বাঙাল ঘটি লড়াই বন্ধ করে একটু রোগটা নির্ণয় করা উচিৎ আমাদের

বাঙালরা সবকিছু হারিয়েও কেন সেক্যুলার? এই প্রশ্ন তুলে অনেকেই আক্রমণ করেন l কিন্তু ওই যুগে বাঙালদের কি অবস্থা ছিল তা একবার সবার জানা উচিৎ l ওই যুগে আমার ঠাকুরদা বা জ্যাঠামশাইদের কাছে খবরের কাগজ কিনে পড়া বিলাসিতা ছিল l সম্ভবতঃ আমার বাবা এবং সেজ জ্যাঠামশাই চাকরি পেলে, স্বাধীনতার 15 বছর পর বাড়িতে যুগান্তর আবার আসে l

শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পর হিন্দুমহাসভা এবং জনসঙ্ঘ দুর্বল হয়ে পড়ে l প্রসঙ্গত, ত্রিশের দশকে ভারতের বিভিন্ন জেলে ব্রিটিশ লেবার পার্টির রামসে ম্যাকডোনাল্ড প্রধানমন্ত্রী হলে, তাঁর প্রত্যক্ষ মদতে অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের থেকে আরএসপির জন্ম হয় l শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পর হিন্দু মহাসভার বাকিরা সদস্যরাও আরএসপিতে চলে যান l চট্টগ্রাম পরিষদ, সিলেট পরিষদ ইত্যাদি সংগঠন সেই সময়ে বাঙালদের সংগঠন ছিল l আমাদের বরিশালে কাচাবালিয়া(গুহদের গ্রাম ), নাথুল্লাবাদ(বসুরায়), গাভা(ঘোষদস্তিদার ), গৈলা (দাশগুপ্ত, সেনগুপ্ত ), বানারিপাড়া (গুহঠাকুরতা ), বাটাজোর (দত্ত ), বাসন্দা (সেন, যাদের কোম্পানি ছিল সেন ৱ্যালে / অপর্ণা সেন )ইত্যাদি মহকুমা/গ্রামের আলাদা সম্মিলনী ছিল l কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশ ভেঙে গেল l ব্যতিক্রম শুধু বাসন্দা বা গৈলা l কারণ জিন এবং পারিবারিক একতার সংস্কার l ঢাকা, ফরিদপুরসহ সব জায়গায় একই জিনিস ঘটে l কলকাতার আদি ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে এঁদের যোগসূত্র গঠন হয় l দমদম, যাদবপুরের বাঙাল সমাজের দর্শন, মনন নিয়ন্ত্রণ করেন তরুণ সেনগুপ্ত, নিরঞ্জন সেনগুপ্ত, মিহির সেনগুপ্তরা l বামফ্রন্ট সরকারে 34 বছরের অধিকাংশ সময়ে অর্থ, বিদ্যুৎ, শিল্প দপ্তরের মন্ত্রিত্ব, সরাষ্ট্র সচিব, মুখ্যসচিব, পার্টির জেলা সভাপতি, রাজ্য সভাপতি, অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ অলংকার করে এরা l সাউথ পয়েন্ট ভেঙে যে বিভিন্ন স্কুল দক্ষিণ কলকাতায় তৈরি হয়, তার পিছনেও এরাই l অধিকাংশ জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি তথা শিল্প সিন্ডিকেটের মাথায় বসেন এরা l টালিগঞ্জে রাজত্ব করে এরা চার দশক…..একের পর এক সুপারফ্লপ ছবি তৈরির পরেও l

চার দশক সর্ববিষয়ে মাথা খেয়ে আজ এরা নিজেদের দলে নিয়ে এসেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ধ্রুব বন্দোপাধ্যায় বা সৃজিত মুখোপাধ্যায়দের l

ফলে, একা নিমতার পুরুত মশাইকে লক্ষ্য করে বাঙালদের গালাগালি দিলে আমরা কিন্তু রোগের মূল কারণকে এড়িয়ে যাবো l রোগ কিন্তু অনেক গভীরে l অনেক পুরানো l

আমাদের শিক্ষাদপ্তরে এখনো এঁদের রাজত্ব l শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়ছে l আর নতুন যুগের শিক্ষিত যুবকযুবতীরা বাধ্য হচ্ছেন ‘দুয়ারে নারায়ণ’ এর মারীচিকার পিছনে l অধ্যাপক ‘দাশ’ ( দাস নয় ) উপাচার্য হিসেবে জ্যোতি বাবুর মুখ্যমন্ত্রীর সময়কালের রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন l বাঙাল ঘটি লড়াই বন্ধ করে একটু রোগটা নির্ণয় করা উচিৎ আমাদের l কেন বাঙালরা সেক্যুলার হল? কেন বহুত্ববাদী নয়? এই বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন l কিন্তু কে করবে? শিক্ষা দপ্তরে এখনো তো তাঁদেরই রাজত্ব যারা 99.99% বাঙালীকে জানতে দেননি যে 1937 থেকে 1947, বাংলার তিন প্রধানমন্ত্রী ছিল l.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.