ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্ত কাজের গতি বাড়ছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার। এই মামলা তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এই প্রথম এই মামলাটিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হলো।
মামলা সংক্রান্ত তদন্তের কাজে শনিবার রাজ্য কমপক্ষে ১৫ টি জায়গায় অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের একটি দল। সকালে ব্যারাকপুরে চলে যায়। আরেকটি দল যায় নদীয়ার চোপড়ায়। ১৪মে নদিয়ার চোপড়ার বিজেপি কর্মী ধর্ম মন্ডলকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এই মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করা হয়। সেখানে গিয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এরপর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।
কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা জানতেই এই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হৃদয়পুর গ্রাম থেকে তৃণমূল কর্মী পরিচিত বিজয় ঘোষ ও অসীমা ঘোষ নামে দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন গোয়েন্দারা। দীর্ঘক্ষন তাদের জেরা করা হয়। তারপর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। খুনের অভিযোগে এফআইআরে নাম রয়েছে এদের।
এরপর শানগরের বিজেপির বুথ সভাপতির মা নিহত শোভারানী মন্ডলের বাড়িতে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। ভোটের পর খুন হতে হয় শোভারানী মন্ডলকে। বিজেপির দুই নেতা তথা তার দুই ছেলেকে মারধর থেকে মা শোভারানী বাঁচাতে গেলে তাঁকে পিটিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। ফলে এই ঘটনাগুলি একেবারে ঘটনাস্থলে গিয়ে নতুন করে জানার চেষ্টা করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। রেকর্ড করা হয়েছে বয়ান। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় শোভারানী মন্ডলের বাড়িতে সিবিআই আধিকারিকরা ছিলেন। সেই সময় গোটা এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছিল। প্রায় ঘন্টাখানেক তাদের বাড়িতে ছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আসা ফরেনসিক দলের সদস্যরা শোভা রাণী দেবীকে যেখানে মারধর করা হয় সেই জায়গাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। তারা নমুনা সংগ্রহ করেন এবং বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি সংগ্রহ করেন। পরে, পরিবারের তিন সদস্যকে সিবিআই আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স নিয়ে যায়।
সিবিআই কাছে এখনো পর্যন্ত মোট সাতটি মামলার নথি এসেছে বলে খবর। ১৭টি জেলা থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের কাছে এই নথিগুলি পাঠানো হয়েছে। ভোটের পর কতগুলি ঘটনা ঘটেছে সেই তথ্য রয়েছে ই-নথিতে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে এখনো পর্যন্ত সিবিআই ১১টি এফআইআর দায়ের করেছে। মামলার তদন্ত চলছে, বেশিরভাগ ঘটনার চার্জশিটও তৈরি হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে মামলা তদন্তের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে সিবিআই তদন্তকারীরা ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, পূর্বাঞ্চলে ও কলকাতায় চারটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করেছে সিবিআই। শুধু নিজামপ্লেসে নয় সিবিআই চারটি জায়গায় তাদের অফিস খুলেছে। একটি ক্যাম্প হয়েছে দুর্গাপুরে। সেখান থেকে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদনীপুর, বীরভূম সহ পশ্চিম জেলার বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করবে সিবিআই। আর উত্তরবঙ্গের ক্যাম্পটি কোচবিহারে। বাকি দুটি ক্যাম্প কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় সেখান থেকে চলবে তদন্ত কাজ।