গ্রাহাম স্টেইনের ঘটনা : উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র – Case of Graham Staines- Conspiracy to tribal community

সনাতন ধর্ম বারংবার আক্রমণের মুখে পড়ছে। আমরা এমন যুদ্ধের মধ্যে আছি যেখানে আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বীরা সনাতন ধর্মকে ধ্বংস করার জন্য পরোক্ষ ভাবে আক্রমণাত্মক ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। সুগভীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রকে সামনে রেখে  উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা প্রসুত ভাবে  ভারতে  সংখ্যালঘুদের প্রতি অসহিষ্ণু সমাজ ব্যাবস্থা  হিসেবে তুলে ধরার জন্য ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিডিয়া  প্রায়ই পক্ষপাতমূলক আখ্যান এবং ভুল ঘটনা তৈরি করে সারা বিশ্বের সামনে ভারতকে ছোটো করার কাজ করে চলেছে। ২০০২ সালের গোধরা হত্যাকাণ্ড হোক বা ২০০৮ সালের কান্ধমাল দাঙ্গা বা সম্প্রতি ২০১৯ সালের সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ ও তাকে কেন্দ্র করে দিল্লী দাঙ্গা সবকিছুতেই মিডিয়া একটা ভ্রান্ত ধারণা বা  কেন্দ্র সরকারকে লক্ষ্য করে ঘটনার জাল বিবরণ বিশ্বের সামনে তুলে ধরার বিশেষ চেষ্টা করে এসেছে। গ্ৰাহাম স্টেইনস এর কেসটি ও ছিল তৎকালীন প্রয়াত প্রধাণমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীজীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে লক্ষ্য করে ও সাফল্যের সঙ্গে চলা এই সরকারকে পদচ্যূত করা ও বিশ্বের সামনে কালিমালিপ্ত করার জন্য।

মনোহরপুর ওড়িশার কেওনঝার জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম। মনোহরপুর প্রাত্যহিক সংবাদপত্রের শিরোনামে দেখা গেল একটি বিশেষ খবর,  ২২ শে জানুয়ারী এবং ২৩ শে জানুয়ারির মধ্যবর্তী রাতে, একটি ওয়াগনের মধ্যে ৫৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস তার দুই ছেলে-১০ বছর বয়সী ফিলিপস এবং 7 বছর বয়সী  টিমোথি ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে দগ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে । স্টেইনস এবং তার ছেলেরা গ্রামের একটি গির্জার সামনে তাদের স্টেশন ওয়াগনে ঘুমাচ্ছিলেন,  গাড়িটি উন্মত্ত জনতার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। সংবাদপত্রে আরোও লেখা ছিল যে -” বজরং দলের নেতা দ্বারা সিং এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন , তিনিই নাকি এই আগুন লাগিয়েছেন। এই ঘটনা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের ইতিহাসে ফাটল তৈরী করেছে, যা খ্রীষ্টানদের প্রতি ভারতীয়দের বিদ্বেষ ও ধ্বংসলীলার নৃশংসতম উদাহারণ ।”

পরিচয় ও মূল বিষয়বস্তু-
গ্রাহাম স্টেন ছিলেন একজন খ্রিস্টান মিশনারি যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় কুষ্ঠ রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং এর পরে দেশে ফিরে যাননি।  তিনি বারিপদায় কুষ্ঠ রোগীদের জন্য চিকিৎসালয় খুলেছিলেন। আদিবাসী এবং কুষ্ঠরোগীদের মধ্যে তাঁর কাজ সুপরিচিত ছিল।স্টেইনস ইভানজেলিকালস ফেলোশিপ অফ ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন, যা খ্রিস্টধর্ম সম্প্রসারণে জড়িত। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ময়ূড়ভঞ্জ খ্রীষ্টান ধর্মপ্রচারকদের লক্ষ্য ছিল।ইয়ানভেলিক্যাল মিশনারি সোসাইটি অফ ময়ূরভঞ্জ (ইএমএসএম) দ্বারা ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত “ময়ূরভঞ্জের কেট অ্যালানবি” শিরোনামের একটি বইয়ে, ময়ূরভঞ্জে প্রতিষ্ঠাতা কেট অ্যালানবি কর্তৃক পরিচালিত মিশনারি কার্যক্রমের বিবরণ রয়েছে। বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে কিভাবে ইএমএসএম মিশনারিরা ইংরেজ গৃহশিক্ষক মিঃ কিডেলের মাধ্যমে তরুণ রাজপুত্রকে খ্রিস্টধর্মে ব্রেনওয়াশ করে ময়ূরভঞ্জ রাজ্যের একমাত্র তরুণ উত্তরাধিকারীকে  নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল।মিঃ স্টেইনস খুব খুশি ছিলেন যে বাইবেল এবং খ্রিস্টান বইয়ের রেকর্ড বিক্রয় হয়েছে। ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ এর  সময়ে, বিশ্ব বিখ্যাত জগন্নাথ রথ উৎসব (যা রথযাত্রা নামে পরিচিত) বাইবেল ট্র্যাক্ট বিতরণ এবং বাইবেল এবং খ্রিস্টান সাহিত্য বিক্রির জন্য লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসবে খ্রিস্টান সাহিত্য বিক্রয়/বিতরণ অবৈধ নাও হতে পারে কিন্তু অবশ্যই নৈতিক নয়।।যীশুর বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাবির গৃহীত প্রচেষ্টার বর্ণনা দিতে গিয়ে, বইটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে এটি পুরীর জগন্নাথ দেবের  রথযাত্রাকে খ্রিস্টধর্মের প্রতি হিন্দু ভক্তদের মগজ ধোলাইয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করেছিল। মিশনারিরা রথযাত্রাকে ‘বিধর্মী’, ‘মন্দ’, ‘হতাশাজনক’ এবং ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেন, তাঁরাভগবান জগন্নাথকে “বিধর্মী দেবতা” বলেছেন।১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে মিশনারীরা উত্তরাধিকারে ময়ূরভঞ্জে খ্রিস্টান প্রভাব বিস্তারের জন্য কাজ করে এবং ১৯৯৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে তারা একটি কুষ্ঠ হোম, একটি পুনর্বাসন সম্প্রদায় এবং খামার, দুটি মিশন কম্পাউন্ড এবং প্রায় ২৭ টি গীর্জা পরিচালনা করেছে।ইএমএসএম অস্ট্রেলিয়ার একটি নিবন্ধিত খ্রিস্টান দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সিডনি আর্চবিশপ গ্রাহাম স্টেইনসকে একজন অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান মিশনারি হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি ১৯৯৫ সাল থেকে ময়ূরভঞ্জ লেপ্রসি হোম পরিচালিত ইএমএসএম -এর অংশ ছিলেন। ইএমএসএম দ্য কুষ্ঠ মিশন (টিএলএম) এর সাথে যুক্ত। টিএলএম হল একটি আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান দাতব্য সংস্থা যা ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রধান কার্যক্রমগুলির মধ্যে একটি হল ‘চার্চের জন্য সমর্থন’। (বিঃ দ্রঃ- অস্ট্রেলিয়ান চ্যারিটি এবং  কমিশন উল্লেখ করেছে যে EMSM এর চ্যারিটি লাইসেন্স ২০১৯ সালে স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করা হয়েছিল।) মূলত গ্ৰাহাম স্টেইনস ছিলেন একজন মৌলবাদী খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারক যিনি নির্বিচারে কুষ্ঠ চিকিৎসার নামে আদিবাসীদের ধর্মান্তরকরণ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করে গেছেন। ( উদাহরণ- ২০১৯ সালে, পোপ ফ্রান্সিস স্বীকার করেছিলেন, যে তিনি জানতেন যে কিছু ধর্মপ্রচারক নানদের যৌন নির্যাতন করেছেন এবং তাদের যৌন দাস হিসাবেও রাখা হয়েছিল। ২০১৯সালে, মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ ছাত্রদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগে তাদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দুই অধ্যাপককে বরখাস্ত করেছিল)।১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে মকর সংক্রান্তির প্রাক্কালে স্টেইনস স্থানীয় খ্রিস্টানদের জন্য একটি বার্ষিক শিবিরের আয়োজন করেছিল। সামাজিক পরিবেশে স্থানীয়দের খ্রিস্টান ধর্ম ও  বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করার জন্য ক্যাম্পটি করা হয়েছিল ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ এবং কেওনঝার সীমান্তে । আদিবাসী মহিলা  হেমলতা কারুয়া এবং তার স্বামীকেও শিবিরে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।  দুজনেই খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয় এবং রাতের জন্য ক্যাম্পে থাকে। রাতের ঘটনা বর্ণনা করে হেমলতা বলেন, “তিনি প্রবেশ করলেন এবং আমাকে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে বললেন। আমি যখন ধ্যান করছিলাম তখন তিনি আমার শরীরে হাত রাখলেন, আমি প্রতিবাদ করলাম কিন্তু তিনি আমাকে রাজি করালেন, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে আমার উপকার হবে।  তিনি পরদিন তার স্বামীর সাথে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান। দুই দিন পর স্টেইনসকে হত্যা করা হয়।পরবর্তীতে তিনি বিচারককে বলেছিলেন যে স্টেইনস তাকে এবং তার স্বামীকে আর্থিক অসুবিধা এড়াতে ধর্মান্তরিত করতে রাজি করেছিল। তিনি বিচারককে আরও বলেন যে ঘটনার ২০ দিন পরে, স্টেইনস স্ত্রী, গ্ল্যাডিস তার কাছে এসেছিলেন এবং তার স্বামীর কর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। নিউজলেটার ম্যগাজিন “টিডিংস” অস্ট্রেলিয়ান মিশনারি থেকে প্রকাশিত । সমগ্ৰ বিশ্বের কাছে পরিচিত একটি নাম হল “টিডিংস”। প্রতি মাসে প্রকাশিত এই ম্যাগাজিনে বিভিন্ন খ্রীষ্টান মিশনারী দেশের ” মিশনারী মেল” ও প্রকাশিত হয়। মিঃ গ্ৰাহাম স্টেইনস ও মিসেস গ্ল্যাডিস স্টেইনস তাঁদের মিশনারী মেল টিডিংস এর প্রতিটি নিউজলেটারে পাঠাতেন। স্টেইনস এর মিশনারী মেল এ পাঠানো বেশ কিছু চিঠি থেকে বোঝা যায়, ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুল , শিশুদের জন্য রবিবারের স্কুল, মেয়েদের জন্য মিশন স্পন্সর হোটেল এ সংখ্যালঘু দের শিক্ষার বন্দোবস্ত করার নামে খ্রীষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত করা হতো,যার নেতৃত্ব দিতেন গ্ৰাহাম স্টেইনস।

মিশনারী মেল থেকে গ্ৰাহাম স্টেইনস এর চিঠি পাওয়া গেছে, তার কয়েকটি নীচে দেওয়া হল-

১)২৩ শে জুলাই , ১৯৯৭ এ “টিডিংস” এ পাঠানো মিশনারী মেল এ স্টেইনস লিখছেন – ” বারিপদায় সাম্প্রতিক জগন্নাথ গাড়ি উৎসবে উত্তর প্রার্থনার জন্য ঈশ্বরের প্রশংসা করুন। প্রচারকদের একটি ভাল দল গ্রামের গীর্জা থেকে এসেছিল এবং চারটি ওএম কর্মী উৎসবের দ্বিতীয় অংশে সাহায্য করেছিল। সেখানে রেকর্ড বই বিক্রি হয়েছিল, তাই প্রচুর সাহিত্য মানুষের হাতে চলে গেছে। সুরজা সিং নামের একজনের জন্য প্রার্থনা করুন যিনি একটি বাইবেল কিনেছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালে তার নিজ গ্রামে প্রথম প্রভু যীশুর সুসমাচার শুনেছিলেন। কিছুদিন ধরে তিনি ভাবছিলেন যে  প্রভু সম্পর্কে আবার পড়ার জন্য ও তাঁকে জানার জন্য একটি বাইবেল কোথায় পেতে পারেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে একমাত্র প্রভু যীশুই তাকে ভয়ঙ্কর আত্মার ভয় থেকে মুক্তি দিতে পারেন।”

২)২৫ শে জুলাই , ১৯৯৮ এ “টিডিংস” এ পাঠানো মিশনারী মেল এ স্টেইনস লিখছেন – ” সাম্প্রতিক জগন্নাথ রথযাত্রা উৎসবে  বই এবং ট্র্যাক্ট বিতরণের মাধ্যমে শাস্ত্র মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যের জন্য প্রার্থনা করুন যারা এই বাইবেল পেয়েছে তাদের জীবনে ফল হোক। প্রচণ্ড গরম থাকা সত্ত্বেও জুন মাসে রাইকা ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুলে ১২০ জন শিশু ভর্তি হয়েছিল। কুষ্ঠরোগী বাড়ির কর্মীদের জন্য প্রার্থনা করুন। কেউ কেউ খুব দেরিতে কাজ করতে আসে এবং প্রভুর সেবা করার জন্য তাদের যতটা আগ্রহ থাকা উচিত ,তা আছে বলে মনে হয় না।”

৩)১৯ শে মে, ১৯৯৮ এ “টিডিংস” এ পাঠানো মিশনারী মেল এ স্টেইনস লিখছেন -“
মনোহরপুর গির্জায় অনেক নতুন বিশ্বাসী আছেন এবং কাজ বাড়ছে। শয়তান এখন ঈশ্বরের কাজে বাধা দেওয়ার সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। গির্জার তরুণ ও বয়স্কদের মধ্যে মতভেদ আছে। যে জমিতে গির্জা তৈরি করা হয়েছে এবং পরিকল্পিত ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুল বাতিল করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি সমস্যা দেখা দেয়। গত বছর ১০০ টিরও বেশি শিশু এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল।  আমাদের বলা হয়েছে যে একটি জঙ্গি হিন্দু গোষ্ঠী খ্রিস্টানদের হিন্দু ধর্মে ফেরানোর জন্য ময়ূরভঞ্জ এবং কেওনঝার জেলায় মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা করছে। সমস্ত ’ঈশ্বরের সন্তানদের জন্য প্রজ্ঞা, অনুগ্রহ এবং অবিচলতার জন্য প্রার্থনা করুন। ”

৪) ৯ ই জুন, ১৯৯৮ এ “টিডিংস” এ পাঠানো মিশনারী মেল এ স্টেইনস লিখছেন -“এখানে অনেক গির্জায় রবিবার স্কুলগুলি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এগুলোর পক্ষে কথা বলছি এবং সাম্প্রতিক গির্জার নেতাদের সভায় আমি শুনেছি যে কেউ কেউ এই কাজ পুনরায় শুরু করেছেন। রবিবার স্কুল পরিচালনা করার জন্য সঠিক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে।মনোহরপুরে যে ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুলটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সেখানকার গির্জার সমস্যার কারণে তা বাতিল করা হয়েছিল। রাইকা ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুলে  দুইশো আটজন শিশু নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে মাত্র ১২০ জন এসেছিল।”

৫) ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ এ “টিডিংস” এ পাঠানো মিশনারী মেল এ স্টেইনস লিখছেন -” জাঙ্গল ক্যাম্প মানে চার দিন বাইবেল শিক্ষা, প্রার্থনা এবং একসাথে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের সহযোগিতা। এটি অন্যান্য গীর্জা থেকে বিশ্বাসীদের স্থানীয় খ্রিস্টানদের সাথে সাক্ষাৎ করতে এবং অভিজ্ঞতা আলোচনা করতে এবং একে অপরকে উৎসাহিত করতে সক্ষম করে।প্রতিটি ক্যাম্পে একটি বইয়ের দোকান রয়েছে, যা অনেকের জন্য খ্রিস্টান সাহিত্য কেনার একমাত্র সুযোগ। এই বছর এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি ক্যাম্পে ভালভাবে অংশগ্রহণ করা হয়েছিল এবং অন্যান্যগুলি আগামী কয়েক মাসে অনুষ্ঠিত হবে। একেক জায়গায় একেক রকম চাহিদা আছে। নেতাদের জন্য জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করুন এবং মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীল হৃদয়।”

২০১১ সালে, চার্চ চাপ প্রয়োগ করে এবং হিন্দু-বিরোধী রাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্র করে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধাণ বিচারপতি কে জোর করে  স্টেনেসের মৃত্যুর প্রধান আসামি দারা সিং -এর সাজার ক্ষেত্রে করা মূল পর্যবেক্ষণ থেকে দুটি অনুচ্ছেদ মুছে ফেলতে। একটি বিরল পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছিলেন বিচারপতি পি. সদাশিবম ও বি. এস. চৌহান  । মিডিয়া  এবং খ্রিস্টান সংগঠনগুলির প্রচুর চাপের পর চৌহান দুটি মূল অনুচ্ছেদ উল্টে দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের মূল পর্যবেক্ষণগুলি গির্জার দ্বারা পরিচালিত  ধর্মান্তকরণ কার্যক্রমের রেফারেন্স বহন করে।সুপ্রিম কোর্টের মূল বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছিল, “তদন্তে জানা গেছে যে স্টেইনস ধর্মান্তরে জড়িত ছিল এবং মিশনারিরা জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার সাথে জড়িত ছিল এমন উপকরণ রয়েছে”। ওয়াধওয়া কমিশনের রিপোর্ট এ দশম অধ্যায়ে বিচারপতি ওয়াধওয়া “অন্যান্য আশেপাশের ঘটনা” নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমটি হল ১৯৯৯ সালের ৩ রা ফেব্রুয়ারি বোন জ্যাকলিন মেরির কথিত ধর্ষণ।”Orissa nun raped in moving car,” এই ছিল সেদিন খবরের হেডলাইন। চার্চের যাজকের দেওয়া কিছু বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রেস কিছু হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেছে,” লিখেছেন বিচারপতি ওয়াধওয়া।”  এটাকে গির্জার উপর পরিকল্পিত আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। খ্রিস্টান কনভেন্ট স্কুলের শিক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকায় বলা হয়েছিল, “এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে গণ্য করবেন না,” ধর্ষণের পিছনে একটি সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।ওয়াধওয়া কমিশন এও জানিয়েছিল যে কোন প্রমাণ নেই যে  দারা সিং বজরং দলের সাথে যুক্ত ছিলেন । কিন্তু জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ওয়াধওয়া কমিশনের রিপোর্ট উপেক্ষা করে এবং দারা সিংকে বজরং দলের সদস্য হিসেবে রায় দেয়। এই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র থেকে বেশ বোঝা যায় ,যে-

১) স্টেইনস এর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ গুলিকে লুকানো হয়েছিল
২) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের জটিলতা প্রকট রূপে প্রকাশ পায়, যা একটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশে হিন্দু বিরোধী বলে প্রমাণিত।
৩)অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা এবং ধর্মান্ধতা প্রমাণের জন্য প্রমাণের অভাব সত্ত্বেও হিন্দু সংগঠনগুলিকে দোষারোপ করা হচ্ছিল ক্রমাগত এবং এখনও পর্যন্ত তা চলছে।

গ্রাহাম স্টেইনস এবং পরিবার ভারতীয় ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করছিল। গ্ৰাহাম স্টেইনস এর কার্যপদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে ওড়িশা ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন অ্যাক্ট, 1967 লঙ্ঘন করেছে।২০০৫ সালে ভারত সরকার এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে গ্ল্যাডিস স্টেইনকে পদ্মশ্রী প্রদান করে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে এই “পদ্মশ্রী” কি ধর্মান্তরকরণএবং ভারতীয় ভিসা নিয়ম ভঙ্গের জন্য? গ্রাহাম স্টেইনসের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি খ্রিস্টান প্রচারমূলক চলচ্চিত্র, ‘দ্য লিস্ট অব দিস: দ্য গ্রাহাম স্টেইনস স্টোরি’ 2019 সালে মুক্তি পায়। অনীশ ড্যানিয়েল পরিচালিত এই ছবিতে  গ্রাহাম স্টেইনস এর ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্টিফেন বাল্ডউইন। ছবিতে অভিনয় করেছেন শারমন জোশি, যিনি এর আগে থ্রি ইডিয়টস ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তবে গ্ৰাহাম স্টেইনস এর ক্ষেত্রে যে বিচার দেওয়া হয়েছিল তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ।ময়ূরভঞ্জে হিন্দুদের ভরতের শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা উচিত ছিল। কুষ্ঠরোগ একটি বিলুপ্ত হওয়া রোগ এবং ভারতে প্রতি বছর সক্রিয় রোগের সংখ্যা এবং নতুন রোগ নির্ণয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে তা উল্লেখ করার বাইরে এটি হতে পারে না। বার্ষিক নতুন কেস সনাক্তকরণের হার (ANCDR) গত 25 বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।প্রয়াত গ্রাহাম স্টেইনস এবং গ্ল্যাডিস স্টেইনসের চিঠি  পড়ার পরে, এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে তারা বেশিরভাগ ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে কথা বলে এবং শুধু একবার কুষ্ঠরোগের জন্য একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়, যদিও জঙ্গলের ক্যাম্পে উপস্থিতির সংখ্যা, শিশুদের জন্য ভ্যাকেশন বাইবেল স্কুল, গির্জায় উপস্থিত লোকের সংখ্যা, চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের কোনও পরিসংখ্যান বা এমনকি পাসিং রেফারেন্সও এই ডেসপ্যাচগুলিতে পাওয়া যায় না।

সপ্তর্ষি

রেফারেন্স -১) http://intellibriefs.blogspot.com/2005/06/who-killed-australian-missionary.html

২)Kate Allanby of Mayurbhanj.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.