‘আরএসএস’ এবং তালিবান – একই? সময় এসেছে কিছু তথ্য সংশোধন করার ‘জাভেদ সাহেব’

‘মে বি’, ‘প্রবাব্লি’ ভাষা ব্যবহার করে, বিখ্যাত গীতিকার, কবি জাভেদ আখতার শুক্রবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাথে কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন তালিবান এবং আফগানিস্তান এর উত্থানের সাথে তুলনা করে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এনডিটিভির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আত্মকেন্দ্রিক এই নাস্তিক বলেছেন, “দক্ষিনপন্থীরা তাদের (তালিবান) সমর্থন নিতে পারে এবং তালিবানের মতো হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।”
এই মানুষটি কি আদৌ জানেন তিনি কি তুলনা করছেন? বিশ্বজুড়ে কুপরিচিত ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে ‘আরএসএস’কে তুলনা করা কে একটি সৌখিন অসুস্থতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। দেশ সম্পর্কে ‘আরএসএস’-এর বিচার ধারার উল্টো মানে করে আখতার বলেন, “আমরা যদি কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়া দক্ষিণপন্থীদের উদ্দেশ্য লক্ষ্য করি, তারা একই মানুষ। তাদের নাম ভিন্ন, তাদের মুখ ভিন্ন কিন্তু আমরা যদি তাদের মূল্য বিচারের দিকে তাকাই- এটি একই। সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের কোন ভালোবাসা নেই, তারা চায় নারীরা যাতে স্বাধীন না হয় – তাহলে পার্থক্য কোথায় ?
আরএসএসকে নিজের মতো করে ডানপন্থী সংগঠন বলে অযথা বাম এবং ডানপন্থী তত্ত্বের প্রসঙ্গ তোলা একটি বড় প্রশ্ন টেনে আনে। ‘আরএসএস’-এর সহ সরকার্যবাহ মনমোহন বৈদ্য একবার স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে “আমরা ডানপন্থী নই বামপন্থীও নই”। আমরা কেবল ভগবান রামের ভক্ত। কিন্তু একবার একটি তত্ত্ব জন্ম নিলে, তা চলতেই থাক। আরএসএস বোঝা কি এতটাই কঠিন? এই ‘উদার চিন্তাবিদ’, ‘নাস্তিকদের’ মন্তব্য ‘আরএসএস’-এর মতাদর্শকে কিভাবে এতটা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে? এটি হল পরবর্তী বড় প্রশ্ন যা আমি মনে করি যতক্ষণ না আমি তাদের ‘অসুস্থ চিন্তার’ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারছি, ততক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ‘আরএসএস’ -এর সংস্পর্শে আসেননি, অবশ্যই সেই সকল মানুষ সঙ্ঘ সম্পর্কে মারাত্মক ভুল ধারণা পোষণ করেন।
না, আমি এখানে সংগঠনটির কার্যকারিতা, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক বা তারা সমাজের জন্য কি করে তা রক্ষার জন্য আসিনি! কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন আমি স্পষ্টভাবে উত্থাপন করতে চাই – ‘আরএসএস’-এর এমন একটি কার্যকলাপ বলুন যা এই চিন্তাবিদদের ‘আরএসএস’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ভাবতে বাধ্য করে? শুধুমাত্র একটা বলুন! আরএসএস -এর বিচার ধারা সবসময় ‘ধর্ম ও কর্ম’-কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছ। কোনো বিশেষ ধর্মের চারপাশে বা সংখ্যালঘুদের বা মহিলাদের অসম্মান করে নয়। এখানে লক্ষ লক্ষ মুসলিম, খ্রিস্টানও রয়েছেন যারা আরএসএস-এর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নততর রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে চলেছেন। এমন কোটি কোটি নারী আছেন যারা প্রকৃতপক্ষে (কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই) তাদের পূর্বপুরুষদের মতো ভারতীয়ত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। তাতে দোষ কোথায় ? এটা কি সন্ত্রাস করার মত ব্যাপার?
আরএসএস এবং সাধারণভাবে আরএসএস সমর্থিত পুরুষদের দ্বারা মহিলাদের সবসময় সম্মান করা হয়েছে। আফগানিস্তানের মত, এখানকার নারীদের কখনোই শিক্ষা, চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়নি কারণ তারা নারী বলে। নারীদেড় কখনোই কোনঠাসা করে দেওয়া হয়নি। তারা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তাদের কখনো আঘাত করা হয়নি, কারণ তারা নারী। আমার জ্ঞান অনুসারে ‘আরএসএস’ কেবলমাত্র একটি দিকই তুলে ধরেছে তা হল – সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভারতীয়ত্বের প্রতি নারী -পুরুষ উভয়েরই শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আমার সেই ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা হয় যারা বলে যে সঙ্ঘ শুধুমাত্র ‘পুরুষকেন্দ্রিক’ একটি সংগঠন! “নারীরা সবসময় ‘ভারতবর্ষে’ সমান অবদান রেখেছে। অতীতেও সামাজিক সংস্কার এবং স্বাধীনতার অঙ্গপ্রতঙ্গে নারীরা জড়িত ছিল। তাহলে, ভারতে নারী বা সংখ্যালঘুদের কোনও রকম মানবাধিকার খর্ব না হওয়া সত্ত্বেও আমি কিভাবে ‘আরএসএস’-কে তালিবানের সাথে তুলনা করব?

http://cartoonistchella.blogspot.com/2021/09/the-taliban-menace.html


প্রকৃতপক্ষে, এই ‘উদার চিন্তাবিদদের’ গভীরভাবে বিবেচনা করে, এটা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে সঙ্ঘের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং সামাজিক স্বীকৃতি তাদের বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে এবং এর স্পষ্ট প্রতিফলন সঙ্ঘের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ও মানহানির চেষ্টা।
মূলত, যেহেতু ‘আরএসএস’ তার কর্মদর্শন, তার উদ্দেশ বা আদর্শের উজ্জ্বল প্রচার করে নি, উপরন্তু যোগ করা হয়েছে, তার প্রতিপক্ষের দ্বারা উত্থাপিত ভুল তথ্য এবং মিথ্যার পর্ব। এবং তা পরিস্থিতিকে এতটাই জটিল করে তুলেছে যে সাধারণ জনগনের কাছে সত্যকে উপলব্ধি করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। এবং তারপর ‘ডিসমেনটেলিং হিন্দুত্ব’-এর মতো এই বৈশ্বিক সম্মেলনগুলি সত্যেকে আরও দূরে সরিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত প্রচেষ্টা করে চলেছে। ‘আরএসএস’কে সঠিক ভাবে বোঝার একমাত্র উপায় হল – ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এটি অনুভব করা বা এর সম্পর্কে সঠিক এবং বাস্তব বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করা। আমি নিশ্চিত যে ‘জাভেদ সাহেব’ তার মন্তব্য ব্যাক্ত করার আগে উপরোক্ত একটিও করেননি।
যখন ‘জাভেদ সাহাব’ সঙ্ঘ এবং তালিবানকে তুলনা করার সাহস করেছেন, তখন তার জানা উচিত ছিল যে অতীতে তালিবানরা শরিয়া আইনের কঠোর সংস্করণ প্রয়োগ করেছে। পূর্বে এবং আজও নারীদের কাজ বা পড়াশোনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং সাথে পুরুষ অভিভাবক না থাকলে তাদের বাড়ি থেকে বেড়ানোর অনুমতি নেই। দুর্ভাগ্যবশত আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড এবং মারধর এখন প্রায়শই ঘটনা হয়ে উঠবে, পশ্চিমা চলচ্চিত্র এবং বই নিষিদ্ধ করা হবে, এবং ইসলামের পক্ষে নিন্দনীয় হিসেবে দেখা সবরকমের সাংস্কৃতিক নিদর্শন অবলীলায় ধ্বংস করা হবে। ভারতে কি কখনও এমন হয়েছে?
তালিবান একটি প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থার দাবি করে যেখানে সঙ্ঘ ‘ধর্ম-কর্ম’ ব্যবস্থা, নারীসম্মান, নারীসুরক্ষার দাবি করে। না, কোনোভাবেই – এই দুই মতাদর্শ সমান্তরালভাবে চলতে পারে না। তারা ভিন্ন, তাদের উদ্দেশ্যও ভিন্ন। এছাড়াও, আমি মনে করি, এটাই সময় ‘আরএসএস’-এর, এই ধরনের ‘নাস্তিক, ‘লিবারেল’ লোকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সত্যের ভুল ব্যাখ্যা করে জন সাধারণকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সর্বোপরি আমরা প্রার্থনা করি, “আমাদের বিজয়ী সংগঠিত শক্তি, ঈশ্বরের আশীর্বাদ দ্বারা, আমাদের ধর্মকে রক্ষা করতে এবং আমাদের এই রাষ্ট্রের গৌরবকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে সক্ষম হোক”

সিদ্ধি সোমানি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.