চাপের কাছে নতিস্বীকার, কুলভূষণকে কনসুলার অ্যাকসেস দেবে পাকিস্তান

অবশেষে পিছু হঠল পাকিস্তান৷ আন্তর্জাতিক আদালতে নৈতিক হার স্বীকার করে কুলভূষণ যাদবকে কনসুলার অ্যাকসেস দিতে রাজি ইসলামাবাদ৷ তবে একটি শর্তও চাপানো হয়েছে সেখানে৷

শুক্রবার প্রায় মাঝরাতে একটি বিবৃতি পোস্ট করে পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রক৷ সেখানে জানানো হয়, পাকিস্তান দায়িত্বশীল দেশ৷ তাই নিজেদের দায়িত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে কুলভূষণ যাদবকে কনসুলার অ্যাকসেস দেবে পাকিস্তান৷ যদিও পাকিস্তানের শর্ত, সেদেশের আইন অনুযায়ী এই কনসুলার অ্যাকসেস দেওয়া হবে৷

তবে কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এতদিন এই দায়িত্ববোধের কথা কেন মনে পড়েনি পাকিস্তানের৷ তাহলে কি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের সামনে পড়ে তাদের দায়িত্ববোধ জেগে উঠল? ভিয়েনা চুক্তির ৩৬ নম্বর আর্টিকলের প্রথম প্যারাগ্রাফ অনুসারে কুলভূষণ যাদবকে কুনস্যুলার অ্যাকসেস দেওয়া হয়নি। এর জেরে কুলভূষণকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর এইভাবে পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেশন লঙ্ঘন করেছে।

জানা গিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে এই ইস্যুতে রীতিমত ভৎর্সিত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ কুলভূষণ যাদবকে দীর্ঘদিন ধরে সেনা জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তাও আবার পাকিস্তানের কোনও এক অজ্ঞাত জায়গায় রাখা হয়েছিল তাঁকে৷

কুলভূষণ যাদবের ক্ষেত্রে দ্রুত কনসুলার অ্যাকসেস চেয়ে পাকিস্তানের কাছে আবেদন করেছিল ভারত৷ নয়াদিল্লির তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিক ইসলামাবাদ৷ সেই মর্মে আন্তর্জাতিক আদালতও পাকিস্তানকে কনসুলার অ্যাকসেস দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷

কি এই কনস্যুলার অ্যাকসেস?

এটি আসলে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। মূলত যে কোনও দুই স্বাধীন দেশের মধ্যে কনস্যুলার রিলেশন বা দূত স্তরের সম্পর্কের একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এটি। কনসাল বা দূত কিন্তু কূটনীতিক নন। একজন কনসাল বিদেশে তাঁর দেশের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। নিজের দেশের মানুষের স্বার্থেই কাজ করেন তিনি।

১৯৬৩-তে এই কনস্যুলার অ্যাকসেস সংক্রান্ত চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনও দেশের নাগরিককে অন্য দেশে গ্রেফতার বা আটক করা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে অবিলম্বে নোটিশ দিয়ে জানাতে হবে যে তাঁর নিজের দেশের রাষ্ট্রদূতকে গ্রেফতারির বিষয়ে জানানোর অধিকার রয়েছে।

যদি আটক হওয়া ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, তাহলে পুলিশ দূতাবাসে একটি ফ্যাক্স মারফত পুরো বিষয়টি জানাবে। ওই ব্যক্তির নাম, কোথা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, সবটাই জানাতে হবে ফ্যাক্স মারফত।

এই নিয়মই পাকিস্তান পালন করেনি বলে ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল৷ সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয় আন্তর্জাতিক আদালতে৷ তারপরেই তিরস্কার করা হয় পাকিস্তানকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.