ঝাড়খন্ডের গুমলা জেলার সঞ্জীতা কুমারীর কথা আপনারা কেউ বলবেন না

প্রিয় বিপ্লবী,

আর্বান নক্সালদের পুলিশ হুড়কো দেওয়ায় আপনাদের চোখ ফেটে জল এসেছিল। আপনারা ‘মানবাধিকারের’ কথা বলেছিলেন। তার আগে, মার্কেটে শোরগোল হওয়ায় আপনারা মালালা ইউসুফজায়েকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রতিভূ হিসেবে। (যদিও সেক্ষেত্রে ‘ইসলামিক টেররিজম’কে বলেছিলেন ‘সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম হয় না’, কারণ মালালার মাথায় যে গুলি চালিয়েছিল সে তো জিহাদ-সংগ্রামী একেবারেই নয় কিনা)। সেই মালালা অনেক দূর দেশের মেয়ে।

নিজের দেশের মেয়ে, ঝাড়খন্ডের গুমলা জেলার সঞ্জীতা কুমারীর কথা আপনারা কেউ বলবেন না। এখনো পর্যন্ত কাউকে বলতে দেখছি না আমি। মেয়েটি মাওবাদী ‘বিপ্লবী’ সংগঠনের সদস্য ছিল। কিন্তু সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল, শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। তাই দল ছেড়ে পালিয়েছিল সে, স্কুলে ভর্তি হবে বলে। ‘বীর’ মাওবাদীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে এই কিশোরী। স্কুলে ভর্তি হওয়ার অপরাধে। আপনি কী জানেন না? নাকী আপাতত আপনার চোখে ঠুলি?

মৃত্যুর কিছু মাস আগে হিন্দুস্তান টাইমসের এক সাংবাদিককে জানায় সঞ্জীতা কুমারী, যে সে চাইলেও আত্মসমর্পন করতে পারছে না, কারণ তা করলে তার পরিবারকে খুন করবে ‘বিপ্লবী’রা। সে জানায়, যে বিপ্লবীদের ক্যাম্পে দৈনন্দিন বেসিসে চলছে নারী সদস্যদের ওপর যৌন নির্যাতন (কারণ মহিলা সদস্য ‘বীর’ বিপ্লবীদের যৌনক্ষুধা মিটিয়ে ‘বিপ্লব’কে সার্ভিস দিচ্ছে, সেখানে আবার কনসেন্ট কিসের?), এবং চলছে গর্ভপাত (কারণ বিপ্লবী মহিলার মা হওয়ার অধিকার নেই)। প্রিয় বিপ্লবী, আপাতত কী আপনি পড়তে ভুলে গেছেন? শুনুন, ‘দেখতে পাইনি’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার আগে আপনাকে জানাই, ওই ক্যাম্পের বেশ কিছু মেয়ে নাবালিকা (আপনি আসিফার দুঃখে উদ্বেল হয়েছিলেন বলে জানানো কর্তব্য মনে করলাম)।

প্রিয় বিপ্লবী, চাড্ডীরা তো শভিনিস্ট, আমরা জানিই। কিন্তু আপনি যে আমায় বলেছিলেন, কমিউনিজম ছাড়া নারীমুক্তি সম্ভব নয়? আপনি যে বলেছিলেন, আপনি মুক্তচিন্তার কান্ডারী? সুধী, অশিক্ষার অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া, যৌননির্যাতনের শিকার হওয়া, নারীমুক্তি কীভাবে হয়ে যাচ্ছে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন? আমার যে নিজেকে আ্যলিস মনে হচ্ছে, আর আপনার কমিউনিজমকে ওয়ান্ডারল্যান্ড!

আমাদের দেশের কোর্ট বলল, ডেমোক্রেসির নাকী সেফটি ভালভ দরকার। আপনারা বললেন, ‘এনকোর! এনকোর!’ কিন্তু আপনাদের এই সেফটি ভালভটি ঠিক কেমন, কতটা সেফ আদৌ, তা কী তলিয়ে ভাবলেন? হিপোক্রেসির নাম ‘ভীমনাগের সন্দেশ’ বা ‘শ্রেণীসংগ্রাম’ যাই দিন, তা তো হিপোক্রেসিই থাকে। তাই না?

প্রিয় সুধী, এবার কী আপনি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে সঞ্জীতা কুমারী বিপ্লবের স্বার্থে বলিপ্রদত্ত হয়েছে? আপনি কি বলতে চাইবেন, যে আপনার ঢপের চপ অথবা কমিউনিজম একদিন না একদিন শ্রেণিহীন সমাজ আনবেই, আর যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন মেয়েরা ‘বিপ্লবের সেবাদাসী’ হয়ে থাকবে (এবং তার পরেও), কারণ বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক?

প্রিয় বিপ্লবী। এরকমই যদি বলতে চেয়ে থাকেন, তাহলে নিজের পায়ের জুতোটা খুলে নিজের গালে মারুন। কারণ ধর্মের ধ্বজাধারীরা অন্তত ঘোষিত শভিনিস্ট। আপনার মত বিপ্লবীরা নারীবাদের পিঠে ছুরি মেরেছে, জানবেন।

আর যেসব নারীবাদী এখনো সেই ছুরিকাঘাতের যন্ত্রণা ঠিক অনুভব করেননি, তাঁদের চামড়া কতটা মোটা, এ বিষয়ে রইল একরাশ কৌতুহল।

ইতি,
জনৈকা ‘এ তো নারীবাদীই নয়’।

Adheesha Sarkar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.