মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের মাইনেটাও বাড়লো ।
২০১৬তে অবসরের পরও এই মানুষটি মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই আজও কাজে বহাল । ৫ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই মানুষটির গত পাঁচ বছরের মাইনে একধাপে অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হল । অর্থাৎ ১.৬.২০১৬ থেকে ৩১.৫.২০২১ পর্যন্ত তাঁর বর্ধিত মাইনে হবে মাসে ২ লক্ষ ৫ হাজার ১০০ টাকা । সঙ্গে কেন্দ্রীয় হারে ডি এ । হিসেব করলে মাসে তিনি পাবেন কম বেশী আড়াই লাখের আশে পাশে ।
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত অর্ডার সই করে অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি বি পি গোপালিকা জানিয়েছেন গত ৫ বছরের বর্ধিত মাইনের ৫০ শতাংশ আগস্ট ২০২১এই তাঁকে দিয়ে দিতে হবে । বাকি ৫০ শতাংশ আগামী ৬ মাসের মধ্যে ইনস্টলমেন্টে তাঁকে দিতে হবে । ( বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি নীচে দিলাম) ।
এই বিজ্ঞপ্তিটি হাতে পাওয়ার পর সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের খুব পরিচিত এক সাংবাদিক বন্ধুকে ফোন করে বললাম এত বড় একটা খবর ছাপবে নাকি ! ওয়াটস আপে পাঠালামও প্রতিলিপি । কিছুক্ষন বাদে ফিরতি ফোন পেলাম – না গো ছাপানো যাবে না । বোঝোইতো ।
বুঝি, কেন ছাপানো যাবে না । তাঁদের অসুবিধেটা ঠিক কোথায় সেই সংক্রান্ত আরও একটা প্রমাণ আজই নবান্ন সোর্সে হাতে পেলাম । সেটা নিয়ে অন্য কোন দিন লিখব, প্রমাণ দিয়ে সবিস্তারে ।
আজ শুধু এই বিষয়েই থাকি । কেন খবরটা বড় খবর, একটু ব্যাখ্যা করি । আজ যখন গৌতম সান্যালের মাইনে বাড়ার এই প্রতিলিপি হাতে পেলাম ঠিক তার কিছুক্ষন বাদেই শিক্ষক আন্দোলনের নেতা মইদুল ইসলামের একটা ফোনও পেলাম । অন্য প্রান্ত থেকে মইদুল বলছেন – জানিনা পুতুলদিকে আর বাঁচাতে পারব কি না । কন্ডিশন খুব, খুব খারাপ । খুউউব ক্রিটিক্যাল
আর জি করের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে এখনো এই মুহূর্ত পর্যন্ত বেঁচে আছেন মানুষটি ।
কে এই পুতুলদি ?
পুতুল মন্ডল, চুক্তি ভিত্তিক একজন শিক্ষক, ৬০ এর আশে পাশে বয়স । ২৪ আগস্ট, মঙ্গলবার, দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে যাঁরা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন সেই তাঁদেরই একজন এই পুতুল মন্ডল ।
শিক্ষিকা ছবি চাকী, অনিমা নাথ, জ্যোৎস্না টুডু, শিখা দাসরাও বিষ খেয়েও হাসপাতালে লড়াই করে আপাতত বাড়ি ফিরে এসেছেন । ফেরা হয়নি শুধু পুতুল মণ্ডলের । জীবনের শেষ লড়াইটা এখনও এই প্রতিবেদন পেশ করার সময় পর্যন্ত লড়ছেন । আর জি করের আই সি ইউতে একটা প্রায় নিথর জ্ঞানহীন শরীর এখনো পড়ে রয়েছে ।
পুতুল মণ্ডলের থাকেন কোথায় ?
বাড়ি তাঁর নামখানার ফ্রেজারগঞ্জে । একদম প্রান্তিক প্রত্যন্ত অঞ্চল । নাম মাত্র মাইনেতে বহুদিন ধরে চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকতা করেন এই মানুষটি সেখানকার অমরাবতী শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে । এই শিক্ষকরা যাতে অন্য রাজ্যের মত একটু ভদ্রস্থ মাইনেটা পান সেই দাবি নিয়ে বকখালি থেকে বার বার ছুটে আসতেন পুতুল কলকাতায়, বিকাশ ভবনে । আরও অনেকের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে শুধু কথাটা বলতে চেয়েছিলেন । সেই সৌজন্যটুকুও বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিকাশ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আরও ৫ জনের মত বিষ ঢেলে নিয়েছিলেন গলায় । আর তারপর প্রায় ১৫ দিন ধরে আই সি ইউতে জীবনের শেষ যুদ্ধটাই লড়ছেন ।
পুতুলের বাড়িতে পড়ে রয়েছে ১৭ বছরের নাবালক ছোট্ট একটা ছেলে । স্বামী মারা গেছেন অনেক দিন আগে । থাকেন সেই নামখানায় যেখানে প্রতি বছর নিয়ম করে ঝড় আসে, বন্যা হয় । প্রতিবারই নদী গর্ভে বিলীন হয় যায় থাকার ছোট্ট তাঁর ঘরটা । তারপর দিন রাত এক করে আবার গড়ে তোলেন ঘরটা । ইয়াসের ঝড়ে এই মানুষটি সব হারিয়েছিলেন সম্প্রতি । তারই মধ্যে চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকদের ন্যুনতম মাইনের দাবিতে বারবার ছুটেছেন এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ।
যখনই যেখানে শিক্ষক আন্দোলনের খবর পেয়েছেন সব কাজ ফেলে ছুটেছেন । কখনো মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন । কখনো বিধানসভার ফটকে পৌঁছেছেন । নবান্নের দরজায়, শিক্ষামন্ত্রীর অফিস, বাড়ি, সর্বত্র মাথা ঠুকেছেন । না, কেউ একবারও দেখা করেননি । শেষে বিষ খেয়ে হাসপাতালে ১৫ দিন ধরে আই সি সি ইউতে । ওদিকে বিষ খাওয়ার অপরাধেই মমতার নির্দেশে জামিন অযোগ্য এফ আই আরও ঝুলে গেছে তাঁর নামে, তাঁদের নামে । বদলির চিঠি ধরানো হয়েছে নামখানার ফ্রেজারগঞ্জ থেকে কুচবিহারের এক গ্রামের শিক্ষা কেন্দ্রে । অপরাধ ? কেন নবান্নে গেছেন, কোন সাহসে ?
আজ এই রাতে, প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত, অনেক চেষ্টা করেও পুতুল মণ্ডলের শেষ খবরটা এখনও পেলাম না । বেঁচে আছেন কি না ।
শুধু পাতা উল্টে দেখলাম নবান্নের সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ অবসরের পাঁচ বছর বাদেও বড় টাকার সরকারি চাকরি পেয়েছেন, আলাপন, রাজীব সিনহা, বীরেন্দ্র, মৃত্যুঞ্জয় সিংহ, নবীন প্রকাশরা অবসরের পরেও টুক টুক করে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি চাকরি নিয়ে এক একটা চেয়ারে বসে পড়ছেন । গৌতম সান্যাল, ( আই এ এস না হয়েও) মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে অবসরের ৫ বছর বাদেও শুধু চাকরি করছেন তাই নয়, ২০১৬ থেকেই বর্ধিত মাইনের অধিকারী হচ্ছেন ২০২১এ এসে ।
আর ওদিকে পুতুল মন্ডলরা পাওনা অধিকার নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুধু কথা বলতে চেয়ে একে একে ঢুকে যাচ্ছেন আই সি সি ইউ আর ভেন্টিলেশনে ।
কি বলবেন একে ? এগিয়ে চলা ? বি পি গোপালিকার সই করা, সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকার ছাপতে না চাওয়া, সেই বিজ্ঞপ্তিটি নীচে দিলাম । পড়ুন আর বুঝে নিন কোন রাজ্যে আপনি বাস করছেন !
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)