হিন্দুদের বাড়ি পুড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা, নতুন বাড়ি বানিয়ে ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপহার দিল সেবা ভারতী

গত বছরের জানুয়ারি মাসে তেলেঙ্গনা রাজ্যে ঘটে এক নারকীয় ও বর্বোচিত আক্রমণ।ওই রাজ্যের হিন্দু অধ্যুষিত কোরবাগল্লি অঞ্চলে হিন্দু বিদ্বেষীরা এই আক্রমণ চালায়।গৃহস্থালী ও পোশাক বিক্রির একটি বৃহৎ কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করে দেয় তারা।যাতে পুরো বিপণন কেন্দ্রটাই কয়লায় পরিণত হয়।কত মানুষের প্রাণ গিয়েছে বা কত কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে,তার কোনো সঠিক তথ্য কেউ জানতে পারে নি।ভারতে প্রচলিত প্রথম শ্রেনির সংবাদ মাধ্যমগুলি এই খবর সামনে আনে নি বলে অভিযোগ।স্থানীয় ‘নিজাম টু-ডে’ নামে একটি অন লাইন নিউজ পোর্টাল খবরটি প্রচার করে।তাতেই যতটুকু যা মানুষ জানতে পেরেছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই কোনো সামাজিক সেবা প্রতিষ্ঠান,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হতভাগ্যদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে নি।কিন্তু,তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’-রা যাঁদের তিন বেলা গালি দিয়ে পেটের খাদ্যদ্রব্য হজম করান,সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা সহায়হারা নিঃস্বদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন।ফলে,সব-হারানোর মাঝেও তাঁরা বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পান।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সেবা বিভাগ ‘সেবা ভারতী’-র সহযোগীতায় ‘কেশব সেবা সমিতি’ আধুনিক মানের দশটি বাড়ি তৈরি করেছে এক কোটি টাকা ব্যয়ে।গত ১ সেপ্টেম্বর এই দশটি বাড়ি অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত দশটি পরিবারের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।উপহার-বাড়িগুলি প্রাপকদের তুলে দেন সেবা ভারতীর অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখ পরাগ আভনকর।এই উপলক্ষ্যে ‘সামূহিক গৃহ প্রবেশম‌্’ নামে বৈদিক ক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়।
সর্বহারাদের ‘গৃহ-উপহার’ প্রদানকালে শ্রী আভনকর বলেন, হিন্দুদের নিজেদের মধ্যেকার সব ভেদাভেদ ভুলে দ্রূত একতাবদ্ধ হতে হবে।একতার শক্তি-ই বিশ্বে সব চেয়ে শক্তিশালী। হিন্দু সমাজ ও হিন্দু সামাজিক প্রতিষ্ঠান পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে বিভেদ সরাতে হবে।নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও স্বাভিমান জাগ্রত করার উপরেও তিনি জোর দেন।প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে,রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলি মিলিয়ে দেড় লক্ষেরও বেশি সেবা প্রকল্প সারা দেশে একই সাথে চলেছে।এবং প্রতিদিনই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিনের গৃহ প্রবেশের মঙ্গলানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আদিলাবাদের সাংসদ সোয়াম বাবু রাও।তিনি হিন্দুদের ওপর এই অমানবিক হত্যা ধ্বংস লীলার তীব্র নিন্দা করেন।তিনি প্রতিশ্রুতিও দেন যে,হিন্দুদের যে-কোনো প্রয়োজনে ছুটে আসবেন ও সঙ্গে থাকবেন।
এছাড়াও বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আর এস এস-এর তেলেঙ্গনা রাজ্য সঙ্ঘচালক বার্লা দক্ষিণা মূর্তি,নগর সঞ্চালক রাম মূর্তি, কৃষ্ণদাস,সেবা ভারতীর তেলেঙ্গনা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হরিশ্চন্দ্র,হিন্দু বাহিনির রাজ্য সভাপতি প্রমুখ।
গত বছরের পুরো জানুয়ারি মাস ধরে এখানকার হিন্দুদের ওপর কম-বেশি নির্যাতন চলছিলই।স্বয়ংসেবকরা নানা ভাবে হিন্দুদের রক্ষার্থে সুরক্ষা ও সাহায্য দিচ্ছিলেন।তবুও তাঁরা হতভাগ্যদের রক্ষা করতে পারেন নি।অগ্নি সংযোগে ১২টি পরিবারের ঘর আংশিক ক্ষতি হলেও ১০টি পরিবারের সর্বস্ব আগুনে ভস্মিভূত হয়ে যায়।এই ১০টি পরিবারকেই নতুন বাড়ি বানিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া হল সেবা ভারতী তথা আর এস এস-এর পক্ষ থেকে।
সেবা ভারতী দ্রূত নতুন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়।ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মবিশ্বাস বিকাশের লক্ষ্যে তাঁদেরই বাস্তুজমিতে ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়।তেলেঙ্গনা রাজ্য সেবা ভারতী ও কেশব সেবা সমিতি যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবিত করে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে যে,সেবা ভারতী মহৎ উদ্দেশ্যে ও নিঃস্বার্থ ভাবেই পীড়িতদের সেবা করে থাকে।একাত্মতা,সঙ্ঘবদ্ধতা,অখন্ডতাই তাদের সেবার প্রেরণা।প্রত্যেক ভারতীয়-ই ভারত মাতার সন্তান–এই বোধ শিশুকাল থেকেই প্রতিটি শিশুর মধ্যে সঞ্চালিত করা সব পিতা-মাতারই কর্তব্য বলে সেবা ভারতী তথা আর এস এস মনে করে।দেশের প্রতিটি নাগরিকই বৃহত্তম ভারত পরিবারের সন্তান–এই মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই ক্ষতিগ্রস্তদের সেবায় নিয়োজিত হয় সেবা ভারতী।
বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তের দুষ্কৃতীরা,মানবতা বিরোধীরা তাদের আক্রমণের প্রথম শিকার বানায় আর্থিক ও জনশক্তিগত ভাবে দুর্বলদের।কেন না,দুর্বলদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসতে চায় না সহজে।তেলেঙ্গনাতেও দুষ্কৃতীরা তাই করেছে।যাঁদের বাড়িগুলি সম্পূর্ণরূপে ভস্মিভূত হয়েছে,তাঁদের মধ্যে একজন মাংস বিক্রেতা,একজন ছোট মুদি-দোকানি,একজন কেরানি,দুই জন বিধবা ও দুই জন ভাগ চাষি।দশটি পরিবারের পঞ্চাশ জন সদস্য এক বছরেরও বেশি সময় খোলা আকাশের নীচেয় রাত কাটাচ্ছিলেন।
দীর্ঘ দিন পর নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে তাঁরা প্রত্যেকেই খুশি।সেবা ভারতী ও কেশব সেবা সমিতিকে তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.