‘এভাবে চললে পার্টি টিএমসি হতে বেশি সময় লাগবে না’ – বিস্ফোরক বিজেপি নেতা

রাজ্য নেতৃত্বকে এড়িয়ে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে লাগাতার যোগদান পর্বে রাজ্য বিজেপির অনেকেই ক্ষুব্ধ। সূত্রের খবর, রাজ্যেরই এক পর্যবেক্ষক (যিনি দিল্লির এক প্রভাবশালী নেতা) রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, রাজ্যের স্থানীয় নেতৃত্বকে এড়িয়ে দিল্লিতে দলে যোগ দিতে পারবেন না কেউ। এতে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে গোলমাল বাধার সম্ভাবনা রয়েছে।

যা খবর, রাজ্যের কিছু নেতা মুকুলের ‘দিল্লি অভিযান’ নিয়ে আপত্তি তুললে ওই পর্যবেক্ষক নিজের রায় জানিয়েছেন।

অন্যদিকে মনে রাখা প্রয়োজন, দিল্লিতে প্রতিবার দলবদলে পর্বের সময় মুকুল রায়ের সঙ্গে থাকেন রাজ্যের মুখ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। দিন দয়াল উপাধ্যায় মার্গে সদর দফতরে বসে মুকুল এবং কৈলাস মিলে গুচ্ছ নেতাদের বিজেপির পতাকা তুলে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে যে পর্যবেক্ষক দিল্লি অভিযানে ‘না’ করছেন, সেই পর্যবেক্ষক একপ্রকার কৈলাস-মুকুলের বিরোধিতা করছেন বলেই ধরে নিয়েছে দলের একাংশ।

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যস্তর এবং জেলাস্তরের নেতাদের কি কোনও সম্মান নেই? তাদেরকে না জানিয়েই দিল্লিতে যোগদান হয়ে যাচ্ছে। এটা চলতে পারে না। ‘এনাফ ইজ এনাফ’। আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, রাজ্যকে না জানিয়ে, স্থানীয় সংগঠনকে না জানিয়ে কোনও যোগদান দিল্লিতে হবে না।”

সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের আরও কথা, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি যোগদান করেন, দিল্লি থেকে কাউকে আনার কথা ভাবা যেতে পারে। পার্থ (চট্টোপাধ্যায়) যোগদান করলে রাজ্য সভাপতি রয়েছেন। … রাজ্যে একটা স্রোত ছিল, আমরা অনেক সহ্য করে নিয়েছি। যে খুশি সে বলছে দিল্লিতে গিয়ে পতাকা নেব। এর থেকে ওর থেকে পতাকা নেব। এসব আর মানা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে পার্টিতে ‘টিএমসি’ হতে বেশি সময় লাগবে না।”

রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ বিষয়টি নিয়ে চুপ। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বলছেন, “রাজ্য দলের এই রকম কোনও সিদ্ধান্তের কথা অন্তত আমি জানি না। আমার সামনে হয়নি।” পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির জাতীয় সম্পাদক এবং দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি নন। রাহুলের পরিষ্কার কথা, “আমি কিছুই বলব না।” আবার অন্যতম, সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “রাজ্যের কিছু নয়। দিল্লির সিদ্ধান্ত। জেলা স্তরে স্ক্রিনিং কমিটি এবং রাজ্যস্তরে স্ক্রিনিং কমিটি থাকবে। যোগদান নিয়ে তারাই শেষ কথা বলবে। রাজ্যকে না জানিয়ে দিল্লিতে যোগদান করা যাবে না।”

প্রসঙ্গত, মুকুল রায়ের নেতৃত্বে বিজেপিতে অনেকেই যোগ দিয়েছেন। কিন্তু, বিজেপির একটি বড় অংশের অভিযোগ, রাজ্য পার্টিকে না জানিয়েই তিনি অনেক ব্যক্তিকে দলে এনেছেন। ওইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দল এবং দলের বাইরে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আপত্তির কথা জানিয়েছে। কিন্তু, মুকুলের সঙ্গে রয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সেক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিয়েও দলে অস্বস্তি রয়েছে। তবে আপাতত যা মনে হচ্ছে, কৈলাস-মুকুলের দিল্লি অভিযানের বিরুদ্ধে একজোট হয়েই প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে রাজ্য বিজেপিতে।

বিজেপিতে এখন দেশ জুড়ে বিজেপির সদস্যতা অভিযান চলছে। এর মধ্যেই রবিবার মুকুল রায়ের নেতৃত্বে আলিপুরের কিছু নেতা বিজেপিতে আসার জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যা খবর, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের আপত্তিতে সেই যোগদান শেষ পর্যন্ত হতে পারেনি। অভিযোগ ওঠে দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে না জানিয়েই মুকুল ওই যোগদান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে যাচ্ছিলেন। সেক্ষেত্রে মুকুল আবার দলের মধ্যে থেকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সমস্ত বিষয়টিতে মুকুল রায়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ট কর্মীরা ফোন ধরে বলেছেন, তিনি কথা বলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.