করবে ও তাদের সঙ্গে শান্তিতে ব্যবসা করবে । ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যান্ড রুলের মডার্ন সংস্করণ। ইউরোপিয়ানরাও এখন বুঝেছে, যে ইসলামের সঙ্গে দূর থেকেই ভালো সম্পর্ক রাখা উচিত। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পশ্চিমারা হয়ত অমুসলিম দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বা গণতন্ত্র থাকলে সেটা মজবুত করে মিলে মিশে বাঁচবে। রাশিয়াও সেই গণতন্ত্রের সঙ্গী হবে বলে আমার বিশ্বাস। চীনের এখন সঙ্গী হওয়া কঠিন, তবে এক সময় অসম্ভব হবে না , যদি সাধারণ চীনারা আরও শিক্ষিত ও আর্থিক স্বাবলম্বী হয়। তেমনি যে মুসলিম দেশগুলোতে গণতন্ত্র আছে, সে দেশগুলোতে শরীয়ত তন্ত্র চালু করে, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার একটা চেষ্টা চলবে, তবে শরীয়ত টিকে থাকলেও সেই দেশে গণতন্ত্র টিকবে কিনা, বলা মুশকিল। বিশ্ব কার্যত ধর্মকে ভিত্তি করে দু ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। তবে অমুসলিম বিশ্বে তখনই শান্তি থাকবে, যদি খ্রিস্টানরা ধর্ম প্রচার ও প্রসার নিষিদ্ধ করে।

মমতা সরকারও মনোবিদ ও ভোটবিদের পরামর্শে সব সময় চলে বলেই ঋণে, বেকারত্বে, অশিক্ষায়, নেশায়, নীতিহীনতায়, দুর্নীতিতে ক্রমশ নিমজ্জিত হলেও মিডিয়া মারফত মমতার প্ল্যানমাফিক ইস্যু চর্চা বাংলায় তথাকথিত শান্তিকে বিরাজমান রেখেছে। সরকার এখনও ক্ষমতায় টিকে আছে। এ নিয়ে না হয় অন্য একটা লেখা হবে।

এবার ভারতীয় নাগরিকদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তববাদী হবার পালা!

মৃণাল মজুমদার, বার্লিন, ১২.০৯.২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.